বছর প্রায় শেষ, ২০২৩ সাল বিদায় জানানোর সময় হয়ে গেছে বলা যায়। একে একে সব স্কুলে ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে বা হচ্ছে। ভার্সিটিতে পড়া এক বড় ভাইয়ের মনে হলো, ছোট ভাইটা ঠিকমতো পরীক্ষা দিচ্ছে তো? খোঁজখবর নেওয়া দরকার। আর ভাবতে না ভাবতেই ছোট ভাই পরীক্ষা দিয়ে ফিরল। বড় ভাই আটকাল।
—কিরে, পরীক্ষা দিয়ে এলি?
—হুঁ।
—হুঁ কিরে, বল জি।
—জি।
—আজ কী পরীক্ষা ছিল?
—বায়োলজি।
—কেমন হয়েছে?
—অ্যাঁ, গতকালকেরটার মতোই।
—গতকাল কী পরীক্ষা ছিল?
—কেমিস্ট্রি।
—কেমিস্ট্রি কেমন হয়েছে?
—সেটা বুঝতে হলে আগামী পরশুর পরীক্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
—মানে কী!
—পরশু দিনের পরীক্ষাটা দিয়ে হিসাব–নিকাশ করে বুঝতে হবে কোনটা কেমন হয়েছে…বোঝো তো, বিজ্ঞানের ব্যাপারস্যাপার, হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। বিশ্লেষণ–পর্যবেক্ষণ জরুরি।
—তুই এসব কী বলছিস, কিছুই তো বুঝতে পারছি না...তা পরশু দিন কী পরীক্ষা?
—ফিজিকস।
বড় ভাই রিস্ক নিল না। পরশু দিন ছোট ভাই সত্যিই ফিজিকস পরীক্ষা দিতে যায় কি না, সেটা বোঝার জন্য পরীক্ষার হলে গিয়ে ঘাপটি মারল।
ছোট ভাইয়ের কথাবার্তা শুনে বড় ভাই মোটামুটি হতম্ভিতমূঢ় (হতভম্ব+স্তম্ভিত+বিমূঢ়)! তার সন্দেহ হলো, ছোট ভাই আদৌ পরীক্ষা দিচ্ছে তো? নাকি তাকে ভুংভাং বোঝাচ্ছে। আজকালকার টিকটক জেনারেশন যা উল্টাপাল্টা শুরু করেছে চারদিকে।
বড় ভাই রিস্ক নিল না। পরশু দিন ছোট ভাই সত্যিই ফিজিকস পরীক্ষা দিতে যায় কি না, সেটা বোঝার জন্য পরীক্ষার হলে গিয়ে ঘাপটি মারল। একটু পর ছোট ভাই এসে হাজির। বড় ভাইকে সে দেখে ফেলল।
—ভাইয়া, তুমি এখানে?
—তুই সত্যিই পরীক্ষা দিচ্ছিস কি না, বুঝতে এসেছি। তোর কথাবার্তা আমার পছন্দ হচ্ছিল না।
—না ভাইয়া। বিজ্ঞানের যেকোনো পরীক্ষার ব্যাপারে আমি সব সময় সিরিয়াস। এই দেখো না, আজ ফিজিকস পরীক্ষার সব কটি চ্যাপ্টার ভালোমতো পড়ে এসেছি। আলোর চ্যাপ্টার থেকে বেশি প্রশ্ন আসতে পারে। এমনভাবে পড়েছি, এই চ্যাপ্টার ধরে নাও আমার প্রায় মুখস্থ। তারপর দোলকের চ্যাপ্টার থেকে আসবে শর্ট কোশ্চেন। সেটাও ভালোমতো পড়ে এসেছি। তারপর ধরো, গতি জড়তা থেকে একটা ব্রড কোশ্চেন আসবেই আসবে, ওটাও ভালোমতো পড়ে এসেছি...ওটা বলা যায় মুখস্থ না, আমার ঠোঁটস্থ। কিন্তু ভাইয়া, তারপরও মনে হচ্ছে, কী যেন পড়ে আসিনি...কী যেন পড়ে আসিনি।
বড় ভাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘ইয়ে…তুই শার্ট পরে আসিসনি...!’
লেখক: কার্টুনিস্ট; সম্পাদক, উন্মাদ