অনুসুর শব্দটি যেভাবে পেলাম

নতুন কিছু আলাদাভাবে চিহ্নিত করাসহ নানা কারণেই নাম দিতে হয়। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য। এসব নামের পেছনেও লুকিয়ে থাকে মজার ইতিহাস

ইংরেজি Perihelion শব্দের বাংলা করা অনুসুর। এই শব্দটিও প্রথম ব্যবহার করেছিলেন জোহানেস কেপলার। সূর্যের চারপাশের কক্ষপথে কোনো গ্রহের সবচেয়ে কাছের অবস্থানকে বলা হয় অনুসুর। গ্রিক শব্দ peri এবং helios থেকে perihelion শব্দটির উদ্ভব হয়েছে। peri অর্থ কাছে ও helios অর্থ সূর্য। অন্যদিকে অনুসূর শব্দের ‘অনু’ অর্থ নিকটে বা কাছে এবং ‘সুর বা সূর’ অর্থ সূর্য। সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণকালে পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্ব ৩ জানুয়ারি সবচেয়ে কম থাকে। এ সময় পৃথিবী থেকে সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্ব থাকে ১৪ কোটি ৭০ লাখ (১৪৭ মিলিয়ন কিমি বা ৯১ মিলিয়ন মাইল)।

উনিশ শতকের দিকে বুধের অনুসুর–সংক্রান্ত একটি সমস্যা নিউটনের মহাকর্ষতত্ত্ব দিয়ে মেলানো যাচ্ছিল না। বুধের কক্ষপথের যেকোনো বিন্দু থেকে শুরু করে আবারও সেই বিন্দুতে ফিরে আসতে তার ৮৮ দিন লাগার কথা। পর্যবেক্ষণে দেখা গেল, বুধের অনুসুর থেকে শুরু করে পুরো পথ পরিক্রমা শেষে আগের বিন্দুতে ফিরছে না। বরং ফিরে আসছে আগের বিন্দু থেকে একটু দূরে। বুধের অনুসুরের সরে যাওয়ার পরিমাণ খুবই সামান্য। ১০০ বছরে এই সরে যাওয়ার পরিমাণ মাত্র ৫৭৪ আর্ক সেকেন্ড। এক আর্ক সেকেন্ড হলো ১ ডিগ্রির ৩৬০০ ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ ১০০ বছরে বুধের অনুসুর সরে যায় এক ডিগ্রির ছয় ভাগের এক ভাগ মাত্র। কিন্তু এরপরও তা জ্যোতির্বিদদের ভাবিয়ে তুলেছিল।

সূর্যের চারপাশের কক্ষপথে কোনো গ্রহের সবচেয়ে কাছের অবস্থানকে বলা হয় অনুসুর। সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণকালে পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্ব ৩ জানুয়ারি সবচেয়ে কম থাকে। এ সময় পৃথিবী থেকে সূর্যের মধ্যবর্তী দূরত্ব থাকে ১৪ কোটি ৭০ লাখ (১৪৭ মিলিয়ন কিমি বা ৯১ মিলিয়ন মাইল)।

নিউটনের মহাকর্ষতত্ত্ব কাজে লাগিয়ে ফরাসি জ্যোতির্বিদ ল্য ভেরিয়ে বুধের ওপর অন্যান্য গ্রহের প্রভাব হিসাব করে দেখলেন, তাতে বুধের অনুসুর হয় ৫৩১ আর্ক সেকেন্ড। কিন্তু বাকি ৪৩ আর্ক সেকেন্ডের হিসাব তিনি কিছুতেই মেলাতে পারলেন না। সে কারণে ধারণা করলেন, সূর্য আর বুধের মাঝখানে আরেকটি ছোট আকৃতির কোনো গ্রহ আছে নিশ্চয়ই। হিসাব করে, অজানা অদেখা সেই গ্রহের আকার-আকৃতি, ভর—সবই বের করলেন ল্য ভেরিয়ে। কিন্তু অনেক চেষ্টাতেও সেই গ্রহের কোনো হদিস মিলল না। অবশেষে ১৯১৫ সালে সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের চূড়ান্ত সমীকরণ প্রকাশের কয়েক বছর আগেই এ সমস্যার সমাধান দিলেন আইনস্টাইন। তাতে বাকি থাকা ৪৩ সেকেন্ডের হিসাব খাপে খাপে মিলে গিয়েছিল।

*লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার মে ২০১৯ সংখ্যায় প্রকাশিত

আরও পড়ুন