সুডোকুর গ্র্যান্ডমাস্টার

মৈত্রী তার ঘরেই ছিল। দরজাটা ভেতর থেকে আটকানো। সে চায় না কেউ ঘরে প্রবেশ করুক। গভীর মনোযোগ দিয়ে সুডোকু সমাধান করছিল মৈত্রী। সুডোকুর কঠিন ধাঁধা সমাধান করতে সে পছন্দ করে। কিন্তু একটি সুডোকু সমাধান করতে পারছে না কিছুতেই। বারবার চেষ্টা করেও সফল হতে পারছে না। সে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। কষ্ট হচ্ছে। চোখ জলে ভরে ওঠে। কিন্তু হার মানবে না সে। আবার চেষ্টা করবে। যতক্ষণ সমাধান না হবে চেষ্টা করে যাবে ততক্ষণ। হঠাৎ দরজার বাইরে একটি ভয়ঙ্কর শব্দ শুনতে পেল সে। ভয়ে তার শরীর কঠিন হয়ে গেল।

চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল, ‘কে আছে ওখানে’? কোনো সাড়াশব্দ নেই। হার্টবিট বেড়ে গেল। কিছুক্ষণ নীরবতা। আর কোনো শব্দ শোনা গেল না। ভাবলো হয়তো তার শ্রুতিভ্রম। সে আবার সুডোকুতে মন দিল। হঠাৎ একটি কন্ঠ তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘কি করছ?’

এবার সে ভয়ে চিৎকার করে উঠল। কাঁদতে শুরু করেছে মৈত্রী। জিজ্ঞেস করল,

-         কে তুমি?

-         আমি সুডোকু মাস্টার।

-         সুডোকু মাস্টার?

-         হ্যাঁ, শুধু মাস্টার নই, আমি সুডোকুর গ্র্যান্ডমাস্টার।

-         ওহ, কিন্তু তোমার নাম কী?

-         আমার নাম জেনে তোমার কী দরকার?

-         আমি তোমায় কী বলে ডাকবো? তোমার মুখ দেখাও।

-         ঠিক আছে। আমি তোমাকে নাম বলব এবং আমার মুখও দেখাব।

-         নাম কী তোমার?

-         আমার নাম তাকাশি।

-         তুমি কোথা থেকে এসেছ?

-         আমার বাস অনেক দূরের গ্যালাক্সিতে। নাম পিনহুইল গ্যালাক্সি।

-         তুমি এখানে এলে কীভাবে?

-         উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্থান এবং সময়ের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করতে পারি আমরা।

-         বুঝলাম। এখন তোমার মুখ দেখাও।

তাকাশি তার কাছে এল। ভিনগ্রহীকে দেখেই ভয় পেল মৈত্রী। তাকাশিকে দেখতে একটি রোবটের মতো। দুটি চাকা আছে। মৈত্রী তাকাশিকে জিজ্ঞেস করল,

-         তুমি কি আমাকে সুডোকু সমাধানে সাহায্য করতে পারবে? কীভাবে দক্ষতার সঙ্গে আরও কম সময়ে সমাধান করা যায়?

-         অবশ্যই। আমি তোমাকে কিছু কৌশল শিখিয়ে দেব। কিন্তু তোমার প্রচুর অনুশীলন করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, তোমার ইচ্ছা থাকতে হবে।

মৈত্রি সঙ্গে সঙ্গে মাথা নেড়ে সায় দিল। তাকাশি তাকে সুডোকু সমাধানের কৌশল শেখাতে শুরু করল। মনযোগ দিয়ে তাকাশির সব কথা শুনল। ধীরে ধীরে বুঝতে চেষ্টা করল কথাগুলো। কিন্তু কিছুক্ষণ শোনার পর মৈত্রী আর বুঝতে পারছে না। জটিল লাগছে তাকাশির কথাগুলো। মৈত্রী যে আর মাথায় নিতে পারছে না, তা বুঝতে পারে তাকাশি। সে মৈত্রীর মাথায় একটি হাত রাখে। সঙ্গে সঙ্গে মৈত্রীর মনে হলো, তার শরীরে যেঙ বিদ্যুৎ খেলে গেল। ধপাস করে পরে গেল মাটিতে। জ্ঞান হারিয়েছে সে। কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরল। জ্ঞান হারানোর আগের ঘটনা তার মনে পড়ল। ভয়ে কাপতে শুরু করে মৈত্রী। দুচোখ বন্ধ করে চিৎকার করে ওঠে।

বাইরে পায়ের আওয়াজ শোনা যায়। মৈত্রীর চিৎকার শুনে কেউ দৌড়ে আসছে। মৈত্রীর মা। জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে মৈত্রী? চিৎকার করছো কেন?

মৈত্রী গলা দিয়ে কোনো কথা সরল না। শুধু আঙ্গুল তুলে সামনের দিকে দেখাল। কিন্তু তার সামনে কিছুই নেই। মৈত্রীর মা তাকে খাটে শুইয়ে দিলেন। ঘুমে দু চোখ বন্ধ হয়ে গেল মৈত্রীর।

ঘুম ভেঙেছে তার। ভয়ঙ্কর এক দুঃস্বপ্ন দেখে ধড়মড় করে যেগে উঠেছে। স্বপ্নে তাকাশি তাকে বিদায় জানাচ্ছে। পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে তাঁর গ্রহে। না, মৈত্রী আর ভাবতে চায় না। হাতমুখ ধুয়ে আবার বসছে সুডোকু মেলাতে।

মৈত্রী অবাক হয়ে গেল। যে সুডোকু মেলাতে গিয়ে নিজের চুল নিজে ছেঁড়ার জোগাড় হয়েছিল, সেই সুডোকু পানির মতো সহজ মনে হচ্ছে। তার মাথার মধ্যে যেন উত্তরটা সেট হয়ে আছে। ফাঁকা ঘরে শুধু সংখ্যাগুলো বসানোর অপেক্ষা।

লেখক: শিক্ষার্থী, কাজেম আলী হাই স্কুল এন্ড কলেজ, চট্টগ্রাম