সফলভাবে চাঁদে নামল নাসার অডিসিয়াস

নাসার নভোযান ‘অডিসিয়াস’ চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করেছেছবি: ইনটুইটিভ মেশিনের সৌজন্যে

৫০ বছরেরও বেশি সময় পর ফের চাঁদে অবতরণ করল মার্কিন নভোযান ‘অডিসিয়াস’। গত ২২ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ২৩ মিনিটে এ নভোযান চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ‘ইস্টার্ন’এলাকায় অবতরণ করে। নভোযানটি নকশা ও পরিচালনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের হিউস্টনভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইনটুইটিভ মেশিনস। তাই একে ইনটুইটিভ মেশিনস-১ বা আইএম-১ বলা হচ্ছে।

এই অভিযানের বিশেষত্ব হলো, প্রথমবারের মতো বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের তৈরি মার্কিন নভোযান হিসেবে এটি চাঁদে অবতরণ করেছে। এই নভোযানটিকে বলা হচ্ছে ‘নোভা–সি’ ক্লাস বা শ্রেণির নভোযান। নোভা-সি নাসার ‘কমার্শিয়াল লুনার পেলোড সার্ভিসেস’, অর্থাৎ বাণিজ্যিকভাবে চাঁদে মালামাল পরিবহন প্রকল্পের অংশ। এ শ্রেণির নভোযানগুলো স্বয়ংক্রিয়, মানববিহীন। প্রকল্পের নাম থেকেই বোঝা যায়, এগুলো তৈরি করা হয়েছে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন ছোটখাটো মালামাল চাঁদে পাঠানোর উদ্দেশ্যে।

এর আগে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয় অডিসিয়াস। এ প্রকল্পের জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ১১৮ মিলিয়ন ডলার

অডিসিয়াস যখন চাঁদে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন এর অবতরণ নিয়ে কিছুটা সংশয় দেখা দিয়েছিল। উচ্চতা ও আনুভূমিক বেগ নির্ধারণের লেজার ও স্বয়ংক্রিয় অবতরণে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু যন্ত্রাংশ সঠিকভাবে কাজ করছিল না। তবে পরে সবকিছু ঠিকভাবেই হয়েছে। এ জন্য নামার আগেই নতুনভাবে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার আপলোড করা হয়েছে অডিসিয়াসে।

এ প্রসঙ্গে ইনটুইটিভ মেশিনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তাঁর দলকে বলেন, ‘আমি জানি, অভিযানের ওই মুহূর্ত ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার। তবে আমরা এখন চন্দ্রপৃষ্ঠে ও মহাকাশযানটির সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান করছি। চাঁদে আপনাদের স্বাগত।’

সব ঠিক থাকলে নভোযানটি প্রায় সাত দিন সক্রিয় থাকবে সূর্যের আলোয়। তারপর চাঁদে সূর্যাস্ত হলে প্রচণ্ড শীতে এটি ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে পড়বে।

আরও পড়ুন

এর আগে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয় অডিসিয়াস। এ প্রকল্পের জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ১১৮ মিলিয়ন ডলার। বেসরকারি উদ্যোগ ও উন্নত প্রযুক্তির কারণে এ অভিযানে অনেক কম খরচ হয়েছে তুলনামূলকভাবে, এটাও এ অভিযানের একটি বিশেষত্ব।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ চাঁদে অভিযান চালাচ্ছে। কিছুদিন আগে, গত ৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের এরকম আরেকটি নভোযান পেরিগ্রিন চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা করে। তবে এটি সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করতে পারেনি। নভোযানের ট্যাংক ফুটো হয়ে জ্বালানি বেরিয়ে যাওয়ায় এ অভিযান ব্যর্থ হয়। অডিসিয়াসের অবতরণ তাই স্বস্তি যোগাচ্ছে নাসাকে। আবার ডিসেম্বরে রুশ নভোযান লুনা ২৫ চাঁদে অবতরণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। একই সময়ে জাপানের মুন স্নাইপার সফলভাবে নেমেছে চাঁদের মাটিতে। আর গত বছর ভারতের চন্দ্রযান ৩-এর সফলতা গোটা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে।

সূত্র: নাসা, ইনটুইটিভ মেশিনস, স্পেস ডটকম

আরও পড়ুন