শূন্য শূন্যস্থান নিউটন

আমার বন্ধু ভীষণ বিজ্ঞানপ্রেমী। তার কেজিপড়ুয়া ছেলেকে ঘুম পাড়ায় বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারের গল্প শুনিয়ে। একবার শোনাল শূন্য আবিষ্কারের গল্প। শূন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাত্পর্যপূর্ণ। শূন্যতে সংখ্যামান বেড়ে যায়। এটা এক গর্বের আবিষ্কার। আরও গর্বের হলো এটা আবিষ্কার করেছে ভারতীয়রা। কিছুদিন পর ছেলে স্কুল থেকে ফিরে বাবাকে বলছে: বাবা জানো, আজ আমি সেই গর্বের জিনিস পেয়েছি।

হ্যাঁ বাবা, বলো তুমি কী পেয়েছ?

বাবা, আমি অঙ্কে শূন্য পেয়েছি!

বন্ধুর এমন গল্প শোনার পর আমার নিজেরও কয়েক দশক আগের ঘটনা নতুন করে মনে পড়ে গেল। তখন তো মোবাইল ফোনে টাকা ট্রান্সফারের এত সুবিধা তৈরি হয়নি। ইউনিভার্সিটি হলে কয়েক বন্ধুর হইহুল্লোড় জমে উঠেছে। কারণ অশিক্ষিত বাবাকে ধোঁকা দিয়ে চিঠি লিখে টাকা পাওয়া যায় কি না, তা-ই পরীক্ষা করা।

‘বাবা, টাকা চাই। ওয়াটার টেবিল কিনতে হবে।’ এই রকম।

হাতেনাতে ফল ফলেছে। মানি অর্ডারে ঠিকই টাকা চলে এসেছে। এটা আমার রুমমেট ভূগোলের ছাত্রের কাণ্ড। মাটির নিচে পানির স্তরসম্পর্কিত বিষয় ওয়াটার টেবিল। ওর বাবা মনে করেছেন, ছেলের পড়ালেখার টেবিল দরকার। ছেলের লেখাপড়ার প্রয়োজনে যা কিছু দরকার সবই দিতে হবে। তাই মানি অর্ডারে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন।

বেশ নামকরা এক স্কুলে চাকরি করে একসময়ের ক্লাসমেট বন্ধু। অনেক দিন দেখা হয় না, ঢাকায়ও সব সময় আসা হয় না। একবার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। বিজ্ঞান ক্লাসে আমার বন্ধু হোমওয়ার্ক নিয়ে কথা বলছিলেন।

আমার বন্ধু: তোকে ব্যাকটেরিয়ার ছবি আঁকতে বলেছিলাম। তুই তো দিলি সাদা কাগজ। তা ব্যাপারখানা কী?

ছাত্র: স্যার, আমি তো কাগজে ব্যাকটেরিয়ার ছবিই এঁকেছি। আপনি তো ব্যাকটেরিয়া খালি চোখে দেখতে পারবেন না।

আমার বন্ধুর চোখ চড়কগাছ!

তিনি নিজেকে সামলে নেওয়ার জন্য আবিষ্কারের গল্প জুড়ে দিলেন। নিউটন আপেলগাছের নিচে বসে ছিলেন। ওপর থেকে আপেল পড়ল মাটিতে। আপেল পড়া দেখে নিউটনের মাথায় এল মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কথা।

সবশেষে বন্ধু বললেন, ‘নিউটনের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব থেকে আমরা কী শিখলাম?’

জবাবে এক ছাত্র বলল, ‘স্যার, ক্লাসে বসে না থেকে গাছতলায় বসে থাকা উচিত!’ অগত্যা আমার বন্ধু সেদিনের পড়া মুলতবি রেখে আমার দিকে মনোযোগী হয়ে উঠলেন।

এখন সব পড়া তো আইটি দিয়ে। কাজেই আইটি শেখা কেমন চলছে, সেটাও ঘুরে দেখতে গেলাম। আইটি ক্লাসে টিচার জিজ্ঞেস করছেন, ‘তোমরা বইপত্র পড়ো তো?’

শিক্ষার্থী: হ্যাঁ পড়ি, তবে কোনটার কথা জানতে চাইছেন, স্যার? টেক্সট বুক, না ফেসবুক?

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা