‘ধুর, কতক্ষণ ধরে শুধু কলমই কামড়ে যাচ্ছি, কোনো বিজ্ঞান কল্পগল্পের আইডিয়াই তো মাথায় আসছে না,’ বলল এক্স ৩৩৯ মডেলের রোবটটি। ‘কালই গল্প জমা দেওয়ার শেষ তারিখ।’
হঠাৎ করেই রোবটটির মাথায় গল্পের একটি আইডিয়া এসে যায়। এরপর তাকে দেখা যায় উপুড় হয়ে দ্রুতগতিতে কিছু একটা লিখে যেতে।
২৯৯৩ সাল। পৃথিবীতে এখন রোবটের রাজত্ব। ওরা সবকিছুই মানুষের অনুকরণে করেছে। তাই রোবটদের স্কুলও রয়েছে। সদ্য প্রস্তুত করা রোবটরা অনেকটা ছোট মানব শিশুদের মতো হয়। তাদের স্কুলে গিয়ে সবকিছু শিখতে হয় মানুষের মতো। এক্স ৩৩৯ মডেলের রোবটটি এখন নাইনথ গ্রেডে পড়ে। ওদের স্কুলে বিজ্ঞান কল্পগল্প লেখার একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
অবশেষে তার লেখা শেষ হয়। জমা দেয় গল্পটা। দুদিন পর স্কুল অডিটরিয়ামে প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। স্কুলের প্রিন্সিপাল সি ০২১ মডেলের রোবট স্টেজে নাম ঘোষণা করেন। নিজের নাম শুনতে পায় এক্স ৩৩৯ মডেলের রোবটটি। খুশিতে আত্মহারা রোবট স্টেজে যায় পুরস্কার নিতে। ফিরে আসে। এরপর প্রিন্সিপাল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ছোটখাটা একটা বক্তৃতা দিলেন-‘তোমরা হয়তো জানো, একসময় পৃথিবী আর রোবট মানুষের অধীনে ছিল। এরপর বহুকষ্টে মানুষদের সরিয়ে তাদের পৃথিবীর দখল নিয়েছে রোবটরা। জাদুঘর ছাড়া আর কোথাও মানুষের চিহ্ন নেই। দিনে দিনে রোবটরা উন্নত হয়েছে এবং হচ্ছে। রোবট কল্পনাশক্তিকেও জয় করেছে। তার প্রমাণ আজই পাওয়া গেল। কী চমত্কারভাবে কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে গল্প লিখতে শিখেছে রোবটরা! অসাধারণ!’
পুরস্কার হাতে নিয়ে বাসায় ফেরে এক্স ৩৩৯ মডেলের রোবটটি। ভাবে, ভাগ্যিস, সেদিন জাদুঘরে গিয়েছিলাম। জাদুঘরে যেসব মানুষকে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে, ওদের দেখেই তো গল্পটি মাথায় এসেছিল আমার।
তার গল্পের কাহিনি ছিল, মানুষেরা রোবটদের ধ্বংস করে পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। রোবটদের চিহ্ন মুছে যায় পৃথিবী থেকে। পৃথিবীকে পুনরায় নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে মানুষ।
কী ভয়ংকর! নিজের লেখা গল্পটি কল্পনা করে আরেকবার শিউরে ওঠে এক্স ৩৩৯ মডেলের রোবটটি।
লেখক: শিক্ষার্থী, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট, মিরপুর, ঢাকা
*এই গল্পটি বিজ্ঞানচিন্তার সেপ্টেম্বর ২০১৭ সংখ্যায় গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার লাভ করে