আমার এখনো মনে আছে সেদিনের কথা, যেদিন রাতে আমি মা–বাবার সঙ্গে রাগ করে ছাদের একটা বেঞ্চের ওপর বসে ছিলাম। আসলে মা–বাবা আমাকে সচরাচর সে রকম কিছুই বলেন না, কিন্তু সেদিন একটু বেশিই রাগ করেছিলেন আমার ওপর। লেখাপড়ার চেয়েও আমার বিজ্ঞানের প্রতি ঝোঁক বেশি। তাই বকাঝকা খেয়ে মন খারাপ করে বসে ছিলাম ছাদে। ছলছল চোখে আকাশে তাকাতেই দেখি একটা অদ্ভুত নীল আলো। মনে হয় প্লেনের আলো হবে। কিন্তু পেছনের ঝোপ থেকে কেমন একটা অদ্ভুত ঘড়ঘড় আওয়াজ আসছিল। ভাবলাম, একবার গিয়েই দেখব নাকি? কিন্তু এত রাতে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? তবে যা–ই ভাবি না কেন, নেমেই পড়লাম।
যা ভেবেছিলাম ঠিক তা–ই! গন্ডগোলটা পেছনের ঝোপের দিকেই হয়েছে। আর একটু এগোতেই দেখলাম ধোঁয়ায় ভরে গেছে ঝোপটা। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি ধোঁয়ার উৎসটাও খুঁজে পেলাম। একটা ভাঙাচোরা এলিয়েন স্পেসশিপ, যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলে ইউএফও।
দৌড়ে ছুটতে চেয়েছিলাম। হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম। কী যেন একটা পায়ে বাজল। তাকিয়ে দেখি, একটা অদ্ভুত ছয় পা–ওয়ালা এলিয়েন! ভয়ে একটা চিৎকার দিয়েই বসলাম। দেখে মনে হচ্ছে এলিয়েনটাও আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছিল।
তাই সাহস ফিরে পেলাম এবং আমি চুপ করে গেলাম। খানিক পর ও মুখ খুলল।
—তুমি কে?
—অহিন হাওলাদার। আর তুমি?
—X204।
—কী! ও আচ্ছা।
—প্লিজ, আমায় একটা হেল্প করবে?
—বলো কী করতে পারি?
—আমার স্পেসশিপটা খারাপ হয়ে গেছে। আমার গ্রহে খবর দিতে হবে।
—তো, আমি কী করতে পারি?
—আসলে গ্রহে সিগন্যাল পাঠাতে একটা টিটিএম লাগবে।
—আমি এটা কোথায় পাব?
—না না, এটা আমার কাছেই আছে কিন্তু এটা অ্যাকটিভ হতে ৩০ দিন লাগবে। এই কটা দিন তুমি কোথাও আমাকে থাকার একটা ব্যবস্থা করে দাও।
—বেশ, তবে এই কটা দিন তুমি আমার সঙ্গেই থাকবে। কিন্তু হ্যাঁ, মা–বাবা যেন টের না পান।
—ওকে।
এই ৩০টা দিন কত স্মৃতিই না জমে ছিল ওর সঙ্গে। আস্তে আস্তে আমরা একে অপরের বন্ধু হয়ে উঠলাম। ওসব X204 বলে আমার ওকে ডাকতে ইচ্ছে করছিল না। তাই আমি ওর একটা নতুন নাম দিলাম, ‘রিয়ানো’। ৩০ দিন পর ও আবার আমাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল। এখনো আমার ওকে মনে পড়ে। কে জানে কেমন আছে ও? আই মিস ইউ রিয়ানো। ছলছল চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা নীল আলো। কিন্তু ওটা সত্যিই প্লেনের আলো। তাহলে পেছনের ঝোপ থেকে আসা ওই ঘড়ঘড় আওয়াজটা কিসের?
লেখক: শীক্ষার্থী, ষষ্ঠ শ্রেণি, বরিশাল শহীদ আরজু মনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়