পাস্তুরাইজেশন শব্দটি যেভাবে পেলাম

ঠিক সে সময় ফ্রান্সের ওয়াইন (আঙুরের রস থেকে বানানো একধরনের মদ) শিল্প গভীর সমস্যায় পড়েছিল। সেখানকার ওয়াইন টক হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু তা কখনো হওয়ার কথা নয়। ফলে ওয়াইন উত্পাদনকারীরা লোকসান গুনছিল।

১৮৫৬ সালে পাস্তুরকে এ সমস্যার কারণ খুঁজে বের করতে বলা হলো। সমস্যাটি হাতে পেয়ে তিনি একটা কাজই করেছিলেন। সেটি হচ্ছে, ওয়াইনকে মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে ওয়াইনের মধ্যে ইস্ট নামের এক অণুজীব দেখতে পেলেন পাস্তুর। তবে ওয়াইনে ইস্ট পাওয়ায় অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। কারণ ওয়াইনের মধ্যে ইস্ট থাকে। এই অণুজীব ফলের রসের মধ্যে জন্মে এবং ফলের রসে থাকা চিনিকে অ্যালকোহলে রূপান্তর করে।

সেবার ওয়াইন টক হয়ে যাওয়া বন্ধ করা সম্ভব হয়েছিল। তাতে বেঁচে গিয়েছিল ফ্রান্সের ওয়াইনশিল্প। এরপর থেকে অল্প তাপে ক্ষতিকর অণুজীব মেরে ফেলার পদ্ধতিকে বলা হতে লাগল পাস্তুরাইজেশন

মাইক্রোস্কোপের নিচে টক ওয়াইন দেখার সময় পাস্তুর খেয়াল করলেন, কিছু কিছু ইস্ট কোষ সাধারণের চেয়ে আকার-আকৃতিতে একটু ভিন্ন। দেখে মনে হলো, ওয়াইনের মধ্যে দুই ধরনের ইস্ট রয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় পাস্তুর বুঝতে পারলেন, এদের মধ্যে আসলটা চিনিকে অ্যালকোহলে রূপান্তর করে, আর অন্যটা অ্যালকোহলকে একধরনের অ্যাসিডে পরিণত করে।

আরও পড়ুন

সামান্য একটু তাপ দিয়েই ইস্ট কোষ মেরে ফেলা সম্ভব। পরীক্ষা শেষে পাস্তুর পরামর্শ দিলেন ফলের রস থেকে ওয়াইন তৈরি হওয়ার পর একবার সামান্য তাপ দিতে হবে। তাতে ইস্ট কোষ মারা যাবে। আসল ইস্ট একবার কাজ করার পর ওয়াইনে আর কোনো ইস্টের প্রয়োজন থাকে না। তাই তাপ দেওয়ার ফলে অ্যালকোহল থেকে অ্যাসিড তৈরি করার আগেই ক্ষতিকর ইস্ট মারা যাবে।

কিন্তু ওয়াইন উত্পাদনকারীরা ওয়াইনে তাপ দেওয়ার ব্যাপারটা পছন্দ না করলেও একবার চেষ্টা করে দেখলেন। সত্যি বলতে কি, পাস্তুরের পদ্ধতিটি কাজে দিয়েছিল তাঁদের। সেবার ওয়াইন টক হয়ে যাওয়া বন্ধ করা সম্ভব হয়েছিল। তাতে বেঁচে গিয়েছিল ফ্রান্সের ওয়াইনশিল্প। এরপর থেকে অল্প তাপে ক্ষতিকর অণুজীব মেরে ফেলার পদ্ধতিকে বলা হতে লাগল পাস্তুরাইজেশন (Pasteurization)। আমরা দোকান থেকে যে দুধ কিনি, সাধারণত তা-ও পাস্তুরিত।

*লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার এপ্রিল ২০১৮ সংখ্যায় প্রকাশিত

আরও পড়ুন