একা

৩২০০ সাল। হাঁটছিলাম মঙ্গলের বুকে। হঠাৎ একমুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়ালাম। চোখ গেল রাডারে। কী যেন ধেয়ে আসছে। তীব্র গতিতে। আকার বোঝা যাচ্ছে না ওটার। আমি কি ঘাবড়ে গেছি? না বোধ হয়। যখন-তখন ঘাবড়াবার লোক আমি নই। এজন্যই তিন লাখ ক্যান্ডিডেটের ভেতর থেকে আমাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সহজে ঘবড়ে গেলে এতদূর পর্যন্ত আসতে পারতাম না। তার মানে এই নয়, আক্রান্ত হলে বসে বসে দেখব।

নিজের থেকে হাতে উঠে এলো থার্মোব্লাস্টার। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে আগন্তুকের অবয়ব। তবে এখনো অতটা স্পষ্টও নয়। ধুলো দেখছি আমি, ধুলো উড়িয়ে আসছে কিছু একটা দিগন্তরেখোর বুকে চিরে।

জিনিসটা ধীরে ধীরে চলে এলো আমার রোভারের খুব কাছে। এটাই কি সেই পরম প্রার্থিত প্রাণী, যার জন্য আমার কাছে এসেছিল এই বিশেষ মিশনের প্রস্তাব? চাইলেই ব্লাস্টার দিয়ে ওটাকে উড়িয়ে দিতে পারি। নাহ, থাক্ দেখা যাক, কী করে ওটা।

আমার এই মিশনের মূল কারণ, এই গ্রহ থেকেই মেসেজ পাঠিয়েছিল প্রাণীগুলো। না, পৃথিবী দখল করার বা ধ্বংস করার কোন বার্তা দেয়নি তারা। বরং খুব সাধারণ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী পাঠিয়েছিল ওরা। কিছু কিছু ভবিষ্যদ্বাণী মিলেও গেছে। এরপরই ওদের নিয়ে আগ্রহ তৈরি পৃথিবীতে। কিন্তু ওরা যেচে পড়ে সাহায্য করল কেন? কী চায় তারা? এই প্রশ্নের উত্তর জানতেই তো উড়াল দিয়েছি মহাকাশের পথে। কিন্তু মানবজগতের এই চূড়ান্ত লগনেও স্পেসশিপ যন্ত্রটা যে আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, তাই বা কে ভেবেছিল? ফলাফল ভুল পথে চলে গেছি অনেকটা আবার খুঁজতে এসেছি সেই আকাঙ্ক্ষিত গ্রহ, যার ঠিকানা দিয়েছে মানবজাতির কথিত শুভাকাঙ্ক্ষী রিজিয়ানরা ।

প্রাণীটা কাছে আসছে আরও, আরও কাছে…। ধীরে ধীরে দৃশ্যমান সম্পূর্ণ স্পষ্ট হলো ওটার অবয়ব। কিন্তু এটা তো প্রাণী নয়। ধাতব দেহ নিয়ে এগিয়ে আসছে জিনিসটা, নক্ষত্রের আলোতে ঝিঁকিয়ে উঠছে ধাতব দেহ। আরও কাছে চলে এলো। ধাতব একটা রোভার ওটা।

খুলে গেল দরজা, সেই আকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত, যে মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছে গোট মানবজাতি । এই প্রথম দেখা হবে ভিন্ন গ্রহের প্রাণীর সাথে।

কিন্তু বিধিবাম! আর কিছু না হোক, প্রাণীরটার মুখ দেখে বিশ্বাস হতে চাইল না। অবিকল মানুষ । ছদ্মবেশ নয়, আসল মানুষ। তার মুখের হাসি, ঝলমলে চোখ, সুগঠিত হাত-পা জানান দিল আসলেই রক্ত-মাংসের মানুষের দিকে তাকিয়ে আছি আমি ।

বিস্ময়ের ধাক্কাটি কাটতে না কাটতেই উচ্চ শব্দে হেসে লোকটা বলে উঠলেন, ‘হতাশ হলেন মনে হয়। ভবিষ্যতের মানুষ দেখছেন, এটাকেই সৌভাগ্য ভাবুন।’ বলেই আবার হা হা করে হেসে উঠলেন তিনি।

পানি চিকচিক করে উঠল আমার চোখে, মহাবিশ্বে আমরা আসলেই বড় একা…

লেখক: একাদশ শ্রেণি, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর