ফুটবল যুদ্ধ

এদিকে আরেক ঝামেলা বেধে গেছে দলের প্রধান মিডফিল্ডার আরিফুলকে নিয়ে। তার ডিএনএর সঙ্গে মেশানো হয়েছে গরুর জিন।

২০৩৮ সাল। চার বছর ঘুরে আবার এসেছে বিশ্বকাপ। ফুটবল জ্বরে কাঁপছে বিশ্ব। কাঁপছে বাংলাদেশও।

তা, বাংলাদেশ ফুটবল জ্বরে সেই প্রাচীনকাল থেকেই কাঁপছে। ডিয়েগো ম্যারাডোনা যেবার পায়ের বদলে হাত ব্যবহার করে খেলা শুরু করেছেন, সেবার থেকেই বাংলাদেশ ফুটবলের ভক্ত। তবে এবারের উত্তেজনা কিছুটা ভিন্ন। সেই ২০২০ সালের দিকেই মানুষ ক্রিসপার প্রযুক্তি ব্যবহার করে জিন বদলে দেওয়ার উপায় আবিষ্কার করেছে। জিন বদলের এই প্রযুক্তি কাজে লেগেছে মহামারি থেকে চিকিৎসা, বিজ্ঞানচর্চা থেকে কৃষিসহ নানা ক্ষেত্রে। আর সব ক্ষেত্রের মতোই এই প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে ফুটবলেও। গত দুই বছর ধরে শুরু হয়েছে জিন বদলে দিয়ে উন্নত মানের ফুটবলার গড়ে নেওয়ার রীতি। সেই রীতির হাত ধরে বিশ্বকাপে পা রাখার সম্ভাবনা উঁকি দিয়েছিল বাংলাদেশের আকাশে চার বছর আগের বিশ্বকাপেই। তবে সে বার হয়নি। এবার হয়েছে।

ফুটবল বিশ্বকাপের এবারের স্বাগতিক দেশ জাপান। জাপানিদের প্রযুক্তি দারুণ টেকসই। কিন্তু বাংলাদেশের জিনজিরার প্রযুক্তির সঙ্গে তারা পারেনি। তাদেরকে হারিয়ে প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ জিতে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় বাছাইপর্ব পেরিয়ে বাংলাদেশ এবার বিশ্বকাপে।

জাপান যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুরো দেশ। দলে দলে মানুষ কিনছে বিশ্বকাপের টিকিট। আর বাংলাদেশ ফুটবল ইন্সটিটিউটের প্রধান হন্তদন্ত হয়ে হাজির হয়েছেন দেশের সেরা বেসরকারী ফুটবলার গবেষণাগার—পেনাল্টি কাপ-এ।

পেনাল্টি কাপের প্রধান বিজ্ঞানী ভদ্রলোকের বয়স সত্তরের মতো। পান চিবুচ্ছেন। ফুটবল ইনস্টিটিটিউটের প্রধান রফিক শিহাব তাঁর সামনের চেয়ারে বসে আছেন। তাঁরা মাথা খারাপের মতো দশা হয়েছে। অনেক টাকা খরচ করে জিন এডিট করে যে গোলকিপার বানানো হয়েছে, সে ঠিকভাবে গোল বাঁচাতে পারছে না। ব্যাঙের মতো লাফ দিয়ে বল হাতে পাওয়ার আগেই পড়ে যাচ্ছে নিচে। ব্যাঙের ডিএনএ মেশানোর কারণেই সম্ভবত এই অবস্থা। এই বুদ্ধি দিয়েছেন তাঁর সামনে বসে থাকা বিজ্ঞানী ভদ্রলোক। তাঁর হাইপোথিসিস ছিল, ব্যাঙের ডিএনএ-ই গোলকিপারের ডিএনএর সঙ্গে মেশানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। ফিফার রেগুলেটরি টিম আইন করেছে, পাখির জিন মেশানো যাবে না। সবাই উড়ে উড়ে খেলতে শুরু করলে ও জিনিস তো আর ফুটবল থাকে না, এই হলো তাদের যুক্তি। তাদের যুক্তি ঠিকই আছে। খেলাটা তো আর কুইডিচ না!

এদিকে আরেক ঝামেলা বেধে গেছে দলের প্রধান মিডফিল্ডার আরিফুলকে নিয়ে। তার ডিএনএর সঙ্গে মেশানো হয়েছে গরুর জিন। কষে যেন লাথি মারতে পারে, সে জন্যই এই প্রচেষ্টা। তা ছাড়া গরুর জিনোম রহস্য বাংলাদেশ ছাড়া আর কেউ উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি। এই তো সুযোগ!

কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি এই বিজ্ঞানীর দল। আরিফুল এখন মাঝে মাঝেই খেলার মাঝে মাঠে শুয়ে পড়ে ঘাস চিবুতে শুরু করছে। বলে লাথি মারার সময় খেলোয়াড় কাউকে সে লাথি মারলেই হয়েছে কাজ। তার পায়ের নিচের অংশে খুরের মতো শক্ত, পাথুরে আবরণ। ওই লাথি খেয়ে ইতিমধ্যে দলের দুজন খেলোয়াড় হাসপাতালে দিন কাটাচ্ছে। যাচ্ছেতাই অবস্থা!

রফিক শিহাব বললেন, ‘ভাই, এভাবে তো হচ্ছে না। আপনারা না পারলে বলেন, আমরা জিনজিরার ওদেরকে টেন্ডার দিয়ে দিই। ওদের প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছি। আপনারা সেই সুযোগটা এভাবে নষ্ট করবেন না, প্লিজ।’

বিজ্ঞানী ভদ্রলোক ফচ করে পিক ফেললেন পাশের ওয়েস্টবিনে। তারপর বললেন, ‘বিজ্ঞানে তো এ রকম হয়ই। এক-আধটু এক্সপেরিমেন্ট করে দেখতে হবে না! আরিফুলকে গবেষণাগারে নিয়ে আসেন। আমি দেখি, কী করা যায়। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের ডিএনএর কিছু অংশ মিশিয়ে দেব ভাবছি। তাহলে কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।’

‘এখনো আশা করলে কীভাবে হবে? আপনি তো কোনো ব্যাপারেই নিশ্চিত না!’

‘আমরা এখনো শিখছি।’

২০৩৮ সালের বিশ্বকাপটা বাংলাদেশ-ই জিতেছিল। কারণ, শেষ পর্যন্ত সেই বিজ্ঞানীর হাইপোথিসিস কাজ করেছে। বাংলাদেশের গোল কিপার ব্যাঙ আর বিড়ালের মিশ্র ডিএনএর কল্যাণে প্রচুর গোল সেভ করেছিল। আরিফুলের লাথি খেয়ে অনেকে হাসপাতালে গেলেও স্বেচ্ছায় লাথি না মারায় বাংলাদেশ খুব বেশি ফাউল খায়নি। এর সঙ্গে বাধ্য হয়ে জিনজিরার প্রযুক্তিরও খানিকটা সাহায্য নিয়েছে বাংলাদেশ। রানার্সআপ হয়েছে রাশিয়া। ওদের খেলোয়াড়দের ডিএনএতে কী কী যে দিয়েছে, সে রহস্য অনেক গবেষণা করেও উদ্‌ঘাটন করতে পারেননি মার্কিন কোনো বিজ্ঞানী। বর্তমানে পৃথিবীতে তাই নতুন প্রতিযোগিতা চলছে—ফুটবল রেস। উড়ো কথা শোনা যাচ্ছে, রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে না পেরে মার্কিনিরা যেকোনো দিন পারমাণবিক বোমা মেরে দিতে পারে। রাশানরাও নাকি হুমকি দিয়ে রেখেছে, ওরাও ছাড় দেবে না। এই দৌড়ে অবশ্য সবার চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। মেড ইন জিনজিরা বলে কথা!