প্রজেক্ট ৪৮

কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো থেকে চিঠিটা এসেছে জেনারেল সুমিতরোর কাছে। হলোগ্রাফিক স্ক্রিনটা একটু কাঁপছে। নিশ্চয়ই কাছেই কোথাও জোরালো কোনো রেডিয়েশন ছড়ানো যন্ত্র চলছে। সরকারি দপ্তরগুলোতে এখনো জোরালো রেডিয়েশনের যন্ত্র রয়ে গেছে। কিন্তু সেই কবে আইন পাস হয়েছে নির্দিষ্ট দূরত্ব পার হয়ে যাওয়া রেডিয়েশন ছড়ানো যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। সরকারি ফাইল জটিলতায় পড়ে এখনো কিছু কিছু যন্ত্র রয়ে গেছে। যা–ই হোক, স্ক্রিনের একটা নির্দিষ্ট কোনায় আঙুল দিয়ে একটু ছুঁয়ে দিতেই স্ক্রিনের কাঁপাটা থেমে গেল। চিঠিটা আরেকবার পড়ে জেনারেল।

বিষয়টা মানুষের ক্রিয়েটিভিটির বর্তমান অবক্ষয় নিয়ে। মানুষের এখন নতুন কিছু আবিষ্কারের হার প্রায় শূন্যের কোঠায়। পুরোনো আবিষ্কারের নতুন ভার্সন ছাড়া তেমন কোনো কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না বৈজ্ঞানিকদের কাছ থেকে। মৌলিক কিছু আবিষ্কার হয়ই না বলতে গেলে। আজ থেকে প্রায় আট বছর আগে বিষয়টা নিয়ে সরকারের ওপর মহলের টনক নড়ে। তারা এটার কারণ খুঁজতে চালু করে ‘রিভাইভ ক্রিয়েটিভিটি’ নামে একটা প্রজেক্ট। প্রথমটার নাম ছিল ‘রিভাইভ ক্রিয়েটিভিটি প্রজেক্ট ১’। যে দলটা গঠন করা হয়, তাতে আছে একজন জীববিজ্ঞানী, একজন মনোবিজ্ঞানী, একজন গণিতবিদ, একজন ইতিহাসবিদ। প্রথম সভাটা হওয়ার পরই ইতিহাসবিদ জানাল, দলে একজন দার্শনিক থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বহু খুঁজেও দর্শনের পণ্ডিত পাওয়া গেল না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ৫৫ বছর ধরে দর্শনে কেউ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেনি। অর্থনৈতিক বিষয়টা এত বেশি সবকিছুকে আচ্ছন্ন করেছে যে সবাই শিক্ষা গ্রহণে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ছাড়া পড়তেই চায় না। অনেক খুঁজে একজনকে অবশ্য পাওয়া গেল। ৩৫ বছর আগে শখের বসে দর্শনে ছোট একটা কোর্স করেছিল সে। অনেক কষ্টে রাজি করানো গেল তাকে এই দলে থাকার জন্য। যদিও রাহি, মানে দর্শনের ভদ্রলোক বারবার বলছিল, ‘আমার কিছুই মনে নেই’। তারপরও তাকে কিছু তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হলো দর্শন বিষয়ে আর্কাইভ থেকে খুঁজে। কাজ শুরু হওয়ার আগে যদি সে ঝালিয়ে নিয়ে কিছু সমাধান দিতে পারে।

কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান অনুষদ এক মাস ধরে পাঁচজনের বৈজ্ঞানিক দলের কাছ থেকে কোনোরকম তথ্য পাচ্ছে না। এমনকি তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছে না। যদিও যেকোনো বড় মাপের বৈজ্ঞানিক নিজের মতো গবেষণা করার জন্য যেকোনো রকম যোগাযোগ কিছুদিন বন্ধ করে রাখতে পারে। পরে তার ব্যাখ্যা প্রদান করলেই হলো। কিন্তু সমস্যা হলো একসঙ্গে পাঁচজন বিজ্ঞানীই কেন যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে! এটা তাদের কাছে একটু অস্বাভাবিক লাগছে। তাই তারা কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোকে বিষয়টা জানায়। তদন্ত ব্যুরো জেনারেল সুমিতরোকে দায়িত্ব দিয়েছে বিষয়টা নিয়ে একটু খোঁজখবর করার জন্য।

পাঁচজনের দলটা প্রথম সভা করে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান অনুষদের দক্ষিণ ভবনের সেমিনার রুমে। কাজের বিষয় এবং তার সমাধানের পথ নিয়ে একটানা চার ঘণ্টা সভা হয়। মাঝখানে ১৫ মিনিটের একটা বিরতি ছিল। কিন্তু প্রথম সভাতেই সিদ্ধান্ত হয়, এবার থেকে সভা হবে সাইবার কানেকশনে। সবারই নিজস্ব অনেক কাজ আছে। তা ছাড়া এত দূরের পথ পাড়ি দেওয়া সময়সাপেক্ষ। এই সেমিনারকক্ষেই হবে সভা। একজন কো-অর্ডিনেটর হিসেবে উপস্থিত থাকবে, অন্যরা থাকবে সাইবার কানেকশনে। একেকটা সভায় কো-অর্ডিনেটর একেকজন হবে। তার কাজ হবে সেদিনের সভার সবকিছু বিশেষ কোড দিয়ে ফাইল তৈরি করে রাখা। সেদিনের সভা শেষে পাঁচজন পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিদায় নেয়। পরের সভার সম্ভাব্য একটা তারিখ ঠিক করা আছে। তার কোনো অদল-বদল হলে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

রাহি, মানে দর্শনের ভদ্রলোক প্রথম সভা শেষ করে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিল। তার নিজের কাজ বলতে একটা চিড়িয়াখানার সুপারভাইজার। এখন তো একেকটা খাঁচায় একেকটা প্রাণী থাকে। তাদের বংশবৃদ্ধি করতে কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করা হয়। শুধু প্রাণী কেন, মানুষের জন্মও এখন কৃত্রিম মাতৃগর্ভে হয়। আসলে বলতে গেলে একজন মানুষের সঙ্গে আরেকজন মানুষের দেখাই তেমন হয় না। যে যার কাজে এত মশগুল যে অন্যের জন্য সময় দেওয়ার কথা ভাবতেই পারে না। মাতৃত্ব এখন মেয়েদের জন্য একটা বোঝা। বিশেষ করে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে, এটা ভেবেই এ থেকে সবাই বিরত থাকে। কৃত্রিম উপায় যখন রয়েছে, তখন এসবের কোনো মানে হয় না। তা ছাড়া এখন যেকোনো মানুষ জন্ম নিলেই হবে না। কখন কী বিশেষ গুণের মানুষ দরকার, তা কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ ব্যুরো ঠিক করবে এবং কৃত্রিমভাবে সেভাবেই মানুষ উত্পাদন হবে। হ্যাঁ উত্পাদনই, মানুষকে এখন জন্ম নেওয়া বলার চেয়ে উত্পাদন বলাটাই বেশি সাজে। আর মানুষ জন্ম নেবে কি না, সেটাও নির্ভর করে মানুষের সংখ্যার ওপর। কারণ, মৃত্যুর হার এখন নেই বললেই চলে। যত দিন খুশি বাঁচছে মানুষ। খুব কম সংখ্যার মানুষ একটা বয়সের পর স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য আবেদন করে। আর তা থেকে সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে নতুন মানুষের দরকার হয়। অবশ্য হঠাৎ বিশেষ কোনো গুণের মানুষের দরকার পড়লে কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে বিশেষ পরিকল্পনায় মানুষের জন্ম দেওয়া হয়।

খাওয়াদাওয়াও তো এখন ক্যাপসুলে চলে আসে। যে মানুষের শরীরের জন্য যে রকম দরকার, সে রকম। আর সেন্সর লাগিয়ে তার স্বাদ নির্ধারণও করা হয় যার যার পছন্দমতো।

দ্বিতীয় সভার কো-অর্ডিনেটর গণিতবিদ। গণিতবিদ ঠিক সময়ের দুই মিনিট আগে নিজের চেয়ারে আসন গ্রহণ করে। অন্য চার চেয়ারে বিজ্ঞানীরা উপস্থিত হয়েছে। তবে সবাই সাইবার যোগাযোগের মাধ্যমে। ইতিহাসবিদকে দেখা যাচ্ছে একটা হালকা পোশাক পরে বাড়ির লনে বসে আছে। তার এলাকায় এখন বেশ গরম। মনোবিজ্ঞানী একটা ছাই রঙের স্যুট পরে আছে। তার ওখানে এখন হালকা ঠান্ডা। জীববিজ্ঞানী তার ল্যাবরেটরি থেকেই যুক্ত হয়েছে। তার ইমেজটা একটু কেঁপে কেঁপে যাচ্ছে, কারণ বোধ হয় ল্যাবরেটরির বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা। দর্শনের ভদ্রলোক নিজের পড়ার ঘর থেকেই যুক্ত হয়েছে। তার পরনে একটা ঝকমকে পোশাক। আজ তার ছুটির দিন, সেই জন্য একেবারে হালকা মেজাজে আছে। সভা শুরু হলে যে যার বক্তব্য এক এক করে উপস্থাপন করে। মনোবিজ্ঞানী ভদ্রলোক মানুষের মস্তিষ্কের কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলল। তার নিজস্ব কিছু উদ্ভাবন নকশার মাধ্যমে বোঝাতে শুরু করে। সামনের হলোগ্রাফিক স্ক্রিনটা সেমিনার কক্ষের টেবিলে রেখে আঙুল দিয়ে একটা নকশা আঁকতে থাকে। উভয় দিক থেকে দেখা যাওয়ার সুবিধার জন্য সবাই সেটা ভালোমতোই দেখতে পাচ্ছিল। নকশা দিয়ে সে ঠিক কী ধরনের পরিবর্তন মস্তিষ্কে দেখতে পাবে বলে আশা করছে, তা বুঝিয়ে বলে। জীববিজ্ঞানী তার ল্যাবরেটরির আলমারি থেকে মস্তিষ্কের কিছু পরিবর্তিত মডেল বের করে। সেগুলোর ইমেজ চলে আসে সেমিনার টেবিলে। সেটা দিয়ে বোঝাতে থাকে মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম পরিবর্তন থেকে সে কীভাবে এর কার্যপদ্ধতি বের করবে। এমনি করে সবারই বক্তব্য শেষ হয়। তেমন কিছুই পাওয়া যায় না এ সভা থেকে। পরবর্তী সভার দিন ও করণীয় নিয়ে আলোচনার পর সভা মুলতবি হয়ে যায়।

এরপর সভার পর সভা হয়ে গেছে। একে একে ৩৮টা সভা হয়েছে গত সাড়ে চার বছরে। এখন পর্যন্ত কোনো রকম সমাধানই আসেনি। হতাশ হয়ে পড়ার কথা সদস্যদের। তবে তারা বৈজ্ঞানিক বলে অসীম ধৈর্য রাখে। বিজ্ঞানীদের কাজই তো এ রকম। অসংখ্য অসফল ইটের ওপর তৈরি হয় সফল ইমারত। ৩৯তম সভার কো–অর্ডিনেটর দর্শনের ভদ্রলোক। তার কাজ খুব বেশি কিছু না। সব সভাতেই খুব সামান্য কিছুই সে বলে থাকে। এবারের সভা শুরুর আগেই ভদ্রলোক জানায়, সভা শেষে তার কিছু বক্তব্য আছে। তবে যদি আজকের সভা থেকে কোনো ফল না আসে তবেই। এ দিনের সভাও শেষ হয় কোনোরকম সমাধান ছাড়াই। দর্শনের ভদ্রলোক তখন তার বক্তব্য শুরু করে। অরিওন নামের এক তরুণ, যে এই গবেষণা নিয়ে আগ্রহী। সে কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ। কিন্তু তার কাজ কম্পিউটারের বিশেষ প্রোগ্রামের সাহায্যে পৃথিবীর নানা প্রাণী, পাখি, কীট বা জীবাণু নিয়ে নানা রকমের গবেষণা চালানো। অরিওনের বিশেষ গুণ হচ্ছে, যেকোনো বিষয়েই তার আগ্রহ অসীম। তার দর্শন নিয়েও পড়াশোনা আছে। যেটার আগ্রহ সে পেয়েছে দর্শনের ভদ্রলোকের পুরোনো কোর্স নোট থেকে। এখন যদি এই গবেষক দল অনুমতি দেয়, তাহলে সে তার মতো করে গবেষণা করতে চায়। কারণ, সরকার তাকে এই অনুমতি দেবে না। সেই জন্য সে এই গবেষক দলের আড়ালে থেকে নিজের গবেষণাটা চালাতে চায়। এদিন বিষয়টা প্রস্তাব আকারেই থাকে। ঠিক হয় আগামী সভায় নিজেদের কাজের শেষে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

মাসখানেক পর ৪০তম সভা শুরু হয়েছে। সভার প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে সবাই একমত হয় আজও কোনো সমাধান তারা দিতে পারছে না। আর তাই তারা অরিওনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে পারে। একে একে সবাই নিজের নিজের অবস্থান বর্ণনা করে। তারপর সবাই সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের ইতিমধ্যে দাখিল করা প্রকল্পগুলো নিয়ে গবেষণা শেষ করবে। কারণ সেগুলো যেহেতু প্রস্তাব আকারে জমা আছে, অতএব সেগুলো তাদের শেষ করতেই হবে। আর এগুলো শেষ করতে আরও চারটি সভা লাগবে।

৪৫তম সভার কো–অর্ডিনেটর জীববিজ্ঞানী উরনু। এবারের সভায় সব সদস্য উপস্থিত হয়েছে। নিজেদের সিদ্ধান্তেই এবারের সভায় কেউ সাইবার যোগাযোগে থাকবে না বলে ঠিক করেছে। জীববিজ্ঞানী শুরুতেই বলে, ‘আমাদের সব চেষ্টাই বলতে গেলে ব্যর্থ হয়েছে। এই মুহূর্তে আমাদের আর কোনো প্রকল্প জমা নেই। কিন্তু আমরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান অনুষদকে এ কথা জানাইনি। কারণ, আমরা অন্য একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভেবেছি। সেটা হচ্ছে অরিওনের প্রস্তাব। আপনাদের সবার অনুমতি পেলে আমরা অরিওনের সঙ্গে কথা বলব।’ সবাই হাত তুলে সমর্থন জানায়। অরিওনের সঙ্গে এখানে সাক্ষাৎ করাটা কেউই উচিত হবে বলে মনে করে না। তার সঙ্গে দেখা করার জন্য ভিন্ন একটা জায়গা নির্ধারণ করা হয়। এই প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গে সেদিনের সভা শেষ হয়ে যায়।

ঘরটা খুব বেশি বড় না। শহরের দক্ষিণ প্লাজার যে বসতি আছে, সেখানকার একটা বাড়ি। নদীর ধার বলে বেশ বাতাস আছে। কয়েক বছর আগেও বাইরের বাতাস এভাবে ঘরে ঢোকার কথা কেউ ভাবতেই পারত না। আবহাওয়া দূষিত হয়ে এমন হয়েছিল যে সবাইকে বদ্ধ ঘরে থাকতে হতো কৃত্রিম আবহাওয়ার মধ্যে। বেশ বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে পৃথিবীর আবহাওয়াকে বাসযোগ্য করা হয়েছে। এখন আর কোনো রকম সুরক্ষা ছাড়াই বাইরে বের হওয়া যায়। পাঁচজন বিজ্ঞানী অপেক্ষা করছে অরিওনের জন্য। একটু পরেই দমকা একটা বাতাসের সঙ্গে ঘরে ঢোকে ছিপছিপে একটা তরুণ। চোখ দুটো একটু বড়। সেখানে দৃঢ়প্রত্যয়ের আভাস। ভেতরে ঢুকে সবাইকে একবার দেখে নিয়ে বলে, ‘আমার নাম অরিওন। আমি থাকি সাউথ লেক সিটিতে।’ তারপর একটু থেমে আবার শুরু করে—

‘আমি আপনাদের গবেষণার বিষয় প্রথম থেকেই জেনেছি। নিজের আগ্রহের কারণে শেষ সভার কার্যবিবরণীও আমি জেনে নিয়েছি। যেহেতু আপনারা আমার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন, তাই আমি এবারে একটু চেষ্টা করে দেখতে চাই।’

জীববিজ্ঞানী উরনুই কথা বলে সবার পক্ষ থেকে—

‘তুমি এই মুহূর্তে কী ধরনের কাজ করছ?’

‘আমার পড়াশোনা জীববিজ্ঞানের সঙ্গে কম্পিউটার প্রোগ্রাম নিয়ে। প্রোগ্রামার হিসেবে আমাকে অনেকেই নির্ভর করে থাকে। আমার বর্তমান কাজ হচ্ছে পৃথিবীর বেশ কিছু প্রাণী, পাখি ও কীটপতঙ্গ নিয়ে। এদের নিজস্ব বেঁচে থাকার ধারা এবং এতে মানব সম্প্রদায়ে তার কী কী প্রভাব পড়ে, তার একটা তালিকা তৈরি করা। অবশ্য বিষয়টা জটিল, কারণ সব প্রাণী, কীট, জীবাণু সময়ের সঙ্গে, আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে নিজের টিকে থাকার পদ্ধতি পাল্টে ফেলে। সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম এই সব পরিবর্তনের জন্য জীবজগতে প্রভাবও পাল্টাতে থাকে। দ্রুত এই পরিবর্তনগুলোর তথ্য পাওয়ার জন্য আমি এমন একটা প্রোগ্রাম বানিয়েছি, যেটা বলতে গেলে খুবই কার্যকর।’

‘বোঝা গেল। এখন তোমার কর্মপদ্ধতি কী রকম হবে, তা কি বলা যায়!’

‘আমি কিছু প্রোগ্রাম বানিয়েছি,’ একটু হাসে অরিওন। ‘মানে আমার স্বাচ্ছন্দ্য এলাকাই আমি বেছে নিয়েছি। শুধু তা–ই না, আমার ধারণা, যদি কিছু আমি করতে পারি, তাহলে এটা দিয়েই হবে।’

‘তোমাকে যদি আমরা দায়িত্ব দিই, তাহলে কবে থেকে কাজ শুরু করতে পারবে?’

‘আমরা এখনই প্রস্তুত।’

‘আমরা মানে! তোমার সঙ্গে আর কেউ আছে নাকি?’

‘হ্যাঁ, আমার সঙ্গে ইভ দ্বীপের ইউতি নামের একটা মেয়ে কাজ করবে।’

কিছুক্ষণ কেউ কোনো কথা বলে না। অরিওন সবার মুখের দিকে একবার করে চায়। তবে উরনুই আবার কথা বলে,

‘মেয়েটা কী করে?’

‘সে–ও আমার মতো কম্পিউটার প্রোগ্রামার। তার সঙ্গে একটা প্রোগ্রাম কোর্সেই পরিচয়। তবে তার কাজের বিষয় হচ্ছে মহাশূন্যের জীবাণু বা যদি কোনো প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায়, তার প্রভাব মানবজাতির ওপর কী ধরনের, তার গবেষণা করা।’

‘বাহ্! তোমাদের কাজের বিষয় প্রায় একই ধরনের।’

‘হ্যাঁ, সেই জন্য আমাদের মধ্যে প্রায়ই যোগাযোগ হয়।’

‘তার কাজও নিশ্চয়ই তোমার মতো প্রোগ্রামনির্ভর?’

‘হ্যাঁ, আমার মতোই।’

‘সাউথ লেক সিটি তো এখান থেকে কাছেই, কিন্তু ইভ দ্বীপ তো তোমার ওখান থেকে অনেক দূরে।’

‘হ্যাঁ, সেটা তো একেবারে উত্তরে।’

‘এখানে একটা অসুবিধা দেখা দিচ্ছে। আমরা যখনই দায়িত্ব তোমাকে দেব, তখনই আমাদের দিক থেকে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান অনুষদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

অরিওন একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কেন?’

‘কারণ, আমরা তো এই সময় কোনো সভার ফলাফল জানাতে পারব না।’

‘ও আচ্ছা। কিন্তু পরে কী হবে?’

‘যদি তুমি সফল হও, তাহলে আমরা যে করেই হোক এটাকে ঠিক করে নিতে পারব। সমস্যা হলো যদি সফল না হও। এই ঝুঁকি আমাদের নিতেই হচ্ছে।’

‘আমার মনে হয় আমি সফল হব।’

‘এমন ভাবার কারণ?’

‘আমার মন বলছে।’ বলেই অরিওন একটু থতমত খেয়ে যায়।

বিজ্ঞানীরা একে অপরের মুখে চায়। অবশ্য ‘মন বলছে’ বিষয়টা তারা তত গুরুত্বও দেয় না। শুধু জীববিজ্ঞানী ভদ্রলোক আবার বলে, ‘যা–ই হোক, এর ফলে তারা আমাদের ওপর গোয়েন্দা তত্পরতা চালাতে পারে। আর তোমরা যেহেতু সাইবার যোগাযোগে থাকবে, সেহেতু ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়ে যায়।’

‘সে বিষয়ে আমরাও ভেবেছি এবং যেহেতু ইউতির কাজ পুরোটাই কম্পিউটারনির্ভর, সেহেতু সবকিছু নিয়ে আমার ল্যাবরেটরিতে সে চলে আসতে পারবে।’

‘আচ্ছা। তাহলে তো মনে হয় সমস্যা হওয়ার কথা না।’

‘এতে ইউতির একটু ঝামেলা হবে, কিন্তু যেহেতু আমার কাজ আমার নিজের ল্যাবরেটরি ছাড়া হবে না, তাই এ ছাড়া উপায়ও নেই।’

এরপর পাঁচ বিজ্ঞানীই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নেয় এবং সবার হয়ে পুনরায় কথা বলে জীববিজ্ঞানী উরনুই—

‘আমার মনে হয় আমরা তোমার ওপর ভরসা করতে পারি। অতএব তুমি কাজ শুরু করো এবং কোনোরকম লিখিত চুক্তি ছাড়াই। আমরা তোমার সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ করব না বা তুমিও কোনো রকম যোগাযোগ করবে না। কারণ, এতে গোয়েন্দা নজরে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। আজ থেকে এক বছর পর আমরা নিজেরাই তোমার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করব।’

ইউতি ঢুকেই অরিওনকে বলে, ‘আমি কিন্তু ল্যাবরেটরির এক পাশে থাকতেই পছন্দ করব।’

অরিওন বলে, ‘আমার কিন্তু একটা অতিরিক্ত ঘর আছে সব সুবিধাসহ।’

‘দরকার নেই। তুমি তো আমাকে ল্যাবরেটরি করার জন্য আলাদা একটা ঘর দিচ্ছ!’

‘হ্যাঁ, তা তো অবশ্যই।’

‘তাতেই হবে, আমার তারই এক পাশে থাকতে ভালো লাগে।’

‘অবশ্য আমাদের যৌথ কাজ আমার ল্যাবরেটরির পাশের একটা ঘরে করতে হবে।’

‘হ্যাঁ, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু আগে আমার মূল কাজের যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক করে নিই, তারপর যৌথ কাজ নিয়ে কথা শুরু করব।’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি সময় নাও।’

বৈজ্ঞানিকদের দল যোগাযোগ বন্ধ করার এক মাসের মাথায় জেনারেল সুমিতরোর কাছে চিঠিটা আসে। চিঠিটা পেয়ে জেনারেল একটু ঝামেলায় পড়েছে। অত বড় বৈজ্ঞানিকদের পেছনে গোয়েন্দাগিরি করা বেশ সমস্যার। তাদের জন্য আইনের অনেক ছাড় আছে। একটু এদিক থেকে সেদিক হলে সে নিজে ঝামেলায় পড়ে যাবে। নানা ধরনের জবাবদিহি করে মরতে হবে। তাদের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান পরিষদে জমা দেওয়া সভার নথিগুলো অনেকভাবে বিশ্লেষণ করে দেখেছে জেনারেল, তা থেকে কিছুই পাওয়া যায়নি। সভার দিন ছাড়া তারা নিজেদের মধ্যে যে যোগাযোগ করেছে, তা সবই কোড ল্যাঙ্গুয়েজে। সেই কোড ভাঙা তার কম্ম নয়। কম্পিউটার দপ্তরের কোনো এক্সপার্টকে দিয়ে করানো যায়, কিন্তু সেখানেও নানা রকম ঝামেলা আছে। বড় বিজ্ঞানীদের বিষয়ে সবাই খুব সাবধানে থাকে। পরে যদি দেখা যায় তেমন কোনো বড় রকমের সমস্যা নয়, তখন তাদের দৌড়ঝাঁপ করতে হবে আইন দপ্তরের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে। জেনারেল সিদ্ধান্ত নিল, কোনো রকম কম্পিউটারের সাহায্য নেবে না এই তদন্তে। কম্পিউটার মানেই কিছু প্রমাণ রেখে দেওয়া। বিশ্বস্ত কয়েকজন লোক বেছে নিল সে। তাদের কাজ হবে পাঁচজন বৈজ্ঞানিকের বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে খোঁজখবর করা। বৈজ্ঞানিকদের বাড়ির কাছে যাওয়া যাবে, কিন্তু ভেতরে কোনোক্রমেই ঢোকা যাবে না। এখন এইভাবে যতটুকু পারা যায় তথ্য জোগাড় করে দেখা যাক কিছু করা যায় কি না।

সূর্যটা তখন উঠি উঠি করছে। অরিওন তার বাসার সামনের রাস্তা পার হয়ে লেকের ধারে গিয়েছিল। সেখানকার একটা জলজ কীটের ওপর পরীক্ষা চালাচ্ছে কয়েক দিন ধরে। ফিরে নিজের লনে পা দিতেই দেখে, ল্যাবরেটরি থেকে বের হলো ইউতি। সদ্য ঘুম ভাঙা চেহারা। অরিওন হেসে বলে, ‘ঘুম হলো ঠিকমতো?’

‘হ্যাঁ, কোনো সমস্যা হয়নি।’

‘যাক, আমি ভাবছিলাম কম জায়গায় আবার কোনো রকম সমস্যা না হয়।’

‘না না ওটাই তো আমার অভ্যাস। তুমি মনে হচ্ছে সাতসকালেই কাজে নেমে পড়েছ!’

‘উপায় নেই, জলজ এই কীটগুলো সূর্য উঠে গেলেই পানির গভীরে চলে যাবে।’

ইউতি একটু এদিক–ওদিক তাকিয়ে দেখে। তারপর বলে, ‘আজ আমরা আমাদের নতুন প্রজেক্টের কাজ শুরু করতে পারব মনে হয়।’

‘আমি তো তৈরি।’

কিছুক্ষণ পর দুজন একটা ছোট্ট ঘরে গিয়ে বসে। সেটার দেয়ালঘেঁষা কয়েকটা কম্পিউটার রাখা আছে। অরিওন ইউতির দিকে তাকিয়ে বলে, ‘শুরু করার আগে তোমাকে কয়েকটা পুরোনো সিনেমার কথা বলব। আমি এগুলো আর্কাইভ থেকে জোগাড় করেছি। সেগুলো দেখা থাকলে আমার প্রোগ্রামটা বুঝতে সুবিধা হবে।’

‘শুনি, কী কী সিনেমা!’

‘সব কটিই মানব-মানবীর সম্পর্কযুক্ত। ‘রোমান হলিডে’, ‘কাম সেপ্টেম্বর’, ‘সান ফ্লাওয়ার’, ‘সাউন্ড অব মিউজিক’...

এই পর্যন্ত বলতেই ইউতি হাত তোলে, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, “সাউন্ড অব মিউজিক” আমি দেখেছি।’

‘ও তা–ই, না! তাহলে তো বুঝতেই পারছ কী ধরনের সিনেমার কথা বলছি। আরও আছে, “ক্রেনস আর ফ্লাইং”।’

‘তুমি বলছ এগুলো আমার দেখা দরকার?’

‘হ্যাঁ, তাহলে আমার প্রোগ্রামটা বুঝতে সুবিধা হবে।’

পরবর্তী তিন দিন তাদের প্রোগ্রাম নিয়ে আলোচনা হলো নিজেদের কাজের ফাঁকে ফাঁকে। আর অরিওন বিশ্রামের সময় ইউতিকে নিয়ে পুরোনো সিনেমাগুলো দেখল বেশ মন দিয়ে। তবে সিনেমার কিছু কিছু দৃশ্যে নায়ক বা নায়িকার কিছু আচরণ তাদের কাছে অদ্ভুত লেগেছে। কিন্তু তারপরও দুজন মনে করেছে এর মধ্যেই তাদের এই নতুন প্রোগ্রামের সফলতা লুকিয়ে আছে।

কাজ শুরু করার পর এই প্রথম অরিওনের কেমন একটা অনুভূতি হয়। সাধারণত এত কাছে কোনো মানুষ এর আগে থাকেনি। আরেকটা মানুষের নিজস্বতা, তার আলাদা ব্যক্তিত্ব তার পছন্দও আলাদা। এসব নিয়ে একই জায়গায় থাকতে গিয়ে কেমন যেন মনে হতে থাকে। একবার সে ভাবে, ইউতিও নিশ্চয়ই এ ধরনের জটিলতা বোধ করছে। তবে একসময় কাজের মধ্যে ডুবে গিয়ে সেসব কথা খুব একটা আর মাথায় থাকে না।

পাঁচ বিজ্ঞানী এর মধ্যে আর কোনোভাবেই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করেনি। তাতে তাদের অবস্থান প্রকাশ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। কিন্তু নিজেদের কাজের জায়গায় তারা তো প্রকাশ্য। সেখানে যে কেউ খোঁজ নিলেই তাদের পেয়ে যাবে। সেই জন্য যুক্তি করে তারা সবাই ছুটি নিয়েছে বিশেষ গবেষণার কাজ দেখিয়ে। এখন তাদের নিজেদের কাজের চেয়ে রাষ্ট্রের এই কাজ সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ।

প্রায় দেড় মাস হয়ে গেছে অরিওন আর ইউতি দুটো প্রোগ্রাম পরীক্ষা করে দেখেছে। প্রোগ্রামটা ঠিকমতোই চলে, কিন্তু মানব-মানবীর কিছু সম্পর্কের জায়গায় গিয়ে প্রোগ্রাম ক্রাশ করছে। কিছুতেই সেটাকে ঠিক করা যাচ্ছে না। এরপর তাদের আর একবার নতুন প্রোগ্রাম তৈরি করার মতো মাল–মসলা আছে। এটা যদি কাজ না করে, তাহলে সেখানেই এর সমাপ্তি ঘোষণা করতে হবে।

তাদের ৩ নম্বর আর এই প্রজেক্টের ৪৮তম পরীক্ষাটা অরিওন আর ইউতি চালু করার জন্য তৈরি হয়। একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। তাদের পরিচয়ের পর সম্পর্ক বেশ আন্তরিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। অরিওনের প্রোগ্রাম অনুযায়ী, তাদের মেমোরিতে দেওয়া হয়েছে পুরোনো আমলের শিল্প-সাহিত্য, সামাজিক চিত্র। দুজনের দেখা হয় সুন্দর একটা পার্কে। প্রোগ্রাম চলছে, আজ তরুণটা একা বসে আছে পার্কে। চারদিকে পাখি ডাকছে, ফুল ফুটেছে তারার মতো। তবু তরুণের মনটা খারাপ। বিষণ্ন হয়ে বসে আছে। একটু আগে মেয়েটা চলে গেছে। বলে গেছে সে বাবার অমতে তাকে বিয়ে করতে পারবে না। তাকে যেন ক্ষমা করে দেয়। ছেলেটা বিমূঢ় হয়ে বসে থাকে। একটা শুকনো পাতা পড়ে তার সামনে। সেটাকে হাতে নিয়ে গুঁড়ো গুঁড়ো করে ছড়িয়ে দেয় বাতাসে।

অরিওন বুঝতে পারছে না ছেলেটা বসে আছে কেন। তার তো কিছু একটা করা উচিত। মেয়েটাকে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বোঝানো দরকার। বা তার বাবাকে গিয়ে তার নিজের ভালো আর খারাপ বিষয়গুলো বলা উচিত। তাতে তার যা পয়েন্ট দাঁড়ায়, তাতে অন্য যেকোনো পাত্রের চেয়ে তার অবস্থান কতখানি এগিয়ে আছে, তা বিচার করলেই তো হয়। কিন্তু ছেলেটা বসেই থাকে। অরিওন হতাশ হয়ে বলে, ‘নাহ এ প্রোগ্রামও কাজ করবে না...’ বলতে বলতে পেছন ফিরে তাকায় ইউতির দিকে। অবাক হয়ে দেখে, ইউতি বসে আছে নিথর হয়ে। তার চোখের কোনায় জল।

জেনারেল সুমিতরো চিঠি পাওয়ার পর ৯ মাসের বেশি অতিক্রান্ত হয়েছে। তেমন কিছুই সে এখনো খুঁজে পায়নি। মহা সমস্যায় আছে। তদন্ত ব্যুরো বারবার তাগাদা করছে। কিন্তু কীভাবে কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। তবে গতকাল একটা নাম তার কাছে এসেছে, অরিওন। এই নাম ছাড়া আর কিছুই সে পায়নি। কত বয়স, কোথায় থাকে কী করে, কিছুই না। তবে সুখের কথা, তাদের দপ্তর খোঁজ নিয়ে দেখেছে, এই নামে মাত্র ৯৭ জন মানুষ আছে। এখন তার কাজ হবে এক এক করে এদের খোঁজ নেওয়া। এর মধ্যে যদি কোনো সন্দেহজনক অরিওনকে পাওয়া যায়, তাহলে তার বিষয়ে তদন্ত করে দেখা।

৪৮ নম্বর প্রজেক্টও কোনো সমাধান দিতে পারেনি। কিন্তু তারপরও পাঁচ বিজ্ঞানী খুশিমনে বসে আছে অরিওনের বাড়ির বারন্দায়। জেনারেল সুমিতরো অরিওনের খোঁজ বের করে ফেলেছে। সে দুজন সহকারী নিয়ে হাজির হয়েছে অরিওনের বাড়িতে। সেখানে ঢোকার আগে অবাক হয়ে দেখে, বারন্দায় বসে আছে পাঁচ বিজ্ঞানী। দুই সহকারীকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলে লন ধরে এগিয়ে যায়। জীববিজ্ঞানী উরনু হাসতে হাসতে বলে, ‘আসুন আসুন জেনারেল, বুঝতে পারছি আপনার ওপর দিয়ে অনেক ঝামেলা গেছে।’

ঠিক এই সময় ঘরের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে অরিওন আর তার পেছনে ইউতি। তার কোলে ফুটফুটে একটা বাচ্চা। জেনারেল অবাক হয়ে আঙুল তুলে বলে, ‘এর মানে কী?’

উরনু উত্তর দেয়, ‘ওটাই আমাদের প্রজেক্টের ফলাফল।’

বৈজ্ঞানিকদের মিলিত রিপোর্ট গিয়েছে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান অনুষদে। মানবজাতিকে আশার আলো দেখানো গেছে। মানুষের প্রেমই পারে মানুষকে বাঁচাতে।

অরিওনের বাড়ির রাস্তায় মাঝেমধ্যে লোক চলাচল দেখা যায়। খুব বিলাসী লোকেরা এখনো সকালে প্রাতর্ভ্রমণে বের হয়। অরিওনের বাড়ির সামনে এসে তাদের কেউ কেউ হঠাৎ অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে যায়—একি! একটা মানুষের বাচ্চার গলার আওয়াজ।