রহস্যময় শেষ লাইন

১২ বছর বয়সী এনামুল স্কুল ম্যাগাজিনে একটি সায়েন্স ফিকশন লিখবে। কিন্তু কী লিখবে মাথায় আসছে না। শেষমেশ এলিয়েনই হলো তার গল্পের বিষয়স্তু। বিষয় যখন মাথায় এসে গেছে, আর ভাবনা কী? খসখস করে লিখতে শুরু করে। কিন্তু শেষ লাইনে হলো মহা ঝামেলা। কিছুতেই লেখা শেষ করতে পারে না। একটা শব্দ লেখার সঙ্গে সঙ্গে সেটা আপনিতেই মুছে যায়। কেন মুছে যাচ্ছে শেষ লাইনটা, কিছুতেই মাথায় আসে না এনামুলের। কোনো লেখা আপনিতেই মুছে যায়, এমন কথা সে কখনো শোনেনি। শেষমেশ গল্পটা আর ম্যাগাজিনে জমা দেওয়া হয় না। বড়দের কিংবা বন্ধুদের বলতেও সাহস হয় না, পাগল ভাববে। একদিন গল্পটার কথা ভুলেই যায়।

দুই

৬০ বছর পর। রিমি নামের একটা মেয়ে বাবার কাগজপত্রের জঞ্জাল ঘাঁটতে গিয়ে একটা পাণ্ডুলিপি খুঁজে পায়। একটা গল্পের পাণ্ডুলিপি। পাণ্ডুলিপিতে লেখকের নামের জায়গায় লেখা—এনামুল হক। এনামুল সাহেব রিমির দাদু। মারা গেছেন। রিমি কৌতূহলী হয়ে ওঠে। একনিশ্বাসে পড়ে ফেলে। কিন্তু শেষে গিয়ে হতাশ হয়। গল্পের শেষ লাইনটাই নেই! খুব রাগও হয় দাদুর ওপর।

রিমি ভাবে, এক কাজ করলে কেমন হয়। তাদের স্কুলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী শিগগিরই। সেই উপলক্ষে একটা ম্যাগাজিন প্রকাশের তোড়জোড় চলছে। রুমানা নামের রিমির এক বান্ধবী ম্যাগাজিন কমিটিতে কাজ করে। রিমি দাদুর গল্পটা রুমানাকে দেয়। গল্পটা ভালোই । কিন্তু শেষ লাইনে গিয়ে সে–ও হতাশ।

‌‘এখন কী করব? গল্পটা তো শেষ হয়নি?’

রিমি বলল, তুমি যেকোনো একটা লাইন জুড়ে দিয়ো।

তিন

রুমানা গল্পটি তার কম্পিউটারে লেখার চেষ্টা করে। পুরোটাই লিখেও ফেলে। শেষটুকু নিজের মতো করে একটা লাইন জুড়ে দেওয়ার কথা ভাবে। কিন্তু সেটা আর হলো না। শেষ লাইনটা লেখার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু একই অবস্থা। লাইনটা লেখা শেষ হতে না হতেই সেটা মুছে যায়। তবু রুমানা বারবার চেষ্টা করেছে। শেষমেশ কম্পিউটারটাই নষ্ট হয়ে যায়।

আসলে সায়েন্স ফিকশনটি এক্সটুটুবি গ্রহের এলিয়েনদের গোপন তথ্য। সেই তথ্যটা চুরি করে শত্রু গ্রহের এলিয়েনরা। তারপর সেই তথ্য তারা এনামুল হকের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিয়েছিল কোনো একদিন। এনামুল সাহেব সেটাকেই গল্প ভেবে লেখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ব্যাপারটা টের পেয়ে যায় এক্সটুটুবির এলিয়েনরা। তাই বারবার এনামুল সাহেবের খাতা থেকে গল্পটা মুছে ফেলে দিয়েছে শেষ লাইনটা। শেষ লাইনটা না থাকলে গোপন তথ্যটা উদ্ধার করা কোনোভাবেই সম্ভব নয় অন্য কারও পক্ষে। এদিকে শত্রু এলিয়েনরা রুমানার মস্তিষ্কেও শেষ লাইনটা ঢুকিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সেটাও টের পেয়ে যায় এক্সটুটুবির এলিয়েনরা। তাই রুমানার কম্পিউটার থেকে বারবার শেষ লাইনটা মুছে দিয়ে নিজেদের গোপন তথ্য সুরক্ষিত রেখেছে।