নভোচারীরা মহাশূন্যে ভাসেন কেন?

মহাকাশে নভোচারীরা ভাসেন কেন? যদি ভেবে থাকেন মহাকাশে বাতাস বা মাধ্যাকর্ষণ বল নেই বলে নভোচারীরা ভাসেন, তাহলে জানিয়ে রাখি, ধারণাটা ভুল। ধারণা কেন ভুল, চলুন জানা যাক।

তার আগে জানা দরকার, মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ বল কী? মহাবিশ্বের দুটি বস্তু তাদের ভরের কারণে একে অপরকে যে বলে আকর্ষণ করে তাই মহাকর্ষ বল। আর এ দুটো বস্তুর মধ্যে যদি একটা হয় পৃথিবী, তাহলে সেটাকে আমরা বলি অভিকর্ষজ বল বা মাধ্যাকর্ষণ বল। অর্থাৎ, সূর্য ও মঙ্গলের মধ্যকার আকর্ষণ বলই হলো মহাকর্ষ বল। আর পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে যে আকর্ষণ বল সেটাই হল অভিকর্ষ বল। অভিকর্ষজ বল একই সঙ্গে মহাকর্ষ বলও বটে।

বোঝাই যাচ্ছে, পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে অভিকর্ষজ বল কাজ করে। প্রশ্ন হলো, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন বা আইএসএস-এ (ISS) কেন এ বল কাজ করবে না? আইএসএস তো পৃথিবী ও চাঁদের মাঝেই অবস্থিত।

আপনি নিশ্চয় গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর তিনটি সূত্রের ব্যাপারে জানেন। না জানলেও অন্তত নাম তো শুনেছেন। এ সূত্র তিনটি তখনই কার্যকর হয়, যখন দুটো বস্তু একই উচ্চতা থেকে বিনা বাধায় নিচে পড়ে। অর্থাৎ, বায়ুশূন্য অবস্থায় নিচে পড়াকে বোঝায়। এ কারণে বায়ুশূন্য পরিবেশে একই সময়ে একই উচ্চতা থেকে একটি লোহার বল ও একটি পাখির পালক ছেড়ে দিলে বস্তু দুটি একই সময়ে মাটিতে পড়বে।

কিন্তু বায়ুশূন্য পরিবেশ মানেই সেখানে সবকিছু ভাসবে ব্যাপারটি এমন নয়। কারণ কোনো বস্তু ভাসবে নাকি ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়বে তা বাতাসের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ওপর নির্ভর করে না। আপনি নিজেই একটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। ভূ-পৃষ্ঠের ওপর একটি কাচের বোতলে কম ভরের একটি বস্তু রেখে বোতলটাকে পাম্প যন্ত্র দিয়ে বায়ুশূন্য করুন। দেখুন তো ভিতরের বস্তুটি ভাসে কিনা! ভাসবে না। কারণ বস্তুর ওজনশূন্য অবস্থা বায়ুর ওপর নির্ভর করে না। মহাশূন্যে নভোচারীরা যে ভেসে থাকেন তা আসলে তাঁদের ওজনহীনতার জন্য। বায়ুর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির জন্য নয়।

তাহলে নভোচারীরা কেন মহাশূন্যে ভাসেন? ধরুন, আপনি একটি বল ওপরের দিকে ছুড়ে মারলেন। বলটি যতক্ষণ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টানে নিচে না পড়বে ততক্ষণ বলটির ওজন হবে শূন্য। বলের পরিবর্তে বড়সড় একটা বাক্সকে দশ তলা বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে ফেললেও একই ঘটনা ঘটবে। এবার কিছু সময়ের জন্য আপনার কল্পনায় ডানা মেলতে পারেন।

ধরুন, ওই বড়সড় বাক্সটার মধ্যে শুয়ে আছেন স্বয়ং আপনি নিজেই। তাহলে আপনিও কি ওজনহীনতা অনুভব করবেন? কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসুন। সত্যিই আপনি ওজনহীনতা অনুভব করবেন। কারণ আমরা যখন মাটির ওপরে হাঁটি বা দাঁড়িয়ে থাকি, তখন মাটির ওপর আমরা বল প্রয়োগ করি। নিউটনের তৃতীয় সূত্র মতে, মাটিও আমাদের সমান বলে বিপরীত দিকে ধাক্কা দেয়। আসলে মাটি আমাদের ধাক্কা দেয় ওপরের দিকে। ফলে হাঁটার সময়ও আমরা ওজন অনুভব করি।

কিন্তু পড়ন্ত অবস্থায় আমরা বল প্রয়োগ করতে পারি না কোনো কিছুর ওপর। ফলে ওজনও অনুভব করি না। এমনকি নিচে পড়ার সময় যে বাক্সটায় আপনি অবস্থান করছেন, সে বাক্সটাতেও বল প্রয়োগ করতে পারছেন না। কারণ বস্তুটিও অন্য কোনো কিছুর ওপর বল প্রয়োগে ব্যর্থ।

আইএসএস-এ ঠিক এই ব্যাপারটিই ঘটে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন সব সময় পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। অর্থাৎ, সব সময় নিচের দিকে পতিত হচ্ছে। তবে ভূপৃষ্ঠের ওপরে পতিত হয় না। বরং পৃথিবীর চারদিকে ঘূর্ণনরত অবস্থায় পৃথিবীর ওপরের মেরু থেকে পৃথিবীর পাশ বেয়ে নিচের মেরুর দিকে পড়ছে। এভাবেই পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকে। এ কারণেই মহাশূন্যে নভোচারীরা ভেসে থাকেন। ওজনশূন্যতা অনুভব করেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, একাদশ শ্রেণি, খুলনা পাবলিক কলেজ

সূত্র: অ্যাস্ট্রোক্যাম্প ডট ওআরজি