প্রাচীনকাল থেকেই চাঁদকে বিভিন্ন ভাষায় ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকা হয়। যেমন গ্রিক ভাষায় এর নাম সেলেনা, যা আসলে গ্রিকদের চাঁদের দেবীর নাম। রোমানরা তাদের দেবী ডায়ানার নামেই ডাকত পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটিকে। আবার তাদের কাছে সিনথিয়া নামেও পরিচিত ছিল চাঁদ। লাতিন ভাষাতেও চাঁদের জন্য লুনা শব্দটি ব্যবহার করা হতো। এখান থেকেই এসেছে ইংরেজি শব্দ লুনার। অন্যদিকে সংস্কৃত ভাষায় চাঁদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে একগাদা নাম। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামটি হলো চন্দ্র। এখান থেকেই বাংলা ভাষায় এসেছে চাঁদ। এ ছাড়া আছে শশী, ইন্দু, নিশাকর, হিমাংশু, সোম ইত্যাদি।
মজার ব্যাপার হলো, চাঁদের ইংরেজি মুন (Moon) শব্দটি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয় ১৯১৯ সালে। সেবার আন্তর্জাতিক অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন (আইএইউ) চাঁদের নাম নিয়ে যাতে কোনো বিভ্রান্তি না হয়, সে কারণে এই নাম বেছে নেন। শব্দটির উৎপত্তি পুরোনো ইংরেজি শব্দ মোনা থেকে। জার্মান শব্দ মেনো বা মেনন (menon)। ইন্দো-ইউরোপিয়ান মেনসেস (menses) থেকে এ শব্দ উদ্ভূত বলে মনে করা হয়। মেনসেস শব্দের ইংরেজি অর্থ মান্থ বা মুন। আবার বাংলা ভাষায় মাস শব্দটি এখান থেকেই এসেছে বলে মনে করা হয়। প্রাচীনকালে মাস বা মান্থ হিসাব করা হতো পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের আবর্তনকালের ওপর ভিত্তি করে। সে কারণেই ‘মাস’ আসলে চাঁদ বা মুনের সমার্থক শব্দ।
প্রাচীনকালে পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদকেও একটি গ্রহ হিসেবে মনে করা হতো। সে জন্য সপ্তাহের সাত দিনের নামের মধ্যে চাঁদের জন্যও একটি দিন বরাদ্দ ছিল। সে দিনটিকে বলা হয় সোমবার বা চাঁদের দিন। ইংরেজি বা ইউরোপিয়ান ভাষাভাষীদের কাছে তাই চাঁদের দিনটির নাম মানডে (মুন ডে থেকে মানডে)।
বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর আগপর্যন্ত পৃথিবী ছাড়া অন্য কোনো গ্রহের উপগ্রহের কথা জানা ছিল না। ১৬১০ সালের দিকে তিনি বৃহস্পতি গ্রহের চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার করেন। এদের এখন আইও, ইউরোপা, গ্যানিমেড এবং ক্যালিস্টো বলা হয়। তবে অন্যান্য গ্রহের উপগ্রহ আবিষ্কারের পর সেগুলোকেও সাধারণভাবে মুন নামেই ডাকা হতে লাগল। এদের মধ্য থেকে আমাদের একমাত্র চাঁদকে আলাদা করতে তাই অনেক সময় একে লুনা বলেই ডাকা হয়। ১৯৬৯ সালে চন্দ্র অভিযানে চাঁদের মাটিতে নামা যানটির নাম তাই রাখা হয়েছিল লুনার মডিউল। বিজ্ঞান কল্পকাহিনি লেখকদের কাছেও লুনা শব্দটি বেশ প্রিয়।
এদিকে গ্রিক উৎস সেলেনা থেকেও কয়েকটি শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। সেগুলো হলো পর্যায় সারণির ৩৪ নম্বর মৌল সেলেনিয়াম। এমন নামের কারণ হচ্ছে, যে আকরিকের সঙ্গে এই মৌলটিকে পাওয়া গিয়েছিল, তা সব সময় টেলুরিয়ামের সঙ্গে যুক্ত থাকে। আর টেলুরিয়ামের নামকরণ করা হয়েছিল লাতিন শব্দ টেলাস (tellus) থেকে, যার অর্থ পৃথিবী। চাঁদের ভৌত গঠন নিয়ে গবেষণাকে বলা হয় সেলেনোগ্রাফি। জ্যোতির্বিদ্যায় চাঁদের কক্ষপথকে বলা হয় সেলেনোসেন্ট্রিক।