আগন্তুক

Abdul Gaffar

রাসেল বিকেলের দিকে একটু হাঁটতে বের হয়েছে। জঙ্গলের কাছে। জঙ্গল একেবারে সুনসান। একটা পাখি পর্যন্ত নেই। গাছের পাতাগুলোও কেমন যেন। বিবর্ণ হলুদ। অবাক হয় রাসেল।

আনমনে হেঁটে চলেছে রাসেল। হঠাৎ সামনে উদয় হয় এক প্রকাণ্ড গর্ত। জঙ্গলের এই দিকটাতে কোনো গর্ত ছিল না। হঠাৎ গর্ত কোত্থেকে এল! ঘাবড়ে যায় রাসেল। হঠাৎ বাতাসে কিসের যেন শব্দ ভেসে আসে। ঝিঁঝি পোকার ডাকের মতো। ধীরে ধীরে তীব্র হয় সেই শব্দ।

কৌতূহল চরমে উঠে যায় রাসেলের। ঝিঁঝি পোকার ডাক অনুসরণ করে এগিয়ে যায়। শব্দটা ক্রমেই বাড়ছে। হঠাৎ কিছু একটা দেখে সে থমকে দাঁড়ায়। একজন মানুষ। বসে আছে মাটিতে। কেমন অসহায় ভাব।

মানুষটা অদ্ভুত। তার মুখটা একদম শিশুদের মতো। মুখভর্তি ধবধবে সাদা দাড়ি। অবাক ব্যাপার, মুখে তার কোনো মুখছিদ্র নেই এবং তার হাত তিনটা। রাসেলকে দেখে লোকটার নাক সামান্য নড়ে উঠল। উচ্চারণে বেরিয়ে এল সেখান থেকে, ‘আমাকে একটু কপার দিতে পারো?’

রাসেল কিছু বুঝল না, কপার কী করবে লোকটা? হতভম্বের মতো তাকিয়ে রইল লোকটার দিকে। আবার লোকটি নাক নড়ে উঠল, ‘তোমার হাতঘড়িটা দেবে? আমি একটু কপার নেব।’

রাসেল এবার সত্যিই খুব ভয় পেল। রোবটের মতো তার ঘড়িটা খুলে তুলে দিল লোকটার হাতে। লোকটা তার পকেট থেকে হাতুড়ির মতো ছোট একটা জিনিস বের করল এবং সেটা দিয়ে ভেঙে ফেলল ঘড়িটা, রাসেল বাধা দেওয়ার আগেই।

লোকটা অন্য পকেট থেকে বের করল নীল রঙের তরল ভর্তি একটা বোতল। ভাঙা ঘড়িটা ফেলে দিল ওই তরলে। ঘড়িটা গলে মিশে গেল তরলের সঙ্গে। লোকটা ঘড়ি মেশানো সেই তরল নাক দিয়ে ঢুকিয়ে দিল শরীরের ভেতর।

লোকট শরীরে শক্তি ফিরে পেল। ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। রাসেল অবাক হয়ে দেখল শুধু হাত নয়, লোকটার পা-ও তিনটা। হঠাৎ রাসেলের মনে হলো তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে তৈরি হলো বড় একটা খাঁজ। সেটা ধীরে ধীরে প্রসারিত হচ্ছে। দ্রুতই খাঁজটি একটা বড় গর্তে রূপ নেয়। এবার সে দেখল গর্ত থেকে চাকতির মতো কিছু একটা ওপরে উঠে আসছে। এবার লোকটার দিকে তাকাতেই সে অবাক হয়ে লক্ষ করল, কোনো এক অজানা শক্তি লোকটিকে চাকতির মধ্যে টেনে নিল। রাসেল আবার সেই ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনতে পেল। এটি ক্রমশ বাড়তে থাকল। সঙ্গে তীব্র আলোর ঝলকানি। রাসেল আর সহ্য করতে না পেরে চোখ বন্ধ করে কান চেপে ধরে বসে পড়ল। এভাবে কিছুটা সময় কাটল। খানিক্ষণ পর রাসেল উঠে দাঁড়াল। লোকটি বা চাকতি কিছুই সে দেখতে পেল না। শুধু দেখল তার ঘড়িটা মাটিতে পড়ে আছে।

ফকিরহাট, বাগেরহাট

*লেখাটি ২০১৭ সালে বিজ্ঞানচিন্তার ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত