অণুচক্রিকা শব্দটা কীভাবে পেলাম?

কোথাও কেটে গেলেই সেখানে সাধারণত রক্ত জমাট বাঁধতে দেখা যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এমনিতে শরীরের ভেতরে রক্ত জমাট বাঁধে না। কিন্তু কেন? রক্ত নিয়ে গবেষণার সূচনাপর্বে এটি বিজ্ঞানীদেরও ভাবিয়েছিল। অবশ্য শরীরের ভেতরে বা রক্তনালির মধ্যেও মাঝেমধ্যে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। এর ফলে ছোট ছোট রক্তনালিতে জট লেগে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়ে মানুষ মারাও যেতে পারে। তবে আপাতত সেটি নিয়ে দুচিন্তার কিছু নেই।

রক্ত কেন জমাট বাঁধে, তার ব্যাখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ১৮৪১ সালে। সে বছর মাইক্রোস্কপের নিচে রক্তের মধ্যে নতুন এক বস্তুর খোঁজ পেয়েছিলেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জর্জ গালিভার। এ বস্তুটির ছবিও এঁকেছিলেন তিনি। পরের বছর ফরাসি বিজ্ঞানী আলফ্রেড ডোহনি রক্তে নতুন ওই বস্তুটি দেখেন। এর প্রায় ৪০ বছর পর ইতালিয়ান চিকিত্সক গুইলিও বিজ্জোজিরো এই নতুন পদার্থ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। ১৮৮২ সালে তিনি প্রমাণ করেন, স্বাভাবিকভাবেই রক্তে পদার্থটি থাকে। আবার এর সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার সম্পর্ক আছে। ইতালিয়ান ভাষায় তিনি এই পদার্থটির নাম দিলেন পিয়াসস্ট্রিন, যার অর্থ ছোট প্লেট বা থালা। কারণ এদের আকার-আকৃতি অনেকটা ছোট ছোট প্লেট বা থালার মতো।

আসলে এ বস্তুটির আকার-আকৃতি দুটি থালার মতো, মানে মুখোমুখি দুটি থালার মতো। ১৯০৬ সালে এক গবেষণা প্রবন্ধে বস্তুটিকে প্লেটস হিসেবে উল্লেখ করেন মার্কিন বিজ্ঞানী জেমস রাইট। তবে ১৯১০ সালের আরেক গবেষণা প্রবন্ধে নামটি পরিবর্তন করে রাখেন প্ল্যাটিলেটস (Platelets) বা অণুচক্রিকা। এর পাশাপাশি এ রক্তকণিকার সমার্থক শব্দ হিসেবে অনেকে থ্রম্বোসাইটস (Thrombocytes) নামেও ডাকতে লাগলেন। গ্রিক Thromb অর্থ রক্ত জমাট বাঁধা আর পুঃব অর্থ কোষ। কাজেই থ্রম্বোসাইট অর্থ রক্ত জমাট বাঁধার কোষ।

অণুচক্রিকা লোহিত রক্তকণিকার চেয়েও ছোট। দুটি অণুচক্রিকা পাশাপাশি রাখলে একটি লোহিত কণিকার সমান হয়। আটটি অণুচক্রিকার ওজনের সমান একটি লোহিত রক্তকণিকার ওজন। রক্তে শ্বেতকণিকার চেয়ে অণুচক্রিকার সংখ্যা অনেক বেশি। সাধারণত রক্তের প্রতিটি শ্বেতকণিকার বিপরীতে ৩৫টি অণুচক্রিকা আর প্রতি ২০টি লোহিত কণিকার বিপরীতে মাত্র একটি অণুচক্রিকা থাকে।

সূত্র: হাউ উই নো এবাউট ব্লাড/আইজাক আসিমভ; উইকিপিডিয়া