বই পড়ে কিছু মানুষ।
কাগজে ছাপা পুরোনো বই পড়ে।
শুনে পিউমা টাউনে গিয়েছিল রেড।
তেমন একজন মানুষকে দেখতে।
মানুষটা থাকেন ডাউন টাউনে। এক শূন্য দুই সাত নম্বর বিল্ডিংয়ে। পুরোনো এক ভিএফ-টু রোবট এখনো এই বিল্ডিংয়ের রিসেপশন দেখে। রেডকে দেখে সে বলল, ‘মসিয়ো—?’
রেড বলল, ‘রেড।’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট। বিস্মিত চোখ করে বলল, ‘থ্রেড?’
রসিকতা করছে। একমাত্র পুরোনো কোনো ভিএফ-টু রোবটই এ রকম বোকা বোকা রসিকতা করতে পারে।
বিরক্ত রেড বলল, ‘ব্যাড।’
নির্বিকার রোবট বলল, ‘মসিয়ো থ্রেড, আপনি কি নিশ্চিত, আপনি মসিয়ো তারফুর সঙ্গে দেখা করতে চান?’
‘মসিয়ো তারফু না মসিয়ো হোয়াইট। বই পড়েন।’
‘বই করেন? পুরোনো দিনে সিনেমাকে বই বলত মানুষ, নথি আছে। অমুক নায়ক, তমুক নায়িকার বই। না, বই করেন এমন কোনো মসিয়ো কর্ভাস এই বিল্ডিংয়ে থাকেন না মসিয়ো রেড।’
মসিয়ো কর্ভাস! ইনি আবার কে?
কানে কম শোনে! শর্ট টার্ম মেমোরি লস হয়! রোবটের! কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন জিনিস বাবা রে! সব সম্ভব। তবে মসিয়ো হোয়াইটের অবস্থান ঠিকমতো বলে দিতে পারল যন্ত্রটা।
ডেস্কের নিওফোন বাজল। রোবট বলল, ‘মসিয়ো থিও, আপনি নিশ্চয় মেঘ দেখছেন এখন। সাত শ আট দিন পর দানবমেঘ কিউমুলো নিমবাস আবার দেখা যাচ্ছে। এদিকে একজন মসিয়ো ইয়েলো মাত্রই রিসেপশনে উপস্থিত হয়ে বলছেন, আপনি তাকে দেখা করতে বলেছেন। এই সময় আসতে বলেছেন। তা–ই যদি হয়ে থাকে মসিয়ো মার্ফি, আপনি কি মসিয়ো শ্যঁপাকে সঙ্গে নিয়ে কিউমুলো নিমবাস মেঘ দেখবেন? নাকি?’
বলে লাইন কেটে দিল রোবট। রেড অনর্থক না রেগে বলল, ‘নির্ভেজাল রোবট ভাইসাহেব, ইয়েলো বা শ্যঁপা না, আমি রেড।’
‘আমি বলিনি আপনি মসিয়ো ব্লেড।’
‘আরে মুশকিল! আমি রেড। আর ই ডি। রেড। রেড।’
‘মসিয়ো...ব্লেড? রেড। রেড। মসিয়ো রেড।’
‘হ্যাঁ-এ এ-এ, রেড।’
‘বুঝতে পেরেছি। বুঝতে পেরেছি। দুঃখিত। দুঃখিত। বিল্ডিংয়ের অভ্যর্থনা সেলের পক্ষ থেকে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করা যাচ্ছে। আমি কানে কম শুনি, মসিয়ো রেড। শর্ট টার্ম মেমোরি লসও খুব হচ্ছে ইদানীং। কী করব, চিন্তা করে পাই না।’
কানে কম শোনে! শর্ট টার্ম মেমোরি লস হয়! রোবটের! কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন জিনিস বাবা রে! সব সম্ভব। তবে মসিয়ো হোয়াইটের অবস্থান ঠিকমতো বলে দিতে পারল যন্ত্রটা।
গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে লিফটে আর কেউ উঠল না। রেড একা। দুই শ তিয়াত্তরতম ফ্লোর থেকে দুটি মেয়ে উঠল। আঠারো–উনিশ বছর হবে বয়স। লম্বু মেয়েটার চুল নীল রঙের। কম লম্বু মেয়েটার চুল পাটকিলে রঙের। তারা বারো শ তেরোতম ফ্লোরে নামবে। রেড বলল, ‘হাই, আমি রেড।’
তারা বলল, ‘হাই।’
লম্বু বলল, ‘আমি ভায়োলেট।’
কম লম্বু বলল, ‘আমি অ্যাম্বার।’
এরা এই বিল্ডিংয়ে থাকে এবং মসিয়ো হোয়াইটকে দেখেছে। অদূরের সাবওয়েতে নিয়মিত দেখে। প্রতি রোববারে মসিয়ো হোয়াইট কান্ট্রি সাইডে যান বইয়ের ব্যাগ নিয়ে। গল্প পড়ে শোনান গাঁয়ের ছেলেপুলেদের।
অ্যাম্বার বলল, ‘আমি তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম।’
ভায়োলেট হি হি করে হাসল, ‘অ্যাম্বার বই পড়ে না বলে মসিয়ো হোয়াইট তাকে বিয়ে করেননি। সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছেন।’
‘তুমি বই পড়ো?’ রেড বলল।
ভায়োলেট বলল, ‘না। কাগজের বই যে এখনো আছে এবং কেউ পড়ে, মসিয়ো হোয়াইটকে না দেখলে এটাকে আমরা বানোয়াট কথা মনে করতাম।’
রেড বলল, ‘অ। মসিয়ো হোয়াইট সত্যি বই পড়েন? তোমরা দেখেছ?’
অ্যাম্বার বলল, ‘আমি সব সময় দেখি।’
‘সব সময়?’
‘যদি আমি চাই দেখতে।’ অ্যাম্বার হাসল।
রেড বলল, ‘তুমি যদি চাও?’
‘হ্যাঁ, মসিয়ো রেড। উনি এখন কী করছেন বলব?’
‘কে?’
‘মসিয়ো হোয়াইট।’
‘বই পড়ছেন।’
‘ভালো অনুমান। হি হি হি! দুঃখিত, মসিয়ো রেড, ভালো অনুমান হলেও ভুল অনুমান। মসিয়ো হোয়াইট এখন বই পড়ছেন না, বই দেখছেন। সৃষ্টিশীল রোবট ডিপার-সিক্সের ড্রইংয়ের বই। হি হি হি!’
‘তুমি কি অলোকদৃষ্টিসম্পন্ন?’
নিয়ম রক্ষা করে যাবতীয় তথ্য রোবট সাহেবকে জানান দিল রেড। রোবট সাহেব বলল, ‘মসিয়ো হোয়াইট জানাচ্ছেন মসিয়ো ইন্ডিগোর সঙ্গে আগে থেকেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা আছে তার।
‘জানি না, মসিয়ো রেড। উনি ড্রয়িংয়ের বইটা রেখেছেন। ডিপার-সিক্সের ড্রয়িং দেখে যারপরনাই বিরক্ত হয়েছেন। অ্যাবস্ট্রাক্ট ড্রইং। তুই রোবট! তুই অ্যাবস্ট্রাক্ট ড্রইংয়ের কিছু বুঝিস? হি হি হি! আরও কিছু বই আছে টেবিলে। এই একটা বই উনি ওঠালেন। সাইকো থ্রিলার। ইপিট্রা সিনড্রোম। কলোনি সভ্যতার উষালগ্নের বেস্টসেলার বই। হি হি হি!’
রেডও হাসল। কিছু সত্যি কিছু বানিয়ে বললেও কথার ওস্তাদ অবশ্যই অ্যাম্বার। এখান থেকে মসিয়ো হোয়াইটকে দেখতে পাচ্ছে সে, মসিয়ো হোয়াইট এখন সাইকো থ্রিলার পড়ছেন, অবশ্যই বানানো। আবার ‘ইপিট্রা সিনড্রোম’ বই আছে সত্যি। ইয়ুল মাইনরের লেখা পেপারব্যাক সাইকো থ্রিলার। রূপান্তরিত আর্থার দ্বিতীয় যুগের প্রচণ্ড প্রভাবশালী লেখক ইয়ুল মাইনর। তার ‘ইপিট্রা সিনড্রোম’ ছিল সর্বকালের সেরা বেস্টসেলার। কাগজের বইয়ের যে সর্বকাল। এ কথা অ্যাম্বার কী করে জানল?
কাগজের বই–সম্পর্কিত যাবতীয় নথি বহু আগেই ডিলিট করে দিয়েছে জেড-আই। কেন্দ্রীয় কম্পিউটার।
কৌতূহল মিটল না রেডের। বারো শ তেরোতম ফ্লোরে নেমে গেল তারা। রূপবতী ভায়োলেট ও রূপবতী মিষ্টি অ্যাম্বার। এরা সত্যি এই বিল্ডিংয়ে থাকে? ডাউন টাউনের বাসিন্দা সত্যি? রেড সার্চ দিয়ে দেখল। অ্যাম্বার। ভায়োলেট। কোনোই নথি পাওয়া গেল না। হাওয়ায় ওড়া কথা তবে সত্যি। জেড-আই নজরদারি করতে পারে না, এমন কেউ কেউ তবে আছে আর্থায়। তেমন দুজনের সঙ্গে তার দেখা হয়ে গেছে, অবিস্মিত থেকে পারল না রেড।
সতেরো শ বাইশতম ফ্লোর। সাত দুই শূন্য এক নম্বরে থাকেন মসিয়ো হোয়াইট। লিফট থেকে নেমে আবার হুজ্জতে পড়তে হলো রেডকে। কথা বলতে হলো নির্বুদ্ধিমান আরেক ভিএফ-টু রোবটের সঙ্গে।
‘মসিয়ো—?’
‘রেড।’
‘মসিয়ো রেড, এখানে কী?’
নিয়ম রক্ষা করে যাবতীয় তথ্য রোবট সাহেবকে জানান দিল রেড। রোবট সাহেব বলল, ‘মসিয়ো হোয়াইট জানাচ্ছেন মসিয়ো ইন্ডিগোর সঙ্গে আগে থেকেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা আছে তার। মসিয়ো ইন্ডিগো এখনো আসেননি, তাতে কী? মসিয়ো হোয়াইটের সব সময়ই এক কথা। কখনো দুই কথা হয় না।’
‘তিন কথা হয়।’
‘তিন কথা হয়? সত্যি তিন কথা হয়?’
মহাচিন্তায় পড়ে গেল রোবট সাহেব। এক কথা কী করে তিন কথা হয়?
রেড বলল, ‘আমি ইন্ডিগো রেড।’
ইন্ডিগো রেড হয় না কখনো। ব্লু হয়। ইন্ডিগো ব্লু।
রোবট সাহেব বলল, ‘এক কথা তিন কথা হয়?’
রেড বলল, ‘মসিয়ো হোয়াইট জানাচ্ছেন।’
‘এক কথা তিন কথা হয়?
‘তিন কথা এক কথা হয়।’
‘এক কথা তিন কথা হয়? তিন কথা এক কথা হয়?’
‘মসিয়ো বই। হ্যাঁ। তুমি আমাকে এটা ডাকতে পারো রেড। বই হলো চূড়ান্ত। কিছু মানুষ এখনো কাগজের বই পড়ে কেন? রেড? আর্থার জনসংখ্যা এখন কমবেশি নব্বই মিলিয়ন।
এই সব বোকা রোবট কেন যে বানানো হয়েছিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট। এত দিন পর এই হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিখাদ নমুনা। হ্যাহ্!
সাত দুই শূন্য এক।
মসিয়ো হোয়াইটকে দেখে মন ভরে গেল রেডের। মস্ত তামাটে একজন মানুষ। প্রাচীন জলদস্যুদের মতো দাড়ি–গোঁফওয়ালা। চোখের মণি সবুজ, নাক লম্বা। রেডকে দেখে হাতের বই রেখে উঠলেন, ‘আশা করি তুমি রেড?’
রেড হাসল এবং নতমস্তক হলো, ‘মসিয়ো হোয়াইট।’
‘বসো তুমি, রেড। এখানে বসো।’
রেড বসল। টেবিলে বইটা দেখল, যেটা মসিয়ো হোয়াইট মাত্র হাত থেকে রেখেছেন—ইপিট্রা সিনড্রোম।
মসিয়ো হোয়াইট বললেন, ‘তোমাদের শহরে আমি বহু আগে একবার গিয়েছিলাম। উখিং ফুল ফোটে তোমাদের পাহাড়ে। এই ফুল বড় মনোরম। আমি আমার বন্ধু অকারের মোষের বাথানে ছিলাম আট দিন।’
রেড বিনীতভাবে বলল, ‘মসিয়ো অকার আমার পরদাদা হন।’
‘কী বলো তুমি! কী আশ্চর্য! জুত করে বসো দেখি। তুমি অকারের বংশধর রেড! চমত্কার এটা! চমত্কার! চমত্কার!’
জমে গেল।
কত কথা।
মসিয়ো হোয়াইট তার বন্ধু অকারের স্মৃতিচারণা করলেন। আর্থা গ্রহের বিলুপ্ত দুই মানবসভ্যতার কথা বললেন। মানুষের প্রাচীনতম বসতি দূরের পৃথিবী গ্রহের কথা বললেন।
রেড বলল, ‘অধ্যাপক ব্রাউন এবং আপনি যৌথভাবে একটা বই লিখেছিলেন, পৃথিবীর অবলুপ্ত মানবসভ্যতা। বইটা আমাদের পারিবারিক পাঠাগারে আছে। আমার দাদা মসিয়ো ক্যাডকে আপনি সই করে উপহার দিয়েছিলেন।’
‘আমার স্মরণে আছে প্রিয় রেড। অকারের ছেলে ক্যাড, বই পড়ত সে। অকারণে পড়ত না। তুমি পড়ো। কেন?’
কেন?
রেড কেন বই পড়ে? মসিয়ো হোয়াইট নিশ্চয় উত্তর চাননি।
আরেক ভিএফ-টু রোবট দুই মগ যোকো নিয়ে উপস্থিত হলো।
মসিয়ো হোয়াইট বললেন, ‘রাখো, দূর হও।’
নিরীহ রোবট যোকোর মগ রেখে বিনা বাক্যব্যয়ে দূরীভূত হলো।
আর্থার সেরা পানীয় যোকো। অক্ষতিকর পরাবাস্তব ঝোঁকে নিয়ে যায়।
মসিয়ো হোয়াইট যোকোর মগে চুমুক দিয়ে বললেন, ‘একমাত্র যোকোই এখনো চমত্কার, বলো?’
রেডও যোকের মগে চুমুক দিয়ে বলল, ‘চমত্কার মসিয়ো হোয়াইট।’
মসিয়ো হোয়াইট বললেন, ‘এই যোকো শিন অন্তরীপের। কুগার কেবিন শহরে আমার কিছু প্রাচীন বন্ধু আছেন। তাদের একজনের মেয়ে অ্যাম্বার। এই যোকো সে এনে দিয়েছে।’
‘অ্যাম্বার?’
‘অ্যাঁ? হ্যাঁ। হা-হা-হা! তুমি তাকে তোমাদের মোষের বাথানে নিয়ে যেতে পারো। হা-হা-হা! হা-হা-হা!’
ভুবনভোলানো হাসি মসিয়ো হোয়াইটের। তিনি কোন অ্যাম্বারের কথা বলছেন? লিফটের রূপবতী?
আপ্লুত হলো রেড।
যোকোর প্রভাব?
রেড বলল, ‘মসিয়ো বই—।’
‘মসিয়ো বই। হ্যাঁ। তুমি আমাকে এটা ডাকতে পারো রেড। বই হলো চূড়ান্ত। কিছু মানুষ এখনো কাগজের বই পড়ে কেন? রেড? আর্থার জনসংখ্যা এখন কমবেশি নব্বই মিলিয়ন। তাদের মধ্যে কাগজের বই পড়ে কতজন? দুই শ ছয়জন। সমগ্র আর্থায়। চিন্তা করতে পারো, তুমি অকারের বংশধর?’
রেড বলল, ‘মসিয়ো হোয়াইট, আপনি পুরোনো থ্রিলার পড়েন?’
‘গোগ্রাসে হে।’
‘রোবটদের ড্রইংয়ের বই দেখেন?’
হেসে ফেললেন মসিয়ো হোয়াইট, ‘অ্যাম্বার তোমাকে পেয়েছিল লিফটে, তিন চোখওয়ালা পাগলি।’
‘তিন চোখ!’
‘হ্যাঁ। কপালে একটা চোখ আছে অ্যাম্বারের। লম্বালম্বি।’
‘আমি দেখিনি।’
‘দেখা যায় না। সে শুধু দেখতে পায়। যা ভাবে, তা দেখতে পায়।’
‘সে কি কুগার কেবিন শহরবাসী আপনার প্রাচীন বন্ধুর মেয়ে, মসিয়ো হোয়াইট?’
‘অবশ্যই। তবে সে এখন এই পিউমা শহরে, এই ডাউন টাউনে, এই বিল্ডিংয়ে থাকে।’
বুকের রক্ত ছলকালো রেডের। মসিয়ো হোয়াইট বলেছেন, অ্যাম্বারকে তাদের মোষের বাথানে নিয়ে যেতে পারে সে। তিন চোখওয়ালা রূপবতী অ্যাম্বার। কী দারুণ।
রেড বলল, ‘অ্যাম্বার বই পড়ে না বলে আপনি তাকে বিয়ে করেননি?’
উচ্চ স্বরে হাসলেন মসিয়ো হোয়াইট, ‘হা হা হা! হা হা হা!’
একুশ সেকেন্ড ধরে হাসলেন।
‘আমি অ্যাম্বারের এক পরদাদি ভিরিডিয়ানাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। তাকে যদি তুমি দেখতে! হা হা হা!’
যোকোর মগে আবার চুমুক দিল রেড।
শিন অন্তরীপের যোকো আরও ধরল?
পরাবাস্তব বোধ জারিত হচ্ছে। মসিয়ো হোয়াইট কি পরাবাস্তব? পরামানুষ? তার পরাবাস্তব কথা শুনল রেড, ‘আবার বলি। কিছু মানুষ কেন বই পড়ে? কাগজের বই? গ্রহান্তরবাসী অতিবুদ্ধিমান মানুষের বর্তমান অনড় বাস্তবতার কিছুই তারা অস্বীকার করতে পারে না বলে? তর্কে বহুদূর। নয় কি? পড়তে পড়তে বই হয়ে যায় তারা।’
‘বই হয়ে যায়?’ রেড বলল।
‘তুমি বই পড়ো রেড, তুমি জানো। বই পড়ে আর্থা গ্রহের কেউ সত্য অনুসন্ধান করে না আর। সত্য কোনটা, নির্ণয় জটিল হয়ে গেছে। যারা বই পড়ে, তারা জানে তারা কেন বই পড়ে। নগণ্যসংখ্যক রেড, ব্লু, হোয়াইট। বই পড়ে তারা বই হয়ে যায়। জড় হয়ে যায়। কেন? তুমি জানো? কেউ জানে না। ল্যাবে মানুষের জিন ম্যাপিং করা হয় এখন, তা–ও কিছু মানুষ কেন সিরিয়াল কিলার হয়ে যায় এখনো? কিছু মানুষ কেন নিজে মরে যায়? সে রকম ধরো। কিছু মানুষ অকারণে বই হয়ে যায়।’
রেড বলল, ‘হ্যাঁ। যা ঘটে সবকিছুরই নির্দিষ্ট কারণ থাকতে হবে কেন? কে এটা ঠিক করে দিয়েছে? কেউ দেয়নি—।’
মসিয়ো হোয়াইট বললেন, ‘তবে? দেখো প্রিয় রেড।’
রেড দেখল।
কী দেখল?
অতি ধীরে অতি ধীরে গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছেন মসিয়ো হোয়াইট। সাদা রঙের গুঁড়ো। সেই গুঁড়ো অতি ধীরে সংকুচিত হচ্ছে, শূন্যে জমায়েত হচ্ছে এবং আরেক রূপ নিচ্ছে।
অতি ধীরে একটা বইয়ে রূপান্তরিত হয়ে গেলেন মসিয়ো হোয়াইট। পুরোনো বই, পুরোনো ভাষার। ধরে দেখল, তবে কিছু পাঠোদ্ধার করতে পারল না রেড। দরকার নেই আর পাঠোদ্ধারের। সে–ও বই হয়ে যাবে একদিন। তবে তার সঙ্গে তখন অ্যাম্বার মেয়েটা থাকলে বিশেষ ভালো হয় আরকি! রূপবতী মিষ্টি অ্যাম্বার। আহ্! যদি একটা বই হতো সে!