অ্যালজেবরা শব্দটা যেভাবে পেলাম

জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় শূন্যতার কারণে পশ্চিমা ইতিহাসে মধ্যযুগকে বলা হয় অন্ধকার যুগ। কিন্তু আসলে এই অন্ধকার শুধু ইউরোপের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল। কারণ সে সময় চীন, ভারত এবং আরবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা অব্যাহত ছিল। মধ্যযুগে গড়ে ওঠা আরব সভ্যতায় গণিত, জ্যোতির্বিদাসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অসংখ্য পণ্ডিত বড় ধরনের অবদান রেখেছিলেন। তাদেরই একজন পারস্যের গণিতবিদ মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খোয়ারিজমি (৭৮০-৮৫০ খি.)। আব্বাসীয় খলিফা আল মামুনের পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলমানদের মধ্যে জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এ সময়েই আল মামুনের লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক ছিলেন খোয়ারিজমি। গণিতে তার অবদান বলে শেষ করার মত নয়। সে কারণে বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদ জর্জ সার্টন তাকে যে কোন বিচারে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ভারতীয় গণিতবিদদের উদ্ভাবিত দশমিক গণনা পদ্ধতির প্রসারে তিনিই ব্যাপক অবদান রেখেছিলেন। এছাড়া তাকে বলা হয় বীজগণিতের জনক। বীজগণিত নিয়ে ৮৩০ সালের দিকে তিনি আরবী ভাষায় লিখেছিলেন তার বিখ্যাত বই ‘আল কিতাব আল মুখতাসার ফি হিসাব আল জাবর ওয়াল মুক্বাবিলা’। এ বইটিই বীজগণিতের ভিত্তি বলে ধরা হয়। ১৫৫০ সালের দিকে ল্যাটিন ভাষায় বইটি অনুবাদ করে ইউরোপিয়ান গণিতবিদরা। একসময় বইয়ের নামটি ইউরোপীয়দের কল্যাণে সংক্ষিপ্ত হয়ে ‘আল জাবর’ হয়ে যায়। আরও পড়ে গণিতের এই শাখাটিরও নাম শেষপর্যন্ত হয়ে যায় অ্যালজেবরা (Algebra)। বাংলায় যাকে বলে বীজগণিত।

আবার গণিত, কম্পিউটার, বিজ্ঞানে ব্যবহৃত অ্যালগরিদম (Algorithm) শব্দটিও এসেছে তার নাম থেকেই। আরবী আল খোয়ারিজমির ল্যাটিন উচ্চারণ থেকেই অ্যালগরিদম শব্দটি উত্পত্তি হয়েছে। বীজগণিত ছাড়াও পরিমিতির অংশ ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত ও পিরামিড ইত্যাদিও ক্ষেত্রফল ও আয়তন নির্ণয়ের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন খোয়ারিজমি।