নীল ঘড়ি

‘নীলু, মা, শিগগির আয়, দেখে যা তোর বাবা কী পাঠিয়েছে?’

‘কী পাঠিয়েছে মা, দেখি?’ বলে নীলু দৌড়ে যায় মায়ের কাছে। সাদা রঙের গিফট বক্সটা খোলেন মা। তার ভেতর চমৎকার একটা নীল ঘড়ি। হাল ফ্যাশনের স্মার্ট ওয়াচ।

‘কী সুন্দর ঘড়ি!’ অবাক হয়ে বলে নীলু।

‌‘এটা কিন্তু সাধারণ ঘড়ি নয়,’ বলেন নীলুর মা। ‘সময় তো দেখাই যায়, সঙ্গে সময় ভ্রমণও করা যায় এটা দিয়ে।’

‘টাইম ট্রাভেল!’ অবাক হয় নীলু। ‘বাবা বলেছে এই কথা? নিশ্চয়ই এর কোনো মানে আছে! মা ঘড়িটা পরিয়ে দাও আমার হাতে।’

মা নীলুর হাতে ঘড়িটা পরিয়ে দেন। আর সতর্ক করে বলেন, ‘দেখিস উল্টো-পাল্টা ঘুরিয়ে টাইম ট্রাভেলের চেষ্টা করিস না যেন।’

‘আচ্ছা মা,’ বলে নীলু বেরিয়ে পড়ে স্কুলের উদ্দেশে।

গভীর রাত। বাইরে অন্ধকার। একটানা ডেকে চলেছে ঝিঁঝি পোকার দল। নীলু ঘরের জানালা খুলে পড়তে বসেছে। হাতে সেই নীল ঘড়িটা। সেটা নেড়ে দেখে নীলু। ঘড়িটার পেছন দিকে একটা ছোট্ট বোতাম। কৌতূহল দমন করতে পারে না। বোতামটায় আলতো করে চাপ দেয়। অবাক কাণ্ড! ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে ঘড়িটা! ঘড়ির স্ক্রিনে সময়ের সঙ্গে আরও কিছু মেন্যু যোগ হয়েছে। সাল, তারিখসহ এসে গেছে শহরের নামও।

নীলু কৌতূহলী। পাল্টে দেয় সালটা। ৩০১৯ সাল, ঢাকা লিখে সেভ করে। তারপর ধুন্দুমার কাণ্ড। দ্রুত বাড়তে থাকে ঘড়ির আকার। একসময় হাত থেকে খুলে পড়ে যায় মেঝের ওপর। তারপর পরিণত হয় ছোট্ট একটা গোলকে। দ্রুতই সেই ছোট্ট গোলকটাই পরিণত হয় দানবাকার গাড়িতে।

নীলু নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না। এটা কীভাবে সম্ভব, ভাবে সে।

নীলুর বাবা বিখ্যাত বিজ্ঞানী। অনেক আশ্চর্য কারবারই বাবার বদৌলতে দেখে ফেলেছে নীলু। তবু এমন অদ্ভুত কাণ্ড কখনো দেখেনি।

স্বপ্ন দেখছে না তো, ভাবে নীলু। সমাধান পায় না। মাকেও ডাকতে সাহস হয় না ওর। যদি আশ্চর্য স্বপ্নটা ভেঙে যায়! এখন কী করা উচিত?

নীলু গাড়িতে উঠে বসে। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় গাড়ির দরজা। এখন কী হবে! গাড়িটার দরজা খোলার চেষ্টা করে। কিন্তু খুলছে না। ভয় পেয়ে যায় নিলু। তারপর ভাবে, নিশ্চয় কোনো বোতাম চেপে দরজা খুলতে হয়।

গাড়ির ড্যাশবোর্ডে একটা লাল রঙের বোতাম দেখতে পায় নীলু। সেটাতে চাপ দেয়। গাড়িটা ঘুরতে শুরু করে। একটানা কয়েক মিনিট। তারপর নিজেকে আবিষ্কার করে নিজের ঘরেই। কিন্তু তার ঘরের বিছানায় শুয়ে আছে অন্য একটি মেয়ে। নীলু বিড় বিড় করে বলে, ‘আজব তো, কয়েক মিনিটের মধ্যে এ মেয়ে এল কোথা থেকে?’

নীলু গিয়ে মেয়েটার ঘুম ভাঙায়। জিজ্ঞেস করে, কে সে?

‘তুমি কে?’ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেয় মেয়েটা। ‘তোমার কোড নম্বর কী? আমার কোড নম্বর ৩২১০।’

নীলু ভাবে, নীল ঘড়িতে চেপে সে কি টাইম ট্রাভেল করে ফেলেছে? ভয় পাওয়া গলায় জবাব দেয় সে, ‘আমি নীলু।’ পাল্টা প্রশ্ন করে, ‌‘এখন কত সাল?’

‘আমি লুনী। এখন ৩০১৯ সাল। আমি একটি বাচ্চা রোবট। এটা আমার ঘর। তুমি এখানে কীভাবে এলে?’

নীলু এবার ভড়কে যায়। তাহলে নীল ঘড়িটা সত্যিই টাইম মেশিন!

লুনী জবাব দেয়, ‘হ্যাঁ, তুমি যা ভাবছ, সেটা ঠিক।’

আরও অবাক হয় নীলু, এই মেয়েটা তার মনের কথা পড়ে ফেলেছে?

‘আমি একটা বাচ্চা রোবট, তবে অন্যের মনের কথা বুঝতে পারি।’

নীলু আরও ভড়কে যায়। কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, ‌‘এখন আমি ২০১৯ সালে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু কীভাবে যাব?’

লুনী বলে, ‘তুমি টাইম মেশিনে গিয়ে বসো, তারপর নিজের সাল সেভ করো। এরপর লাল বোতামে চাপ দাও। আর একটা কথা, কখনো ভবিষ্যতে এসো না, অন্য রোবট টের পেলে তোমাকে মেরে ফেলবে। জলদি পালাও।’

ভোরের আলো চোখে পড়তেই নীলুর জ্ঞান ফেরে। সে নীল ঘড়িটার পাশে শুয়ে আছে। রাতের কথা মনে পড়তেই সে শিউরে ওঠে।

* অক্সফোর্ড মিশন রোড, বরিশাল থেকে