আত্মতৃপ্তি

সময়টা ২০৩৭। এরই মধ্যে পৃথিবী থেকে অনেক দেশই মঙ্গল গ্রহ মিশনে মানুষকে পাঠিয়েছে। আর এই সব সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানী ফয়সাল হাসানের জন্য। আইনস্টাইনের পর সম্ভবত সে–ই বিজ্ঞানজগতে সবচেয়ে বড় কিংবদন্তি। তার দেওয়া আধুনিক স্পেসশিপ ডিজাইনের জন্যই মহাকাশ ভ্রমণ অনেক সহজ হয়ে গেছে। আর এখন নিজের দেশের পক্ষ থেকে মঙ্গল গ্রহ মিশনে যাত্রা শুরু করবে। আর কিছুক্ষণ পরই পৃথিবীতে তার শেষ দিন। এই রকম অবস্থায় সে একা বসে চিন্তা করছে:

আজ এই বছরের শেষ মাস আর এই পৃথিবীতে আমার শেষ দিন। কতগুলো বছর কাটিয়ে দিলাম এই পৃথিবীতে, টেরও পেলাম না। এই অল্প সময়েই কত কিছু ঘটে যাবে, তা কল্পনাও করতে পারিনি। নোবেল পুরস্কার পাওয়া, তারপর বিজ্ঞানজগতের অন্যতম কিংবদন্তি হওয়া, আরও কত কিছু। তবু যেন মনে হচ্ছে, জীবনে কিছুই করতে পারলাম না। জীবনের এই মুহূর্তে যখন আমার সবচেয়ে খুশি হওয়ার কথা, সেখানে এই রকম চিন্তা কেন আমার মাথায় আসছে? কেন জানি না আমার ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ছে, বিশেষ করে সেসব বন্ধুর কথা।

হঠাৎ এই মিশনের ক্যাপ্টেন এসে বলল, কী, এত মন খারাপ কেন? এখন তো আমাদের খুশি হওয়ার কথা। এত বড় একটা কাজ করতে যাচ্ছি। ফয়সাল বলল: না মানে এই আর কী পৃথিবীকে ছেড়ে চলে যাব তো তা–ই।

‘তুমি জানো এই বিজ্ঞান সাধনার মূল কারণ কী?’

‘মানুষের সমস্যার সমাধান করা। পৃথিবীকে আরও উন্নত করা।’

‘না, তুমি ঠিক বলেছ, কিন্তু এর আসল কারণ হলো আত্মতৃপ্তি। আমরা যে পৃথিবীকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি, তা শুধু এই ভেবে যে আমাদের এই কাজের মাধ্যমে আমাদের দেশের উন্নতি হবে। পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশের মধ্যে আমরাও থাকব। আর এর ফলে যে আত্মতৃপ্তি আসে, তা–ই আসল।’

কিছুক্ষণ ফয়সাল কিছু বলল না। তারপরেই সবাইকে মহাকাশে যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হলো। এই ঐতিহাসিক ঘটনা দেখার জন্য অনেক মানুষই স্পেস এজেন্সির কাছে জড়ো হয়েছে। এটা বাংলাদেশের স্পেস এজেন্সির সবচেয়ে বড় মিশন। ফয়সালের ছোটবেলার বন্ধুও এসেছে এখানে।

তারা নিজেদের মধ্যেই বলাবলি করতে লাগল।

‘একদিন ফয়সাল বলত, আমি একদিন এই বিজ্ঞানজগতের রাজা হব। পুরো পৃথিবীতে বিজ্ঞানের মাধ্যমে বিপ্লব তৈরি করব। আজ কেন জানি তার কথা খুব মনে পড়ছে।’

‘তুই ঠিক বলেছিস। আমাদের ছোটবেলায় সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের একজন। আমরা প্রতিবছর একসঙ্গে দেখা করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সেই কবে আমাদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। কখনোই দেখা হবে না ভেবেও আজব লাগে যে সেই দিনের ছেলেটা আজ কত বড় হয়ে গেছে।’

তখনই স্পেসশিপ যাত্রা শুরু করল। একে একে প্রত্যেকের উপস্থিতির কথা জানা গেল। কিন্তু এটা সেই স্পেসশিপ তো, সবাই আছে অথচ ফয়সাল নেই। হঠাৎ ওদের সামনে ফয়সাল হাজির হয়ে গেল।

‘কী রে আমাকে নিন্দা করা হচ্ছে বুঝি।’

ওরা যেন নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

‘আসলে টেকনোলজি এখন অনেক উন্নত হয়ে গেছে। এই স্পেস স্টেশনের প্রত্যেককে আমি আমার ট্যাবে দেখতে পাচ্ছিলাম। আর তখনই আমি তোমাদের কথা শুনতে পাই। আর মনে পড়ে যায়, আমি না থাকলে এই পৃথিবীতে আমার পরিবার, বন্ধুরা একা একা কী করবে? তাই তোমাদের কথা ভেবে এই স্পেসশিপ থেকে নেমে পড়লাম।’