ইউরেকা...ইউরেকা...!!

আর্কিডিমিডিসের সেই বিখ্যাত গল্প তো আমাদের সবার জানা। সেই যে তিনি নগ্ন হয়ে ছুটছেন রাজ দরবারের দিকে, আর চেঁচাচ্ছেন ‘ইউরেকা... ইউরেকা...’ আসলে গল্পটি কিন্তু তা নয়।

সিসিলিতে সেই বিখ্যাত দিনটিতে তিনি আসলে রাজার সোনার মুকুটটি হাতে নিয়ে চিন্তিত মুখে পায়চারী করছিলেন নিজের বাসায়। কিছুতেই সমাধানটা তাঁর মাথায় আসছে না। কী করে বের করবেন এতে খাদ আছে কি না। তখন স্ত্রী হুঙ্কার দিলেন (স্ত্রীরা যেমনটা দেন আরকি!), ‘ঝাঁটা মারি ওই রাজার মুকুটে, জলদি স্নান ঘরে ঢোকো বলছি...’ বলে একরকম ধাক্কা দিয়ে তাঁকে পানি ভরা চৌবাচ্চায় ফেললেন। ব্যস, সাথে সাথে তাঁর মাথায় বুদ্ধির বাল্ব জ্বলে উঠল। তিনি চৌবাচ্চা থেকে লাফিয়ে উঠলেন এবং চেঁচিয়ে উঠলেন ‘ইউরেকা... ইউরেকা...’ কিন্তু না, তিনি আসলে ইউরেকা বলে চেঁচিয়ে ওঠেননি। তিনি চেঁচিয়ে তাঁর স্ত্রীকে ডেকেছিলেন। তাঁর স্ত্রী নাম ছিল ‘য়ুরেকা’।

আসলে বিখ্যাত ব্যক্তিদের গল্প আমরা যেভাবে জানি, আসল ঘটনা সেরকম নয়। যেমন নিউটনের সেই আপেল পতনের গল্পটি। বিষয়টি তিনি ২০ বছর আগে আবিষ্কার করে বসে আছেন, আর আপেলের গল্প ফাঁদলেন ২০ বছর পর। অনেকটা বিরক্ত হয়েই। বারবার তাঁর অনুরাগীদের একই প্রশ্ন, ‘কীভাবে আপনি মহাকর্ষ বলের সূত্রটি পেলেন?’

শেষমেশ বিরক্ত হয়ে নিউটন বলতে শুরু করলেন, ‘আপেল পড়েছিল মাথায়, তাতেই...’

আসলে বিজ্ঞানীদের নিয়ে গল্পের শেষ নেই। বেশির ভাগই বানোয়াট গল্প, তবে তাঁদের আবিষ্কারের সবই সত্য। এই যেমন ধরা যাক টমাস আলভা এডিসনের গল্পটা... তিনি বৈদ্যুতিক বাল্ব আবিষ্কার করে তখন জগদ্বিখ্যাত। একদিন এক বাচ্চা তাঁকে ধরল—

‘তুমি কীভাবে ওই আলোর বাল্বটা আবিষ্কার করলে?’

‘ভেবে ভেবে বের করেছি।’

‘কিন্তু সেই বাল্ব কীভাবে হলো?’ বাচ্চা ফের জানতে চায়।

‘আসলে বাল্বটা নিয়ে ভাবছিলাম হঠাৎ...’

‘হঠাৎ?’ বাচ্চা নাছোড়বান্দা যেন।

‘হঠাৎ মাথার মধ্যে আসলে ওই বাল্বটাই জ্বলে উঠল। ওটাই নামিয়ে আনলাম।’

আসলে বিজ্ঞানীদের নিয়ে গল্পের শেষ নেই। বেশির ভাগই বানোয়াট গল্প, তবে তাঁদের আবিষ্কারের সবই সত্য।

বিষয়টি মজার। কার্টুনে আইডিয়া আসার প্রসঙ্গ আসলেই পৃথিবীর তাবৎ কার্টুনিস্টরা কার্টুন চরিত্রের মাথার ওপর ভাবনার একটা বাল্ব আঁকেন। এডিসনের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল। আর সেই বাল্বটাই তিনি বাস্তবে নামিয়ে আনেন। অবশ্য এডিসনের এই গল্পটিও যে বানোয়াটা নয়, তাই বা কে জানে। আর বিখ্যাত লোকদের নিয়ে গল্প বানাতে কার না ভালো লাগে! অবশেষে একটি গল্প, এটি অবশ্য বানানো নয় মোটেই।

বিজ্ঞানীর নাম থমাস হাক্সলি। তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘সব জানার দরকার নেই, একটি নির্দিষ্ট বিষয় ভালো জানলেই হয়।’

তাঁর এই মুদ্রা দোষের কথা সবাই জানত। তিনি একদিন জরুরি একটি বিজ্ঞান সম্মেলনে যাচ্ছেন। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। একটা ট্যাক্সি ক্যাব ডেকে বললেন, ‘জলদি চল...যত দ্রুত সম্ভব।’ ক্যাব ড্রাইভার বিখ্যাত বিজ্ঞানীকে চিনত। সে আর দেরি করল না। ঝড়ের বেগে গাড়ি ছোটাল। গাড়ি ছুটছে, হঠাৎ হাক্সলির মনে হলো, তিনি কোথায় যাবেন, তা তো ড্রাইভারকে বলেননি। তিনি বললেন—

কার্টুনে আইডিয়া আসার প্রসঙ্গ আসলেই পৃথিবীর তাবৎ কার্টুনিস্টরা কার্টুন চরিত্রের মাথার ওপর ভাবনার একটা বাল্ব আঁকেন। এডিসনের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিল।

‘এ্যাই তুমি কোথায় যাবে, তা জানো?’

‘সব জানার দরকার নেই, একটি নির্দিষ্ট বিষয় ভালো জানলেই হলো...’

‘নির্দিষ্ট বিষয়টা হলো, আমাদের দ্রুত যেতে হবে।’ বলে ট্যাক্সি ড্রাইভার তার গাড়ির গতি আরো বাড়িয়ে দিল।

আরেকজন দার্শনিক ছিলেন, তিনি বলতেন ‘কম জানো, কিন্তু গভীরভাবে জানো...’

‘সেটা কী করে সম্ভব?’

‘এই যে গভীরভাবে কম জানা?’

‘হ্যাঁ।’

‘সম্ভব।’

‘একটা উদাহরণ দিতে পারেন এই রকম একজন বিজ্ঞানীর?’

‘পারি।’

‘দিন।’

‘জন ডালটন।’

‘কীভাবে?’

‘পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা “অ্যাটম”- কে চিনিয়েছেন তিনিই প্রথম...! কত ক্ষুদ্র “জানা”, কিন্তু গভীরতাটা?!’