ইনফ্রারেড নামটি যেভাবে পেলাম

ইংরেজ জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম হার্শেল ১৭৮১ সালে ইউরেনাস গ্রহ আবিষ্কার করে একজন দক্ষ পর্যবেক্ষক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। ১৮০০ সালের দিকে তিনি সূর্যের আলো, রং ও তাপের মধ্যকার সম্পর্ক উদঘাটনে ব্যস্ত হলেন। সে জন্য তিনি সূর্যরশ্মির গমনপথের মাঝখানে একটা প্রিজম স্থাপন করে কী ঘটে তা পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করলেন। অবশ্য নতুন কিছুই পেলেন না তিনি। সেই ১৬৬৬ সালে নিউটন এই পরীক্ষাটি করে দেখেছিলেন। সেবার নিউটন প্রমাণ দেখিয়েছিলেন, দৃশ্যমান সাদা আলো আসলে বিভিন্ন বর্ণের আলোর বুণন। সাদা আলোকে প্রিজমের মধ্য দিয়ে চালনা করলে তা রংধনুর সাতটি রঙে বা লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, আসমানি, নীল ও বেগুনি বর্ণে বিশ্লিষ্ট হয়ে যায়। নিউটনের তত্ত্বমতে, এখানে লাল আর বেগুনি আলোর বর্ণালির সীমানা নির্দেশ করে। হার্শেল জানতে চাইছিলেন, এই প্রতিটি রঙের আলাদাভাবে তাপমাত্রা কত হতে পারে। তাই তিনি প্রিজম থেকে পাওয়া বর্ণালির বিভিন্ন অঞ্চলে পারদ থার্মোমিটার রেখে পরীক্ষা করলেন। তিনি দেখতে পেলেন, থার্মোমিটারটির বর্ণালি বেগুনি থেকে লাল আলোর দিকে নিলে তাপমাত্রা বাড়ছে। এভাবে হার্শেল প্রমাণ করে দেখালেন, ভিন্ন ভিন্ন রঙের তাপমাত্রাও বিভিন্ন।

সবচেয়ে মজার ব্যাপারটি ঘটল হঠাৎ এক দুর্ঘটনায়। বেখেয়ালে তিনি হাতের থার্মোমিটারটি লাল আলোর ব্যান্ডের এক ইঞ্চি নিচে রেখেছিলেন। দৃশ্যত সেখানে কোনো রঙের আলোই ছিল না। তাই তিনি আশা করছিলেন, এই পরীক্ষায় থার্মোমিটারের তাপমাত্রা কক্ষ তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হবে না। কিন্তু তিনি অবাক হলেন যখন দেখলেন ঘটনাটি তাঁর প্রত্যাশামতো ঘটল না। দেখা গেল, এবার লাল আলোর চেয়েও তার নিচে থার্মোমিটারে তাপমাত্রা বেশি দেখাচ্ছে। এই অংশে নিঃসন্দেহে একটি অদৃশ্য আলো আছে বলে ধরে নিলেন হার্শেল। এই অদৃশ্য আলোকেই পরে নাম দেওয়া হয় অবলোহিত বা ইনফ্রারেড বিকিরণ। লাতিন ইনফ্রা (Infra) শব্দটির অর্থ নিচে। অর্থাৎ, ইনফ্রারেড অর্থ লালের নিচে। বাংলায় অবলোহিত বা অবলাল। এই ‘অব’ উপসর্গের একটি অর্থ নিম্নগামী বা নিচে।

*লেখাটি ২০১৭ সালে বিজ্ঞানচিন্তার ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত