মঙ্গল অভিযান

শীতল অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে তাঁর সারা শরীরে। বেশ ভালোভাবে অনুভব করছেন এডিথ কিন্সেল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তাঁর স্বপ্ন পূরণ হবে। তিনিই হবেন মঙ্গলের প্রথম মানুষ। মঙ্গলে অবতরণের ঠিক আগ মুহূর্তে এসব চিন্তাই ঘুরে ফিরে আসছে তাঁর মনে। তাঁর মহাকাশযানের নাম আলসেট-১০১ (ALSET-101)।

মঙ্গলে অবতরণ করলেন তিনি। বহু বছরের গবেষণা এবং সাত মাসের  মহাকাশযাত্রা সার্থক হলো আজ।

এখন মঙ্গলে বসবাসের প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে হবে। মঙ্গলে গড়ে উঠবে স্পেস হাব শহর। এটা নিশ্চিত করতেই এখানে এসেছেন এডিথ। পৃথিবীর বেশিরভাগ ধনী মঙ্গলে জায়গা কেনার জন্য বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। শিগগিরই মঙ্গল গ্রহের মালিক হবে পৃথিবীবাসী। এসব ভাবতে ভাবতে গ্রাউন্ড স্টেশনে একটি বার্তা পাঠান এডিথ। তিনি মহাকাশযানটিকে এয়ারলকের ওপর রেখে মঙ্গলে পা রাখেন। দূরে কিছু একটা তাঁর দৃষ্টিকে মুগ্ধ করে। কিছুটা কাছে আসতেই বোঝা গেল, ওখানে একজন সুন্দরী মহিলা বসে আছেন।

সাদা লম্বা গাউনে ঢাকা তিনি। কোঁকড়ানো চুল এবং বড় বড় চোখ। চোখ দুটি যেন তাঁর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। কে এই মহিলা? এডিথের আগে কীভাবে মঙ্গলে এসে পৌঁছেছেন তিনি? মেয়েটির সৌন্দর্যে যেন ঘোর লেগে যাচ্ছে এডিথের। যুক্তি-বুদ্ধি কাজ করছে না। এডিথ তাঁর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কে? কীভাবে এখানে এলেন?’

সে মৃদু স্বরে উত্তর দিল, ‘আমি উরসিয়া। এখানে থাকি।’

বিজ্ঞানীরা এত যুগ ধরে গবেষণা করছেন, অথচ মঙ্গলে তাঁরা কোনো প্রাণের সন্ধান পাননি। এটা কীভাবে সম্ভব?

এডিথের চিন্তাশক্তি কিছুটা ফিরে এসেছে। মেয়েটির উত্তর শুনে এত অবাক হয়েছেন যে মুখে কথা সরছিল না। নিজেকে সামলে নিয়ে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি এখানে কীভাবে থাকতে পারেন? স্পেস হাবের প্রকল্পটি তো এখনো শুরুই হয়নি। তা ছাড়া মঙ্গল গ্রহে অবতরণকারী প্রথম মানুষও আমি।’

‘আমি, আমরা—আমরা মঙ্গল গ্রহের বাসিন্দা,’ উত্তর দিল উরসিয়া।

এডিথ বিশ্বাস করতে পারলেন না একজন ভিনগ্রহবাসীর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। বিজ্ঞানীরা এত যুগ ধরে গবেষণা করছেন, অথচ মঙ্গলে তাঁরা কোনো প্রাণের সন্ধান পাননি। এটা কীভাবে সম্ভব? কিন্তু তিনি তাঁর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে তাঁকে বিয়ে করার চিন্তাও করে ফেলেছেন। কারণ শিগগিরই মানুষ মঙ্গলে বাস করবে। সব মিলে তাঁর জন্য, সবার জন্যই এটি ভালো কিছুই বয়ে আনবে।

এডিথ এবার সে কথা পাড়লেন। উত্তরে উরসিয়া বললেন, ‘এটা সম্ভব নয়। মানুষ প্রতারণা করতে সিদ্ধহস্ত। তারা দুর্বল বাসিন্দাদের শাসন করে। মঙ্গলে এসেও নিশ্চয়ই একই কাজ করবে। সুতরাং মঙ্গলবাসীরা মানুষকে মঙ্গলে থাকতে দেবে না। তাই আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না।’

এডিথ হতাশ হলেন। তাঁকে বোঝাতে চাইলেন। মঙ্গলযাত্রাকে বৃথা হতে দিতে পারেন না তিনি। কিন্তু উরসিয়াকে বোঝানো সম্ভব হলো না। এডিথ নভোযানে সংকেত পাঠানোর চেষ্টা করছেন। নভোযানে আছেন প্রকল্প পরিচালক মাইকেল হপস। তিনি রাডারে সংকেত পর্যবেক্ষণ করছিলেন।

রাডার: ট্র্যাকিং আলসেট-১০১। সংযোগ বিচ্ছিন্ন…

লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম