আপনার সেরা আবিষ্কার কোনটি

প্রতীকী ছবি

কোন বিখ্যাত বিজ্ঞানীকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনার জীবনের শ্রেষ্ট আবিষ্কার কোনটি? তাহলে বোধহয় বিজ্ঞানীর পক্ষে উত্তর দেয়া একটু মুশকিল। তবে এ প্রসঙ্গে সবচেয়ে চমৎকার উত্তরটি দিয়েছিলেন বিজ্ঞানী স্যার হাম ফ্রে ডেভি। কী উত্তর দিয়েছিলেন, তা শোনার আগে আরেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী সম্পর্কে একটু জানতে হবে।

মাইকেল ফ্যারাডে নামে এক তরুণ বই বাঁধাইয়ের দোকানে বই বাঁধাই করত। যে বইগুলো বাঁধাই করত সেগুলো আবার সে মনোযোগ দিয়ে পড়ত। তো একদিন এক বিদগ্ধ ক্রেতা দেখতে পেলেন এক তরুণ খুব আগ্রহ নিয়ে একটি কঠিন বিদ্যুৎবিষয়ক বই পড়ছে। দৃশ্যটি দেখে বিদগ্ধ ক্রেতা (যিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের রয়‍্যাল সোসাইটির একজন সদস্য) মুগ্ধ হয়ে তাকে চারটি টিকিট উপহার দেন। সে সময় খ্যাতনামা বিজ্ঞানী স্যার হাম ফ্রে ডেভির বক্তৃতা চলছিল কাছাকাছি কোথাও। তারই চারটি টিকিট।

তরুণ বুক বাইন্ডার মাইকেল ফ্যারাডে সেই টিকিট দিয়ে পর পর চারদিন স্যার হাম ফ্রে ডেভির বক্তব্য শুনেন এবং বক্তৃতাগুলো নিজে বিশ্লেষণ করে নোট করে, ছবি একেঁ, সুন্দর করে পাঠিয়ে দেন ডেভির কাছে, সাথে একটা ছোট্ট চিরকুটে ইচ্ছে প্রকাশ করেন, তার সহকারী হিসেবে কাজ করার।

ডেভি তার কঠিন বক্তৃতার এত সহজ বিশ্লেষণ পড়ে মুগ্ধ হন এবং মাইকেল ফ্যারাডেকে তাঁর সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর আর তরুণ বুক বাইন্ডার মাইকেল ফ্যারাডেকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। স্যার হাম ফ্রে ডেভির সাহায্য করার ফাঁকে ফাঁকে ফ্যারাডে স্বাধীনভাবে গবেষণা শুরু করেন। তড়িৎ-রসায়ন, ধাতুবিদ্যা, তড়িৎবিজ্ঞান প্রভৃতি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা করে তিনি বিজ্ঞানী হিসেবে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। এখন পর্যন্ত তাঁকে বলা হয় 'the great experimental scientist of all time...! মরিচাবিহীন ইস্পাত অরিষ্কারের তিনি জনক। তড়িৎচুম্বক আবেশের নিয়মের ওপর ভিত্তি করে শিল্প ক্ষেত্রে তড়িৎ যুগের সূচনা তার জীবনের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার। পরবর্তীকালে মাইকেল ফ্যারাডে একজন সামান্য বুক বাইন্ডার থেকে র‍্যায়াল সোসাইটির অসামান্য অধিকর্তা হয়ে উঠেন।

এবার মূল ঘটনায় ফিরে আসি, সেই শুরুর প্রশ্ন বিজ্ঞানী হামফ্রে ডেভিকে প্রশ্ন করা হলো-আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার কি?

বৃদ্ধ ডেভি স্মিত হাসলেন, তারপর স্পষ্ট উচ্চারণে বললেন, 'মাইকেল ফ্যারাডে।' একই প্রশ্ন করা হয়েছিল টমাস আলভা এডিসনকে। তবে উত্তরটা তিনি দিয়েছিলেন একটু অন্যভাবে। তখন তাঁর বিখ্যাত গ্রামোফোন যন্ত্র সদ্য আবিষ্কৃত হয়েছে। সবাই বলছে, এটাই তাঁর সেরা আবিষ্কার।

স্যার এটাই কি আপনার সেরা আবিষ্কার?

সাংবাদিক সম্মেলনে আসা সাংবাদিকরা জানতে চায়।

এই সময় শুরু থেকে ঘ্যানর ঘ্যানর করতে থাকা এক মহিলা চেঁচিয়ে উঠল। 'এটা কি করে সেরা আবিষ্কার হয়, সব সময় কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করেই চলেছে...।'

টমাস আলভা এডিসন তখন মুচকি হেসে বললেন,

ম্যাডাম আপনি একটু ভুল করলেন।

কি ভুল করলাম?

সবসময় কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করে যে যন্ত্র, সেটা আবিষ্কার করেছেন ঈশ্বর। আর আমি যেটা আবিষ্কার করেছি, সেটা ইচ্ছে করলেই বন্ধ করা যায়। বলে টুক করে গ্রামোফোন বন্ধ করে দিলেন। ব্যাস দুদিক থেকেই ঘ্যানর ঘ্যানর বন্ধ।

আরেক পরিবেশবাদী বিজ্ঞানী একই প্রশ্ন করা হয়েছিল (তার নামটা মনে পড়ছে না) আইরিশ এই বিজ্ঞানীকে যখন বলা হলো-আপনার জীবনের সেরা আবিষ্কার কোনটি?

তিনি বললেন 'সেরা আবিষ্কার কোনটি বলতে পারব না, তবে সবচেয়ে বাজে আবিষ্কারটি বলতে পারি...'

তাহলে সেটাই বলুন।

ওই যে ওই বস্তুটি টি...

সাংবাদিকরা তার আঙুল বরাবর তাকিয়ে দেখে তার টেবিলের নিচে ছোট্ট একটা বিড়ালের বাচ্চা চুক চুক করে দুধ খাচ্ছে। এএ কম করে হলেছে আমার ডজনখানেক গবেষণাপত্র খামছে-কামড়ে পোষ্ট করেছে' বলে সস্নেহে তাকে কোলে তুলে নেন বৃদ্ধ বিজ্ঞানী। 'একে আমি আবিষ্কার করেছি একটা আবর্জনার স্তূপ থেকে।''

* সাংবাদিকরা তাকিয়ে দেখে বিখ্যাত বৃদ্ধ বিজ্ঞানীর কোলে বসে সেই মার্জার শিশু তখন চোখ বন্ধ করে ঘর ঘর আওয়াজ করতে শুরু করেছে।

কে জানে সে হয়তো ভাবছে তার বৃদ্ধ মালিক তার প্রশংসা করতেই শুরু করেছেন।