কোয়ান্টাম ইনফরমেশন নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা এমন এক যুগে পদার্পণের স্বপ্ন দেখছেন, যেখানে ফাইবার অপটিক কমিউনিকেশনে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অন্য কারও ঢুকে পড়া অসম্ভব হবে। কোয়ান্টাম মেকানিকসের সূত্র অনুযায়ীই এটা করা সম্ভব। কীভাবে সেটা হতে পারে? এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। যদি তথ্যের প্রতিটি কিউবিট একটি একক ও আলাদা ফোটনের মাধ্যমে প্রেরণ করা সম্ভব হয়, তাহলে প্রাপকের অজান্তে সেখানে অন্য কারও হঠাৎ ঢুকে পড়া অসম্ভব হবে। অর্থাৎ তথ্য হ্যাকিং রোধ করা যাবে।
কিন্তু সমস্যা হলো বাস্তবে ফোটন একা, বিচ্ছিন্নভাবে চলে না। একটি লেজার পালসে গড়ে কখনো একটি, কখনো দুটি ফোটন থাকে, কখনো একটিও থাকে না। তাই এখন চেষ্টা চলছে কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।
ফোটন ব্যবহার করে সৌরশক্তি আহরণেরও একটি চেষ্টা চলছে। আগামী দিনে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ অনেকাংশে সৌরশক্তির ওপর নির্ভরশীল। কারণ, আমরা যদি কয়লা বা তেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ ও শক্তি তৈরি করি, তাহলে কার্বন নিঃসরণ বাড়ে। এতে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রক্রিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের ধারা আরও বিপজ্জনক মাত্রায় চলে যাবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর ফলে পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকাই অসম্ভব হয়ে উঠবে। তাই দরকার শক্তির বিকল্প উত্স। পারমাণবিক শক্তির চাহিদা বাড়ছে। তবে সেখানে চেরনোবিলের মতো বিপর্যয়ের আশঙ্কাও রয়েছে।
সবচেয়ে ভালো উত্স সৌরশক্তি। কিন্তু সমস্যা দুটি। প্রথমত, সৌর প্যানেলের জন্য প্রচুর স্থানের দরকার। কিন্তু জনসংখ্যা বাড়ছে। খোলা জায়গা কমছে। আর তা ছাড়া রাতে সৌরশক্তি আহরণ করা যায় না। মেঘলা আকাশও একটা সমস্যা।
তাই বিজ্ঞানীরা এখন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সৌরশক্তি সঞ্চয়ের উদ্যোগ নিচ্ছেন। কারণ, সেখানে ২৪ ঘণ্টা সৌরশক্তি পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা ভাবছেন, সেখান থেকে সৌরশক্তি পৃথিবীতে কীভাবে নিয়ে আসা যায়।
বিজনেস ইনসাইডার ম্যাগাজিনে ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর একটি নিবন্ধে বলা হয়, বিজ্ঞানীরা এমন এক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন, যা সৌরশক্তির প্রবাহ মহাশূন্য থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ করবে। এর মূল কথা হলো ভূপৃষ্ঠ থেকে ২২ হাজার মাইল উচ্চতায় কক্ষপথে যদি সৌর প্যানেল স্থাপন করা হয়, তাহলে সেখান থেকে অনবরত সৌরশক্তি পাঠানো সম্ভব।
বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তিকে বলছেন ‘স্টেলার এনার্জি’। স্যাটেলাইটে স্থাপিত বিশেষ ধরনের প্যানেল সূর্যরশ্মির ফোটন ঘনীভূত করে সংগৃহীত শক্তিকে রেডিও ওয়েভে রূপান্তরিত করবে। আরেকটি যন্ত্র সেই রেডিও বিম পৃথিবীতে পাঠাবে। একটি বিশেষ ধরনের অ্যানটেনা, যার নাম দেওয়া হয়েছে রেকট্যানা (Rectenna) সেই উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও ওয়েভকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করবে।
মহাশূন্য থেকে এমন বিশাল আকারের রেডিও তরঙ্গের কথা ভাবলে একটু ভয় হয়। মনে হয় বিপজ্জনক। কিন্তু আসলে আমরা টেরও পাব না। খালি চোখে রেডিও তরঙ্গ দেখা যায় না। আমাদের চারপাশে সব সময় রেডিও তরঙ্গ প্রবাহিত হচ্ছে।
বড় চ্যালেঞ্জ হলো এর দাম। বিদ্যুতের প্রচলিত দামের চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি পড়বে। এখানেই আটকে যাচ্ছে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের বিশাল উদ্যোগ। কে দেবে এত টাকা? তবে একটা সুখবর আছে। কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে। নিত্যনতুন প্রযুক্তি এর ব্যয় কমিয়ে আনতে পারে। এমন সম্ভাবনা কিন্তু এখন খুব অবাস্তব নয়।
সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার ডট কম
*লেখাটি ২০১৭ সালে বিজ্ঞানচিন্তার ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত