কিউরেটর আরশোলা

আজকাল একদল দুষ্কৃতিকারীর খুব বাড় বেড়েছে। দেশের জরুরি গবেষণাগারগুলোতে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে দলটি। ধরা পড়েনি তাদের কোনো সদস্য।

দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগার। ক্যানসার নিয়ে নতুন গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণা হচ্ছে এখানে। পুরো মানবজাতির জন্য এ গবেষণা জরুরি। গবেষণার নথিপত্র খুব নিরাপত্তার সঙ্গে সংরক্ষণ করা আবশ্যক। কোনোক্রমে তথ্য কারচুপি হলে বা দুষ্কৃতকারীদের হাতে চলে গেলে ভীষণ বিপদ। তাই গবেষণা শেষে সব ডেটা ছোট একটি মেমোরি চিপে ট্রান্সফার করা হয়েছে। সেটা সংরক্ষণ করা হয়েছে যথার্থ স্থানে।

রাত সাড়ে বারোটা। চারদিকে শুনশান নীরবতা। হঠাৎ গবেষণাগারের সিকিউরিটি গার্ডের ওপর আচমকা হামলা শুরু হলো। সিকিউরিটি গার্ডকে অচেতন করে গেটের ভেতরে ঢুকে পড়েছে একদল দুষ্কৃতকারী। গবেষণাগারের সিকিউরিটি হ্যাক করে দুষ্কৃতকারীর দল হলরুমে ঢুকে পড়ল। নথিপত্রগুলো এক জায়গায় স্তুপ করা। ওপরে কিছু আরশোলা ছুটে বেড়াচ্ছে। এক দুষ্কৃতিকারী সেগুলোকে ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দিল। সব নথিপত্র তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কিছুই পাওয়া গেল না। হলরুমের সবগুলো কম্পিউটার হ্যাক করেও তারা ব্যর্থ হলো। দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো ফাইল খুঁজে পাওয়া গেল না। বিরক্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করতে শুরু করল তারা। গবেষণার নথিপত্র গেল কোথায়? খুঁজতে তো কিছু বাকি নেই।

সবাই যখন নথিপত্র খুঁজতে ব্যস্ত, তখনও একটি আরশোলা তাদের সামনে দিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ বুঝতেই পারেনি, এটা প্রাণহীন একটি রোবট। সেন্সরে মানুষের অবস্থান টের পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই হলরুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে ম্যাসেজ পাঠিয়ে দিয়েছে রোবট আরশোলা। ইতিমধ্যে বিরক্ত হয়ে দুষ্কৃতকারী দলের প্রধান সবার  উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আমাদের আজকের মিশন ব্যার্থ। বিকল্প কোনো পথ ভাবতে হবে। ওরা এত সহজে আমাদের কাছে ধরা দেবে না। চলো আজকে ফিরে যাই।’

দলের সবাই হাত গুটিয়ে ধীরে ধীরে হলরুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। আরশোলা তাদের পিছু পিছু হলরুমের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে আসে। দুষ্কৃতকারীর দল গেটের কাছাকাছি আসতেই স্থানীয় পুলিশের পুরো টিম তাদের ঘিরে ধরে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবার হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেয় পুলিশ। গবেষণা পর্ষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কিছুক্ষণে মধ্যেই ছুটে আসলেন। পুলিশের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রবেশ করলেন হলরুমে।

কিউরেটর আরশোলা এখনো হলরুমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই রোবট আরশোলাটিই চিপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। আরশোলাটির দেহের ভেতরে মেমোরি চিপ লুকিয়ে রেখে সেটাকে সচল করে দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু আরশোলার সঙ্গে গুটি গুটি পায়ে দিব্যি গবেষণাগারে ঘুরে বেড়াচ্ছে এটা।

কর্মকর্তার মোবাইলে আবারও একটি ম্যাসেজ আসল। ম্যাসেজটি দেখে তিনি মৃদু হাসলেন। মনে মনে বললেন, ‘গুড জব কিউরেটর ককরোচ, ভেরি গুড।’

লেখক: শিক্ষার্থী, অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ, ছেংগারচর সরকারি কলেজ