শনির নতুন আরও ৬২ চাঁদ

শনির আরও ৬২টি নতুন উপগ্রহ বা চাঁদ আবিষ্কার করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এর মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি উপগ্রহবিশিষ্ট গ্রহ হিসেবে নিজের রাজত্ব পুনরুদ্ধার করেছে শনি। তাইওয়ানের অ্যাকাডেমিয়া সিনিকা ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস-এর পোস্টডক্টোরাল ফেলো এডওয়ার্ড অ্যাশটন এ গবেষণার নেতৃত্ব দেন। তাঁর নেতৃত্বে বিভিন্ন দেশের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি দল সন্ধান দেন এসব চাঁদের।

এই প্রথম সৌরজগতের কোনো গ্রহের উপগ্রহের সংখ্যা ১০০ ছাড়াল। আগে শনির উপগ্রহ সংখ্যা ছিল ৮৩টি। নতুন ৬২টি উপগ্রহ নিয়ে শনির চাঁদের বর্তমান সংখ্যা ১৪৫।

অনিন্দ্য সুন্দর বলয় শনির প্রধান বৈশিষ্ট্য। গ্যাসদানব এই গ্রহটি তার বলয়ের জন্যই আমাদের কাছে বেশি পরিচিত। মজার বিষয় হলো, বলয়ের পাশাপাশি সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি উপগ্রহবিশিষ্ট গ্রহ হিসেবেও শনির পরিচিতি বেশ। এই কয়েকদিন আগেও অন্য সব গ্রহের তুলনায় শনির উপগ্রহ সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। এরপর এ বছর ফেব্রুয়ারিতে জানা গেল বৃহস্পতির নতুন ১২ চাঁদ আবিষ্কারের খবর। ফলে, বৃহস্পতির কাছে ‘চন্দ্ররাজ’ খেতাব হারায় শনি। এই ৬২টি উপগ্রহ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে আবারও নিজের হারানো মর্যাদা পুনরুদ্ধার করেছে গ্রহটি।

এবারে শনির চাঁদ আবিষ্কারের জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেছেন ‘শিফট অ্যান্ড স্ট্যাক’ পদ্ধতি। সহজ কথায়, এ পদ্ধতিতে একই গতিতে চলমান মহাকাশের একগুচ্ছ ছবি নেওয়া হয়। এরপর এসব ছবি বিশ্লেষণ করে নতুন চাঁদ শনাক্ত করা হয়। আকারে ছোট ও অনুজ্জ্বল হওয়ার কারণে অনেক চাঁদ একক ছবিতে ধরা পড়ে না। এসব চাঁদ খুঁজে পাওয়ার জন্য তাই বেশ কার্যকর এ পদ্ধতি।

সৌরজগতের দুই বরফদানো—নেপচুন ও ইউরেনাসের উপগ্রহ খোঁজার জন্য এর আগে বিজ্ঞানীরা এ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। তবে শনির বেলায় এই প্রথম ‘শিফট অ্যান্ড স্ট্যাক’ পদ্ধতি ব্যবহার করা হলো।

হাওয়াইয়ের মাউনা কেয়া পর্বতের চূড়ায় অবস্থিত কানাডা-ফ্রান্স-হাওয়াই টেলিস্কোপ (সিএফএইচটি)। এই দুরবিনটির সাহায্য শনি গ্রহকে পর্যবেক্ষণ করেন বিজ্ঞানীরা। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত—এ সময়ের মধ্যে তিন ঘন্টা পরপর তোলা হয় শনির চারপাশের ছবি। ফলে, বিজ্ঞানীদের চোখে প্রথমবারের মতো শনির এসব নতুন চাঁদ ধরা পড়ে। চাঁদগুলো আকারে বেশ ছোট। এমনকি এদের কোনো কোনোটির ব্যাস মাত্র আড়াই কিলোমিটার।

এর আগে, ২০১৯ সালে শনির কিছু চাঁদ শনাক্ত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে সেগুলো আসলে চাঁদ নাকি গ্রহাণু, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে বিজ্ঞানীরা এসব ছোট ছোট উপগ্রহের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারপর নিশ্চিত হয়েছেন, এরা গ্রহাণু নয়। গ্যাসদানো শনিকে নিয়মিত প্রদক্ষিণ করছে এরা। অর্থাৎ, এরা আসলেই শনির উপগ্রহ।

প্রায় দুই বছর সময় নিয়ে বিজ্ঞানীরা শনি গ্রহের চারপাশের হাজারো ছবি বিশ্লেষণ করেছেন। গবেষক দলটি শুরুতে ৬৩টি বস্তুকে চাঁদ হিসেবে সন্দেহ করেছিলেন। ২০২১ সালেই ১টি চাঁদের ব্যাপারে নিশ্চিত হন তাঁরা। সে সময় তা প্রকাশ করেছিলেন। বাকি ৬২টি চাঁদের খবর গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ধীরে ধীরে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

নতুন আবিষ্কৃত চাঁদগুলোকে ‘অনিয়মিত চাঁদ’ বা ‘ইরেগুলার মুনস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন গবেষকেরা। এ ধরনের চাঁদগুলো মূলত গ্রহের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে গ্রহাণু আটকা পড়ে তৈরি হয়। এ উপগ্রহগুলো উপবৃত্তাকার কক্ষপথে গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে। আর নিয়মিত উপগ্রহগুলোর তুলনায় গ্রহের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে।

শনির ‘নিয়মিত চাঁদ’ বা ‘রেগুলার মুনস’-এর সংখ্যা ২৪টি। বাকি ১২১টি অনিয়মিত চাঁদ। গ্রহ হবার যেমন বাঁধাধরা কিছু শর্ত থাকে, উপগ্রহের বেলায় তেমনটা নেই। তাই জ্যোতির্বিজ্ঞান যত এগোচ্ছে, ততই সম্ভাবনা বাড়ছে নতুন উপগ্রহ শনাক্তের। নতুন পদ্ধতিতে এমন সব উপগ্রহের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে, যা আগে কখনো সম্ভব হয়নি। এ কারণে মূলত এখনও গ্রহগুলোর নতুন উপগ্রহ আবিষ্কৃত হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: স্পেস ডট কম