নট ইয়েট দ৵ এন্ড

অলংকরণ: রাকিব

সবুজাভ একটা আভা ছড়িয়ে পড়েছে ধাতব ঘনকটার ভেতরে। কন্ট্রোলের সামনে বসে থাকা প্রাণীটার দেহ থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে আলোটা।

মাথার ঠিক মাঝখানে অবস্থিত একমাত্র চোখটা দিয়ে কন্ট্রোলের সাতটি ডায়ালের দিকে তাকিয়ে আছে সে। পলক পড়ছে না কোনো। জ্যান্ডর ছাড়ার পর একবারের জন্যও চোখের পলক ফেলেনি সে। কার-৩৮৮ওয়াই যে গোত্রের সদস্য, তাদের ঘুমের প্রয়োজন পড়ে না। প্রয়োজন পড়ে না কারও দয়ারও। সেটা অবশ্য এক চোখওয়ালা চেহারাটার দিকে তাকালেই বোঝা যায়।

৪ ও ৭ নম্বর ডায়ালের পয়েন্টারগুলো থেমে গেল। এর মানে, গন্তব্যে পৌঁছেছে গোলকটা। সামনে ঝুঁকে ঘনকটাকে থামার সুইচ টিপে ধরল কার। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙল।

ঘনকে থাকা একমাত্র সহকর্মীর দিকে ফিরে তাকাল কার। সে-ও একই প্রজাতির সদস্য। ‘পৌঁছে গেছি,’ বলল সে। ‘জেড-৫৬৮৯ নক্ষত্র আমাদের সামনে। প্রথম স্টপেজ। নয়টা গ্রহ এই নক্ষত্রকে ঘিরে পাক খাচ্ছে। তবে শুধু তৃতীয় গ্রহটাই বাসযোগ্য। এখন ওতে জ্যান্ডরের জন্য উপযোগী দাস পেলেই হয়!’

পুরোটা যাত্রাজুড়ে আড়ষ্ট হয়ে বসে ছিল লাল-আই৬বি। তাই উঠে দাঁড়িয়ে হাত-পা টান টান করে কারের মতোই আড়মোড়া ভাঙল সে-ও। বলল, ‘তাই যেন হয়। তাহলে জ্যান্ডরে ফিরে সেনাবাহিনী পাঠানো যাবে। তবে বেশি আশা করা ঠিক হবে না। উপযুক্ত জায়গাটা পাওয়ার আগে হয়তো হাজারটা গ্রহে থামতে হবে আমাদের।’

কাঁধ ঝাঁকাল কার। ‘তাহলে হাজারটা গ্রহেই থামব নাহয়। লুকানরা তো প্রায় বিলুপ্তই হয়ে গেছে। খনিতে কাজ করার জন্য নতুন দাস খুঁজে না পেলে আমাদেরও বিলুপ্ত হয়ে যেতে হতে পারে।’

কন্ট্রোলের সামনে বসে নতুন একটা সুইচ চাপল সে—সঙ্গে সঙ্গে ভিজিপ্লেটে দেখা গেল নিচের দৃশ্য।

কার বলল, ‘তৃতীয় গ্রহটার ওপরে এসেছি, নিচে এখন রাত চলছে। এখন থেকে ম্যানুয়ালি এগোতে হবে।’

একের পর এক বোতাম চাপা শুরু করল সে। কয়েক মিনিট পর বলল, ‘লাল, ভিজিপ্লেটে দেখো। নিয়মিত বিরতিতে আলো দেখা যাচ্ছে—সম্ভবত কোনো শহরের ওপরে চলে এসেছি! এই গ্রহে প্রাণ আছে।’

অন্য সুইচবোর্ডের সামনে এসে বসল লাল। আগ্রহী হয়ে উঠেছে সে-ও। ‘ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই আমাদের। শহরের চারপাশে ফোর্স ফিল্ডও নেই। এই প্রজাতির বৈজ্ঞানিক জ্ঞান একেবারে শূন্যের কোঠায়। চাইলে একবার বিস্ফোরণ ঘটিয়েই গোটা শহরটাকে ধ্বংস করা যাবে।’

‘তাহলে তো ভালোই,’ কার বলল। ‘তবে একটা কথা মনে করিয়ে দিই—আমাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ধ্বংস করা নয়। আমরা নমুনা চাই। যদি মনে হয় যে ওদের দিয়ে কাজ হবে, তাহলে বাহিনী পাঠানো যাবে। তবে জানো তো, সেনাবাহিনী এলে শুধু একটা শহর ধ্বংস করেই থামবে না। পুরো গ্রহটাকেই ধ্বংস করবে, ওদের সভ্যতা যেন প্রতিশোধ নেওয়ার মতো উন্নত হতে না পারে।’

একটা নব ঘোরাল লাল। ‘আচ্ছা, ঠিক আছে। ঘনকটাকে নিচে নামাচ্ছি। মনে হয় না ওরা আমাদের দেখতে পাবে।’

নিচে নেমে এল ঘনকটা। মাটির খানিক ওপরে এসে ভাসতে থাকল ওটা। এয়ারলক খুলে বাইরে পা রাখল কার। লাল ওর ঠিক পেছনেই রয়েছে। ‘দেখো,’ বলল সে। ‘নিচের প্রাণীদের দুটো হাত আছে। দুটো পা আর চোখও আছে—লুনাকদের সঙ্গে খুব একটা পার্থক্য নেই। তবে আকারে অনেক ছোট। যাহোক, নমুনা নেওয়া যাক।’

বাঁ হাত তুলল কার, তিনটা আঙুলে ধরে রইল একটা চিকন রড। প্রাণীগুলোর একটার দিকে তাক করল যন্ত্রটা, দৃশ্যমান কিছু দেখা গেল না। তবে প্রাণীটা মূর্তির মতো জমে গেল। আরও একটা নমুনা নিল সে।

‘আকারে এরা বড় না, কার,’ জানাল লাল। ‘আমি একটা নিচ্ছি, তুমি একটা নাও।’

‘ঠিক আছে, দুটোই যথেষ্ট। তার ওপর একজন নারী, আরেকজন পুরুষ। কাজে আসবে।’

মিনিট কয়েক পর ঘনকটা ওপরে উঠতে শুরু করল। মহাকাশে পৌঁছেই নমুনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল ওরা। ‘লোমশ প্রাণী, পাঁচটা আঙুল, হাত দিয়ে সূক্ষ্ম কাজ করতে পারবে। কিন্তু বুদ্ধিমত্তা আছে কি না সেটা দেখাই আসল।’ বলতে বলতেই এক জোড়া হেডসেট কানে দিল কার। আরেক জোড়া এগিয়ে দিল লালের দিকে। এরপর দুই নমুনাকেও পরিয়ে দেওয়া হলো ওগুলো। কয়েক মিনিট পর একে অন্যের দিকে হতাশ চোখে তাকিয়ে রইল তারা।

‘ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য মানের চেয়েও সাত পয়েন্ট নিচে,’ জানাল কার। ‘খনিতে কাজ করার জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত। সবচেয়ে সহজ নির্দেশগুলোও তো পালন করতে পারবে না। যা–ই হোক, জ্যান্ডর জাদুঘরের জন্য নিয়ে যাওয়া যাক।’

‘গ্রহটাকে ধ্বংস করে দেব?’

‘নাহ্‌,’ মত দিল কার। ‘হয়তো আরও এক মিলিয়ন বছর পর—যদি আমাদের জাতি বেঁচে থাকে আরকি—এদের দাস হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। আপাতত চলো, অন্য কোনো গ্রহে খুঁজে দেখি।’

মিলওয়াকি স্টার পত্রিকার সম্পাদক ভীষণ ব্যস্ত। দম ফেলার ফুরসতও পাচ্ছে না। শেষ মুহূর্তের সম্পাদনা সেরে নিচ্ছে। এমন সময় ছুটতে ছুটতে সম্পাদকের ঘরে ঢুকল প্রধান কম্পোজিটর জেনকিন্স।

‘৮ নম্বর কলামে আরেকটা গল্প ছাপানো যাবে, পিট,’ জানাল সে। ‘কোনটা ছাপাব? ওই জায়গায় আঁটানোর মতো দুটো গল্প আছে হাতে। কোনটা ছাপব?’

চোখ তুলে তাকাল সম্পাদক। ‘একটা কনভেনশন নিয়ে, আর আরেকটা চিড়িয়াখানা নিয়ে, তাই না? এক কাজ করো, কনভেনশনের খবরটা ছাপাও। কাল রাতে চিড়িয়াখানা থেকে দুটো বানর চুরি গেছে—এই খবরে কার কী আসে-যায়?’