দুঃস্বপ্ন

সকাল ছয়টা। মাত্র ঘুম ভেঙেছে নিক্সনের। চোখে ভয়ের ছাপ, ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে। পাশেই জুস হাতে দাঁড়িয়ে মিনিক্স। চল্লিশ শতকে মিনিক্সের মতো বন্ধু থাকা জরুরি। মিনিক্স আধুনিক রোবট। ওর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রখর। নিক্সন মিনিক্সকে বলে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা। মিনিক্স চট করে বলে দেয়, নিক্সন যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে, তা স্বপ্ন। ত্রিশ শতকের পর আর মানুষ স্বপ্ন দেখেনি। চল্লিশ শতকের মানুষের কাছে স্বপ্ন নিছক ধারণা।

কথাটা শুনে খানিক ঘাবড়ে যায় নিক্সন। বিছানা থেকে উঠে বসে। আপন মনে কী যেন ভেবে চলে। তারপর যায় বাবার কাছে। বাবাকে বলে, ক্লাসে একটি প্রজেক্ট জমা দিতে চায়, স্বপ্নসম্পর্কিত। তবে মানুষ এখন আর কেন স্বপ্ন দেখে না, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চায় বাবার কাছে।

বাবা তাঁকে বলে হাজার বছর আগের সেই দুঃস্বপ্নের গল্প। পৃথিবী থেকে আড়াই হাজার আলোকবর্ষ দূরের একটি গ্রহ নেফারিন। নেফারিনবাসী জ্ঞান-বিজ্ঞানে পৃথিবী থেকে অনেক এগিয়ে। ওদের কোনো আকার নেই। আছে শুধু অস্তিত্ব। তাদের দেহ দরকার। কিন্তু নিজেদের দেহ নেই। তাই মানুষ বা অন্য প্রাণীর দেহ দখল করে নেয়। তারপর সেটা ব্যবহার করে নিজেদের মতো করে।

অন্যদিকে পৃথিবীর মানুষেরাও কিন্তু পিছিয়ে নেই। পৌঁছে গেছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উঁচু শিখরে। সমস্যা তখন একটাই। নেফারিনদের নজর পড়েছে মানুষের দেহের ওপর। তারা মানুষের দেহ দখল করতে চায়। কিন্তু সেটা অসম্ভব। কারণ মানুষ মানসিকভবে অনেক শক্তিশালী। নেফারিনরা চেষ্টা করছে মানুষের দেহের দখল নেওয়ার। এ জন্য তারা তৈরি করে ড্রিমফিস নামে একটা যন্ত্র। যন্ত্রটি থেকে বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের তেজস্ক্রিয় রশ্মি বের হয়। সেই রশ্মির সাহায্যে নির্দিষ্ট তরঙ্গের মাধ্যমে মানুষের অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেই ড্রিমফিস ব্যবহার করে নেফারিনরা মানুষকে ভয়ংকর সব দুঃস্বপ্ন দেখায়। এতে মানুষ মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যায়। তখন নেফারিনরা সহজেই মানুষের দেহ দখল নিতে পারে।

এই ঘটনা ভাবিয়ে তোলে পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানীকে। তাঁরা অনেক ভেবে বের করেন, ড্রিমফিসকেই তাঁরা নেফারিনদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবেন। নেফারিনদের আকার নেই বলে সহজে মানুষের দেহ থেকে সরানো যাবে না। কিন্তু ড্রিমফিসের তরঙ্গের মাত্রা বাড়িয়ে মানুষের অবচেতন মনকে মানুষই আয়ত্ত করতে পারবে। হয়তো এর সাহায্যে নেফারিনদের দখলমুক্ত করা যাবে মানবদেহকে।

শেষমেশ মানুষ ড্রিমফিস তৈরি করতে সক্ষম হয়। এর সাহায্যে কাবু করে ফেলে নেফারিনদের। মানবদেহ মুক্ত হয় এলিয়েনদের হাত থেকে। কিন্তু ড্রিমফিসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মানুষ হারায় স্বপ্নের মতো সুন্দর অভিজ্ঞতা। তারা ভুলে যায় সুন্দর স্বপ্ন কিংবা দুঃস্বপ্ন দেখতে।

গল্পটা শেষে নিক্সনের বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। তবে তিনি এটা জানেন না মানুষের অবচেতন মন সুপ্ত অবস্থা থেকে আবার জাগতে শুরু করেছে। সেটারই প্রভাব এখন তাঁর ছেলের মধ্যে দেখা দিয়েছে। তিনি খুশি হন। বিশ্বাস করেন, মানুষ আবার স্বপ্ন দেখা শুরু করবে, সুখের সব স্বপ্ন।

লেখক: শিক্ষার্থী, এন কে এম হাইস্কুল অ্যান্ড হোমস, নরসিংদী