গ্রাহাম ক্রাকেস মৃত্যুশয্যায়। চোখ দুটোর দৃষ্টি অস্পষ্ট, আবছা ছাদের দিকে, আশ্বাসবাণীগুলো মনের ভেতর ঘুরেফিরে আসছে।
‘সব সম্ভাবনাই আপনার অনুকূলে,’ ডাক্তার বললেন। কেনেথের শরীরের নিচে শয্যাটা বেশ শক্ত শক্ত মনে হয়। স্প্রিং মনে হয় নমনীয়তা হারিয়েছে।
‘কোনো একদিন—’ ডাক্তারের গলাটা মনে হলো বহুদূর থেকে ভেসে আসছে, আর বড্ড যান্ত্রিক কণ্ঠ। ‘মেডিকেল সায়েন্স একদিন অনেক অনেক বেশি উন্নত হবে আপনাকে জাগিয়ে তোলার ব্যাপারে। আপনার হিমায়িত দেহের কোনো ক্ষতি হবে না।’ গলার স্বরটি আরও অস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ‘একদিন বিজ্ঞান আপনার দেহটি জাগিয়ে তুলবে এবং আপনি আবার জীবিত হয়ে উঠবেন।’
গ্রাহাম ক্রাকেসের মৃত্যু হয় খুব সহজ ভঙ্গিতে, তারপর তার দেহটি হিমায়িত করে রাখা হয়।
সে স্বপ্নে দেখল মায়ামি বিচ, চোখ মেলে তাকায়। অস্পষ্ট আলোয় তাকায় চোখ পিট পিট করে, দেখে বিছানার পাশে অপরিচিত ভদ্রলোক বসে আছে।
‘গুড মর্নিং,’ অপরিচিত ভদ্রলোক বললেন।
ক্রাকেস লক্ষ করে, ভদ্রলোকের বেশ বয়স হয়েছে। মাথায় বেশ বড় একটি টাক এবং সহাস্যময় চেহারা।
‘গুড মর্নিং,’ বন্ধুত্বপূর্ণ গলায় জবাব দেয় ক্রাকেস। ‘কানের দুলগুলো বেশ চমৎকার।’
‘ধন্যবাদ,’ ভদ্রলোক বললেন, ‘ওগুলো অ্যানটেনা।’
‘ও তা–ই?’
‘কানের লতিতে ট্রানজিস্টার রেডিও বসানো আছে।’
‘সত্যি?’
‘স্টোরিও।’
‘কী চমৎকার’, ক্রাকেস বলল, ‘বন্ধ করো কীভাবে?’
‘না, না,’ ভদ্রলোক বললেন, ‘কম কথা বলুন, প্লিজ।’
‘দুঃখিত,’ ক্রাকেস বলে, ‘বুঝতে পারিনি।’
‘সুন্দর আবহাওয়ায়...’
‘আমি বুঝতে পারছি না। আচ্ছা, ওরা কী কিছু করতে পেরেছে?’
‘হ্যাঁ করেছিল, অল্প সময়ের জন্য।’ বুড়ো ভদ্রলোক বললেন। ‘তবে আশা দিতে পারেনি।’
‘নানা জনের নানা মত ছিল নিশ্চয়ই?’
‘আমারও তেমন মনে হয়।’
‘হতাশাজনক।’ ক্রাকেস জানালার ভারী পর্দার দিকে তাকায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে জানালা ঝনঝন শব্দ করে ওঠে। ‘কী হলো?’ বলে সে। ‘গণ্ডগোল হচ্ছে?’
‘না।’ ভদ্রলোক বললেন, ‘সুপারসনিক পরিবহনের শব্দ।’ অন্য আরেকটি জানালার গ্লাস স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরে জায়গামতো যায়।
‘আমার মনে হয় আপনাদের এসব পরিবহন প্রচুর আছে।’
‘আসছে আর যাচ্ছে।’
‘আচ্ছা,’ গ্রাহাম ক্রাকেস জিজ্ঞেস করে, ‘এটা কোন সাল?’
‘২৮০০ সাল।
‘বেশ বেশ।’
‘একটা বছর অন্য বছরের মতো অনেকটা,’ ভদ্রলোক বললেন।
‘অর্থনৈতিক খবর কেমন?’ ক্রাকেস জানতে চায়। সে দেখে পর্দার ফাঁক দিয়ে সূর্য উঁকি দিতে শুরু করেছে।
কনুইয়ে ভর দিয়ে বসার চেষ্টা করে। এর ফলে দুর্বল বোধ করে সে।
‘দয়া করে নড়াচড়া করবেন না,’ ভদ্রলোক বললেন। ‘আপনার হার্ট ট্র্যান্সপ্লান্টের আগে একটা বিশ্রাম দরকার।’
‘ও!’ ক্রাকেস শুয়ে পড়ল। ‘আমার হার্টে কি কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে?’
আগন্তুক ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন।
‘না, তা হয়নি,’ বললেন তিনি, ‘তবে আমার হার্টে সমস্যা দেখা দিয়েছে।’