জিন শব্দটি কীভাবে পেলাম

বংশগতি বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রথম গবেষণা করেছিলেন অস্ট্রিয়ান পাদরি ও বিজ্ঞানী জোহান গ্রেগর মেন্ডেল। ১৮৬৬ সালে তিনি মটরশুঁটি নিয়ে গবেষণা করে তার ফল দুটি সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন তাঁর গবেষণামূল্য তেমন কেউই বুঝতে পারেনি। প্রায় ২৩ বছর পর হুগও দ্য ভ্রিস, কার্ল করেন ও এরিক ভন শেরম্যাক স্বাধীনভাবে এ বিষয়ে গবেষণা করে মেন্ডেলের গবেষণার ফলই পুনরাবিষ্কার করেন। এরপরই মেন্ডেলের কাজের প্রকৃত গুরুত্বটা বুঝতে পারেন বিজ্ঞানীরা।

যা-ই হোক, মটরশুঁটি নিয়ে গবেষণার ফল ব্যাখ্যা করতে উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যের বাহককে একটি কণা হিসেবে ধরে ফ্যাক্টর শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন মেন্ডেল।

১৮৮৯ সালে হুগো ভ্রিস এই কণা বা ফ্যাক্টরকে প্যানজিনস হিসেবে উল্লেখ করেন। ১৯০৫ সালে শব্দটিকেই ছেঁটে আরেকটু ছোট করে নেন ড্যানিশ উদ্ভিদবিদ উইলহেম লুডভিজ জোহানসেন। তিনি বললেন, প্রতিটি ক্রোমোজমের যে ক্ষুদ্র অংশ কোনো একটি বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে জিন (gene) নামে ডাকা যেতে পারে। গ্রিক শব্দ জিনের অর্থ ‘জন্ম দেওয়া’ বা ‘উত্স’। তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করলেন অন্য বিজ্ঞানীরা।

এরপর থেকে ক্রোমোজমকে একগাদা জিনের একটি রজ্জু হিসেবে বিবেচনা করা হলো। পরবর্তী গবেষণায় দেখা গেল, জিন হচ্ছে ক্রোমোজমে অবস্থিত ডিএনএ (বা আরএনএ) অণুতে নিউক্লিটাইডের সুনির্দিষ্ট সিকোয়েন্স, যা একটি জীবের নিদিষ্ট কার্যকর সংকেতে আবদ্ধ থাকে। প্রতিটি ক্রোমোজমের ক্ষুদ্র এই অংশ নির্দিষ্ট কোনো বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে।

এ ক্ষুদ্র অংশটি ক্রোমোজমের লম্ব অংশে অবস্থান করে, অনেকটা তসবিহ বা জপমালার ছোট ছোট পুঁতির মতো। একটি ক্রোমোজমে এ রকম কয়েক ডজন, কিংবা কয়েক শ, এমনকি কয়েক হাজারও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ থাকতে পারে। জিন বা বংশাণু আসলে ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) দিয়ে তৈরি। এটি প্রোটিন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটায়। একটি স্তন্যপায়ী জীবের কোষে ৫০ হাজারের বেশি জিন থাকতে পারে।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বিজ্ঞানচিন্তা