ভূকম্পাইনোসর!

অলংকরণমাসুক হেলাল

হঠাৎ চারদিক যেন কেঁপে ওঠে। সুমন, শরীফ আর জিলানী প্রথমে চমকে ওঠে। তারপর চিত্কার করে বলে, ভূমিকম্প হচ্ছে!

কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখতে পায় ওদের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে দুই দিকে। ওরা পড়ে যাচ্ছে একসঙ্গে সেই ফাটলের ভেতর। কিছুক্ষণ পর ওরা নিজেদের আবিষ্কার করল বিশালাকার একটি পাখির পিঠের ওপর। বসে আছে। পাখিটি তাদের নিয়ে উড়ে চলেছে কোথায় যেন। হঠাৎ ওরা লক্ষ করে ওরা আগে যেখানে ছিল সেখান থেকে মাটির নিচে অনেক গভীরে চলে এসেছে।

ওরা তিনজন অন্য এক জগতে চলে এসেছে। মাটির নিচে অনেক গভীরে অচেনা-অজানা এক জগৎ। সেখানে বিশাল এক বন। সেই বনে আজব সব প্রাণীর বাস। ওদের বাহন পাখিটার দিকে লক্ষ করল সুমন। এতক্ষণ যেটাকে ও পাখি মনে করেছিল আসলে সেটা পাখি নয়, একটা ডাইনোসর। ঠিক তখনই জিলানীর চোখে পড়ল আজব এক প্রাণী। বাকি দুজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, দেখ, প্রাণীটির দুই দিকেই লেজ। সুমন হেসে বলল, ওটার নাম ব্রাকিওসরাস, ওটার লেজ অনেক লম্বা, গলাটাও তেমন বিশাল। আমাদের এই বাহন পাখিটার নাম কোয়েটসালকোঅ্যাটলাস।

শরীফ আর জিলানী অত শত জানে? সুমন তখন ওদের দুজনকে বুঝিয়ে বলে, এগুলো হচ্ছে ডাইনোসর। ডাইনোসর! অবাক হয় জিলানী আর শরীফ।

ডাইনো পাখির কাঁধে উড়তে উড়তে আরও আজব সব প্রাণীর দেখা পেল ওরা। সুমন একে একে সেগুলোর নাম-পরিচয় দিয়ে গেল বিজ্ঞের মতো। ডাইনোসর সম্পর্কে অনেক পড়াশোনা ওর। যেমন অদ্ভুত সেসব জানোয়ারের চেহারা। তেমনি অদ্ভুত সেগুলোর নাম—ইর‍্যাপ্টর, অ্যাপাটোসরাস, উড়ন্ত টেরানোডন। একে একে ওরা দেখা পেল প্লেটওয়ালা স্টেগোসরাস, পালকওয়ালা আর্কিওপটেরিক্স, হাঁসের মতো চঞ্চুওয়ালা মাইয়াসরা, পিঠে ফিনওয়ালা মাংসাশী স্পাইনোসরাস। সবার শেষে দেখা পেল ভয়াল দানব টিরানোসরাস রেক্সের।

সের‍্যাপ্টরটি উড়েই চলেছে। সঙ্গে ওরাও। একসময় হঠাৎ যেন ডাইভ দিয়ে শাঁ করে নিচে নামতে শুরু করল ওদের বাহন ডাইনোসরটি। সম্ভবত শিকার ধরার জন্য। তাল সামলাতে পারল না ওরা, পড়ে গেল। জানোয়ারটার পিঠ থেকে পড়ে যাচ্ছিল অতল খাদে। তখনই ঘুম ভেঙে যায় সুমনের। জুরাসিক যুগ থেকে ফিরে আসে বাস্তব জগতে।

লেখক: মেডিকেল অফিসার, আধুনিক সদর হাসপাতাল, পঞ্চগড়