বৃহস্পতির নতুন ১২ উপগ্রহ

সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতি। শুধু তা-ই নয়, সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক উপগ্রহও ঘুরছে এই বরফদানোকে কেন্দ্র করে। সম্প্রতি এমন তথ্যই জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী। গ্রহটিকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা আরও ১২টি চাঁদ বা উপগ্রহ শনাক্ত করেছেন তাঁরা। তাতে বৃহস্পতির চাঁদের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯২টি।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসোনিয়ান অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল অবজারভেটরি পরিচালিত মাইনর প্ল্যানেট সেন্টার (এমপিসি) নতুন এই ১২টি উপগ্রহের কক্ষপথ প্রকাশ করে। ফলে, শনিকে টপকে সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক উপগ্রহবিশিষ্ট গ্রহের মুকুট ওঠে বৃহস্পতির মাথায়।

শনির চারপাশে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা ৮৩টি চাঁদ শনাক্ত করেছেন। তবে এসব উপগ্রহের বাইরেও জ্যোতির্বিদরা শনির চারপাশে প্রায় ৩ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের প্রচুর পাথর খুঁজে পেয়েছেন। এগুলো নিয়ে এখনও বিস্তর গবেষণা করছেন তাঁরা। উপগ্রহের শর্ত পূরণ করলে আবারও শনি হতে পারে সবচেয়ে বেশি উপগ্রহের গ্রহ।

বৃহস্পতির চারপাশে উপগ্রহগুলোর কক্ষপথ ওপর থেকে ঠিক এরকম দেখায়।

২০২১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বৃহস্পতি গ্রহের চারপাশ পর্যবেক্ষণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির কার্নেগি ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্সের জ্যোতির্বিজ্ঞানী স্কট শেপার্ড। পর্যবেক্ষণের এসব তথ্য তিনি গত বছর জার্নালে রিভিউয়ের জন্য জমা দেন। যাচাই বাছাই শেষে সন্ধান মেলে নতুন এই ১২টি উপগ্রহের।

গবেষকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নতুন উপগ্রহগুলো বৃহস্পতি থেকে বেশ দূরে রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি উপগ্রহ আছে সবচেয়ে দূরে। বৃহস্পতিকে একবার প্রদক্ষিণ করতে এদের কোনো কোনোটির ৫৫০ দিনেরও বেশি সময় লাগে বলে ধারণা করছেন মাইনর প্ল্যানেট সেন্টারের বিজ্ঞানীরা।

নতুন এই চাঁদগুলো আকারেও বেশ ছোট। মাত্র ৫টি চাঁদের ব্যাস ৮ কিলোমিটারের বেশি। বাকিগুলো এর চেয়েও ছোট। তাই বিশেষ দূরবীন ছাড়া এসব চাঁদকে পৃথিবী থেকে দেখার সুযোগ নেই।

দূরবর্তী ৯টি চাঁদ বৃহস্পতির চারপাশে রেট্রোগ্রেড কক্ষপথে ঘুরছে। অর্থাৎ বৃহস্পতি নিজ অক্ষে যে দিকে ঘোরে, এগুলো ঘুরছে তার উল্টোদিকে। গ্রহের ঘূর্ণনের সঙ্গে একই দিকে উপগ্রহ ঘুরলে সেই উপগ্রহের কক্ষপথকে বলা হয় প্রোগ্রেড কক্ষপথ।

বৃহস্পতিকে একবার প্রদক্ষিণ করতে এদের কোনো কোনোটির ৫৫০ দিনেরও বেশি সময় লাগে বলে ধারণা করছেন মাইনর প্ল্যানেট সেন্টারের বিজ্ঞানীরা।

নতুন চাঁদগুলোর এই স্রোতের বিপরীতে ঘোরার ব্যাপারটি বিজ্ঞানীরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। ধারণা করছেন, এই ছোট ছোট উপগ্রহগুলো বড় কোনো উপগ্রহের ভাঙা অংশ হতে পারে। এমন হলে মহাকাশের বিপুল রহস্য ভাণ্ডারে যোগ হবে নতুন আরেক রহস্য। হাতের নাগালের এই রহস্য সমাধান করাও মানুষের জন্য খুব কঠিন কিছু হবে না বলেই আশা করছেন তাঁরা।

নতুন আবিষ্কৃত উপগ্রহগুলো ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানের জন্য দারুণ লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতি সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানার জন্য ২০২৪ সালের এপ্রিলে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি জুস (JUICE) নামের একটি মহাকাশ অভিযান পরিচালনা করবে। একই বছর অক্টোবরে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা তাদের ইউরোপা ক্লিপার নামের আরও একটি অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করেছে। এই দুটি অভিযান সফল হলে সমাধান হতে পারে নতুন এই চাঁদগুলোর রহস্য।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: স্কাই এন্ড টেলিস্কোপ ডট কম