‘মহাবিশ্ব নিজেই ভুলে যাবে, সে আসলে কতটা বড়’—রজার পেনরোজ

আজ ৮ আগস্ট বিজ্ঞানী রজার পেনরোজের জন্মদিন। এই সাক্ষাৎকারে পেনরোজ ফিরে গেছেন অতীতে। বলেছেন, কীভাবে একটি ক্রসরোড তাঁর ১৯৬৫ সালের পেপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সাক্ষাৎকারের শেষাংশে তিনি তাঁর সাম্প্রতিক কাজ নিয়ে কথা বলেছেন।

পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার-২০২০ ঘোষণার পর রজার পেনরোজের টেলিফোন সাক্ষাৎকার নেন নোবেল সংবাদমাধ্যমের প্রধান বিজ্ঞান কর্মকর্তা অ্যাডাম স্মিথ। এই সাক্ষাৎকারে পেনরোজ ফিরে গেছেন অতীতে। বলেছেন, কীভাবে একটি ক্রসরোড তাঁর ১৯৬৫ সালের পেপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সাক্ষাৎকারের শেষাংশে তিনি তাঁর সাম্প্রতিক কাজ নিয়ে কথা বলেছেন। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকের জন্য সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন উচ্ছ্বাস তৌসিফ

প্রশ্ন :

অ্যাডাম স্মিথ: হ্যালো, অ্যাডাম স্মিথ বলছি।

পেনরোজ: হ্যাঁ, হ্যালো।

প্রশ্ন :

স্মিথ: নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন!

পেনরোজ: ধন্যবাদ। অনেক খুশি হলাম।

প্রশ্ন :

স্মিথ: শেষ পর্যন্ত খবরটা আপনার কাছে পৌঁছেছে তাহলে…

পেনরোজ: হ্যাঁ!

প্রশ্ন :

স্মিথ: আপনার আবিষ্কারটা তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের সঙ্গে পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কের আরেকটা চমৎকার উদাহরণ।

পেনরোজ: হ্যাঁ, এটা ঠিক। হ্যাঁ। মানে কাজটা তো করেছি সেই ১৯৬৪ সালের দিকে। অনেক আগের কথা। এর কেবল কিছুদিন আগে প্রথমবারের মতো কোয়াসার পর্যবেক্ষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এ নিয়ে তাঁরা সবাই তখন বিহ্বল, বিভ্রান্ত... রবার্ট ওপেনহাইমার আর হার্টল্যান্ড স্নাইডারের ১৯৩৯ সালের একটা পেপারে কিন্তু এর কথা ছিল, ধুলামেঘের…চুপসে যাওয়ার একটা তাত্ত্বিক মডেল। কৃষ্ণগহ্বরের চুপসে যাওয়া নিয়ে এখন আমরা যে অবস্থায় আছি, মোটামুটি সে রকম একটা অবস্থা। সমস্যা হয়েছে কী, প্রথমত, ধুলা খুঁজে পেয়েছিল ওরা। এখন, ধুলার সংজ্ঞাতেই বলা আছে, এর ওপর কোনো চাপ কাজ করে না। তার মানে চুপসে যাওয়া থামানোর মতো ওর মধ্যে কিছু নেই। দ্বিতীয়ত, জিনিসটা ছিল একদম প্রতিসম। তার মানে সবকিছু চুপসে গিয়ে কেন্দ্রের দিকে পড়ছে। আর এই চুপসে যাওয়া থামানোর মতো কিছু যেহেতু নেই, তাই কেন্দ্রে একটা সিঙ্গুলারিটি বা পরম বিন্দু পাবেন আপনি। মানে মডেল দেখতে হবে পুরো কৃষ্ণগহ্বরের মতো। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই মূলত প্রতিসাম্যতার জন্য আরকি, এটা বিশ্বাস করতে চায়নি। রাশিয়ানরা, মানে লিফশিৎজ আর খালাশনিকভ নামে দুই রাশিয়ান বিজ্ঞানী আবার এ নিয়ে একটা পেপার করেছিলেন। তাঁদের কথা হচ্ছে, সাধারণত সিঙ্গালুরিটি পাওয়া যাওয়ার কথা নয়। ওই পেপারটা দেখে আমার মনে হলো, যেভাবে ওঁরা কাজটা করেছেন, সেটা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য লাগছে না। আদৌ ওটাকে বিশ্বাস করা যায় কি না, বুঝতে পারছিলাম না আমি। এভাবেই আমি সিঙ্গুলারিটি নিয়ে চিন্তা করা শুরু করলাম। সমীকরণ সমাধানের চেষ্টা ছিল না তখন, বরং জ্যামিতিকভাবে ভাবছিলাম আমি বিষয়টা নিয়ে। সমীকরণ সমাধান করে করে এগোতে গেলে বিষয়টা অনেক জটিল হয়ে যেত। আর প্রতিসমতা নিয়ে আগে থেকে কোনো কিছু ধরে নিতে চাচ্ছিলাম না আমি। কারণ আমার নতুনভাবে চিন্তা করার মূল লক্ষ্যই ছিল, এটা যে আগে থেকে কিছু ধরে নেওয়া যাবে না। আমি তাই যুক্তি হাজির করলাম। এ নিয়ে একটা ছোট্ট গল্প আছে। আমি জানি না, মানে আপনি কি গল্পটা শুনতে চান?

প্রশ্ন :

স্মিথ: হ্যাঁ, অবশ্যই! গল্প শুনতে দারুণ লাগবে আমার।

পেনরোজ: আমি তখন ব্রিকবেক কলেজে কর্মরত। আইভর রবিনসন নামে আমার এক ইংরেজ বন্ধু আছে। সে তখন টেক্সাসের ডালাসে কর্মরত। ও আমার সঙ্গে কথা বলছিল…কী নিয়ে, তা এখন আর মনে নেই…ও বেশ…মানে খুব গুছিয়ে, চমৎকারভাবে কথা বলত। সে কিছু একটা বলছিল...ওভাবেই আমরা হাঁটতে হাঁটতে একটা ক্রসরোডে এসে দাঁড়িয়েছিলাম। রাস্তা পার হওয়ার সময় ও চুপ করে গেল। গাড়ির দিকে খেয়াল রেখে রাস্তা পার হলাম দুজনেই। তারপর ও যা বলছিল, সেটা আবার বলতে শুরু করল। কথা শেষ করে ও যখন চলে গেল, তখন আমার কেমন অদ্ভুত একটা চাপা আনন্দ হচ্ছে। কেন…সেটা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। বাধ্য হয়ে তাই সারা দিন যা যা করেছি, সব ভেবে দেখতে শুরু করলাম। ‘নাশতায় কী খেয়েছি’ থেকে শুরু করে কত কী যে ভেবেছি! শেষ পর্যন্ত রাস্তা পার হওয়ার মুহূর্ত নিয়ে যখন ভাবছি, বুঝতে পারলাম, আমার মাথায় একটা আইডিয়া উঁকি দিতে শুরু করেছে। কোনো কিছু চুপসে যেতে যেতে যদি এমন অবস্থায় পৌঁছে যায় যে তার আগের অবস্থায় ফেরার সব উপায় বন্ধ হয়ে গেছে—তখন এর বৈশিষ্ট্য কেমন হতে পারে, আইডিয়াটা তা নিয়ে। কিন্তু প্রতিসমতা বা আর কিছু ধরে নিইনি আমি। এটাকেই আমি ‘ট্র্যাপড সারফেস’ বলেছি। আমার কাছে মনে হলো, এই ব্যাপারটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গে সঙ্গে অফিসে ফিরে গেলাম। ‘কোলাপ্স থিওরেম’-এর একটা প্রমাণ দাঁড় করালাম সেখানে বসেই। এর কিছুদিন পরই সেই পেপারটা লিখি আমি। ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার-জার্নালে পাঠিয়েছিলাম। যেটা সম্ভবত ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত হয়।

স্টিফেন হকিংয়ের সঙ্গে রজার পেনরোজ

প্রশ্ন :

স্মিথ: এটাই সেই পেপার। ক্রসরোডে হাঁটতে হাঁটতে আপনার মাথায় আইডিয়াটা তৈরি হচ্ছে, এটা কল্পনা করলে বোঝা যায়, অসাধারণ! আচ্ছা, এই ক্রসরোডটা ঠিক কোথায়?

পেনরোজ: এটা আসলে…আমি ওখানে আবার গিয়েছিলাম। এক মাথায় সারি সারি বিল্ডিং করে ওরা নষ্ট করে ফেলেছে রাস্তাটা।

প্রশ্ন :

স্মিথ: জায়গাটা কোথায়, সেটা যদি নির্দিষ্ট করে বলতেন, অনেক তাত্ত্বিকবিজ্ঞানী হয়তো অনুপ্রেরণার জন্য ওখানে যেতেন।

পেনরোজ: আমার জন্য বোধ হয় এটা গোপন রাখাই ভালো। [হাসি] আবার যখন গেলাম, তখন কিন্তু ভালো কোনো আইডিয়া মাথায় আসেনি। তার মানে প্রতিবার ওখানে গেলেই যে কাজ হবে, তা বলতে পারছি না।

প্রশ্ন :

স্মিথ: আমরা যে কনসেপ্টটা নিয়ে কথা বলছিলাম, কৃষ্ণগহ্বর। এখন তো মানুষের কাছে এই ধারণাটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আপনি যখন এ নিয়ে চিন্তা করেন, তখন কি মাথায় কোনো ছবি দেখতে পান, নাকি গাণিতিকভাবে চিন্তা করেন?

পেনরোজ: হ্যাঁ, আমি দেখতে পাই…এ জন্য আসলে…জ্যামিতির ব্যাপারে বেশ ভালো ধারণা দরকার হয়েছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থান-কালের জ্যামিতি। কারণ জিনিসটা তো ত্রিমাত্রিক নয়। আপনাকে পুরো চতুর্মাত্রিক স্থান-কাল নিয়ে ভাবতে হবে। এত দিনে আমি অবশ্য এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে ছবিটা মাথায় ঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য বেশ কিছু কৌশল ব্যবহার করতে হয় আমাকে। বেশির ভাগ চিন্তাই আমি ভিজ্যুয়ালি করি। সমীকরণ লিখে লিখে কাজ করার চেয়ে মাথায় ছবি এঁকে নিয়ে চিন্তা করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয়। যা–ই হোক, কৃষ্ণগহ্বর দিনে দিনে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এর অনেক কিছু মানুষ হয়তো ঠিকভাবে উপলব্ধিও করতে পারবে না। কৃষ্ণগহ্বর হচ্ছে তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের ভিত্তি। যেটা খুবই অদ্ভুত একটা ব্যাপার। মানে তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রটা আমার কাছে বরাবরই কেমন ধোঁয়াটে লাগে। এই সূত্র বলে, এনট্রপি বাড়ছে, তাই র‍্যান্ডমনেসও বাড়ছে ইত্যাদি…ওহ, ওই ফোনটাও বাজছে, কী অবস্থা… [হাসি]।

যুবক রজার পেনরোজ

প্রশ্ন :

স্মিথ: জানতে চাচ্ছিলাম, মানে এরা কীভাবে তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে?

পেনরোজ: হ্যাঁ, এরা দ্বিতীয় সূত্রের একদম মৌলিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এরা হচ্ছে এই মহাবিশ্বের মধ্যকার এনট্রপি বা র‍্যান্ডমনেস—যা–ই বলুন আরকি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, মহাবিশ্বের সবচেয়ে বেশি এনট্রপি এখন কোথায়? এখন পর্যন্ত আমরা যা জানি, অনেকটাই নিশ্চিতভাবে বলা যায়—কৃষ্ণগুহ্বরের ভেতরে। তাহলে এই এনট্রপি পরে কোথায় যায়? হকিং আমাদের বলেন, দূর ভবিষ্যতে এই কৃষ্ণগহ্বরগুলো উবে যাবে…আমিও মনে করি, এমনটাই হওয়ার কথা। কৃষ্ণগহ্বর অনেক অনেক বিশাল হলে, সবচেয়ে বড়গুলোর জন্য বললে আরকি, যেহেতু ওগুলোর মধ্যেই এনট্রপি সবচেয়ে বেশি—ডন পেইজের মতে, এগুলো উবে যেতে যেতে লেগে যাবে প্রায় এক হাজার গুগল বর্ষ। এক গুগল সমান ১০১০০। মানে ১–এর পরে ১০০টা শূন্য। এ ক্ষেত্রে ১০০ নাকি…সম্ভবত ১০৩টি শূন্য বসাতে হবে। সংখ্যাটা মোটামুটি এমন। এত বছর পরে গিয়ে সবচেয়ে বড় কৃষ্ণগহ্বরগুলোরও উবে যাওয়ার কথা।

এটা আমার কসমোলজি সম্পর্কিত ধারণা, যেটা কসমোলোজিস্টদের আমি ঠিক মানাতে পারছি না—মহাবিশ্ব থেকে যখন এর মধ্যকার সব পদার্থ উবে যাবে, তখন এক হিসেবে বলা যায়, মহাবিশ্ব নিজেই ভুলে যাবে, সে আসলে কতটা বড়। আমি জানি, জিনিসটা কেমন উদ্ভট, পাগলাটে শোনাচ্ছে। কিন্তু আপনার চারপাশে যদি কোনো ভর না থাকে, মহাবিশ্বের আকার হিসাব করার কোনো উপায়ও কিন্তু থাকবে না। এদিক থেকে এটাকে পরবর্তী যুগের (ইংরেজিতে aeon) মহাবিশ্বের জন্য বিগ ব্যাং হিসেবে ধরা যায়। আমি একে বলছি AEON। মহাবিশ্বের ব্যাপারে আমরা যতটুকু জানি, এর সূচনা হয়েছে বিগ ব্যাংয়ের মাধ্যমে। তারপর এর ইনফ্লেশন, মানে প্রচণ্ডভাবে সম্প্রসারণ হয়েছে। এটা নাকি মহাবিশ্বের একদম শুরুর দিকে হয়েছে। যা–ই হোক, আমি এই ‘ইনফ্লেশন’-এ বিশ্বাসী নই। তারপর কিছুটা সময় মহাবিশ্ব একটু ধীরে সম্প্রসারিত হয়েছে। এরপরেই আবার এটি বেড়েছে সূচকীয় হারে (Exponential expansion)। এই তো।

কিন্তু আমার আইডিয়া হচ্ছে, ঘটনা এখানেই শেষ নয়। আমাদের মহাবিশ্বটা ধীরে ধীরে পরবর্তী বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের দিকে এগোচ্ছে, সেভাবে রূপান্তরিত হচ্ছে। অর্থাৎ আমাদের বিগ ব্যাং হচ্ছে আগের যুগের মহাবিশ্বের সূচকীয় সম্প্রসারণের মাধ্যমে রূপান্তরের ফলাফল। তার মানে আগের সেই মহাবিশ্বে নিশ্চয়ই কৃষ্ণগহ্বর ছিল। সেগুলো হকিং বাষ্পায়নের (Hawking Evaporation) মাধ্যমে উবে গেছে। সেই মহাবিশ্বের সবটুকু এনট্রপি তাই ওর মধ্যেই যাওয়ার কথা, কিংবা সিঙ্গুলারিটির মধ্যে। দুটোর যেটাই হোক, এর ফলে ওই সবটা এনট্রপি এক বিন্দুতে ঘন হয়ে জমেছে আমাদের মহাজাগতিক পটভূমি—মহাকাশে।

কিন্তু আমরা ওই বিন্দুটা দেখতে পাই না। কারণ কোনো কিছুই ৩ লাখ ৮০ হাজার বছরের আগে বেরিয়ে আসতে পারে না—সবাই জানে, এটা স্ট্যান্ডার্ড কসমোলজির অংশ। ৩ লাখ ৮০ হাজার বছর পরে সেই বিন্দুটা, যেটা আসলে একটা কৃষ্ণগহ্বর—কিংবা কৃষ্ণগহ্বরের অবশেষ—বেরিয়ে আসে। বলা উচিত, ওটা থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হয়। ফলে কৃষ্ণগহ্বরটা বাষ্পীভূত হতে হতে উবে যেতে থাকে। বেরিয়ে আসতে থাকে এর মধ্যকার সবটা শক্তি। বের হতে হতে একটা সময় এটা মহাকাশে চাঁদের আট গুণ পরিসরের জায়গা নিয়ে ৩ লাখ ৮০ হাজার বছরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আমার কথা হচ্ছে, এই উষ্ণ অঞ্চলটা আমরা দেখি, উত্তপ্ত…হালকা উষ্ণ…অত হালকাও না, যথেষ্ট উত্তপ্তই বলা যায়—চাঁদের আট গুণ পরিসরের এ রকম অঞ্চল আমরা কিন্তু দেখতে পাই।

এই পেপারটা আমার পোলিশ সহকর্মী—ক্রিস্তোফ মেইসনার ও পাওয়েল নিউরস্কিসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে মিলে লিখেছিলাম। ড্যানিয়েল এন নামে এক কোরিয়ান আমেরিকান ভদ্রলোক আমাদের হিসাব-নিকাশগুলো করে দিয়েছিলেন। পেপারটা কয়েক মাস আগে রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটির মাসিক নোটিশে প্রকাশিত হয়েছে। এই জার্নালটি বেশ মর্যাদাপূর্ণ।

এই পেপারে আমরা দাবি করেছি, যে সিগন্যালগুলো আমরা দেখি, যেগুলোকে আমরা ‘হকিং পয়েন্টস’ বলি—এই অঞ্চলগুলোই চাঁদের আট গুণ আকারের সেই অঞ্চল। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ছয়টি পয়েন্ট আছে, যেগুলো আমরা WMAP এবং প্ল্যাঙ্ক স্যাটেলাইট—দুটো স্যাটেলাইট থাকা প্রাপ্ত তথ্যতেই দেখতে পাই, এই পয়েন্টগুলো একদম জায়গামতোই আছে। অর্থাৎ আমাদের তত্ত্বমতে, এই পয়েন্টগুলোর ঠিক যেখানে থাকার কথা, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, ওগুলো ঠিক সেখানেই আছে। আমরা এটাকে আমাদের তত্ত্বের একটি শক্তিশালী প্রমাণ বলে মনে করছি। এই সিগন্যালগুলো যে র‍্যান্ডম কিছু না, এ ব্যাপারে আমরা ৯৯.৯৮%–এর মতো নিশ্চিত। এগুলোই হচ্ছে আমাদের আগের যুগের মহাবিশ্বের কৃষ্ণগহ্বরের অবশেষ। আর কৃষ্ণগহ্বরের সবটা এনট্রপি ওই পয়েন্টগুলোর মধ্যে ঢুকে যায়, হারিয়ে যায় ওর ভেতরে।

প্রশ্ন :

স্মিথ: অসাধারণ! [ফোন বেজে ওঠার শব্দ] আর আইডিয়াটা…আগের মহাবিশ্ব আমাদের এই মহাবিশ্বে তার চিহ্ন রেখে গেছে, আর আমাদের মহাবিশ্ব এর পরবর্তী মহাবিশ্বের বুকে নিজের চিহ্ন রেখে যাবে—অসম্ভব সুন্দর! আপনার সঙ্গে কথা বলে বেশ ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল…

পেনরোজ: আমারও ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।

প্রশ্ন :

স্মিথ: …আপনার বাকি সারা দিনের জন্য। আবার কথা হবে।

পেনরোজ: আচ্ছা।

স্মিথ: ধন্যবাদ।