আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ, E=mc2। সেটা আমাদের বলে, স্থির ভর শক্তিতে রপান্তরিত হতে পারে। এর আরেকটা অর্থ, বস্তুর ভর হারিয়ে যেতে পারে। নিউক্লিয়ার ফিশন বা ফিউশন বিক্রিয়ায় এটা খুবই সাধারণ ঘটনা। অল্প পরিমাণে হলেও পৃথিবীর বুকে নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়া সবসময়ই হচ্ছে। আইনস্টাইনের সমীকরণ থেকেই আবার বোঝা যায়, বিপরীত ঘটনাও ঘটতে পারে। মানে শক্তি ভরে রূপান্তরিত হতে পারে। ১৯৩২ সালে মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী কার্ল ডেভিড অ্যান্ডারসন সে ধরনের একটি প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণও করেন। তিনি দেখেন, গামা রে ফোটনের শক্তি থেকে ইলেক্ট্রন-পজিট্রন তৈরি হতে পারে।
মহাকাশে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনায় নিয়মিতই বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বাইরে মহাকাশযান, কৃত্রিম উপগ্রহ বা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পাঠাচ্ছেন। পৃথিবী থেকে কিছু ভর বাইরে যাচ্ছে। আবার মহাকাশের উল্কা, ধূলিকণা বা স্পেসজাংকও পৃথিবীতে এসে পড়ছে। এত সব ঘটনার কারণে পৃথিবীর ভর যে পরিবর্তিত হচ্ছে, সেটা স্পষ্ট। কিন্তু সেই পরিবর্তনটা কেমন হচ্ছে? পৃথিবীর ভর কি বাড়ছে নাকি কমছে?
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রতিবছর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে মহাকাশ থেকে আসা ধূলিকণা ও স্পেসজাংকের মোট পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার টন বা প্রায় ৪০×১০৬ কেজি। পাশাপাশি প্রতিবছর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে প্রায় ৯৫ হাজার টন হাইড্রোজেন গ্যাস হারিয়ে যাচ্ছে মহাকাশে।
এখানেই শেষ নয়। ভরের পরিবর্তনের পিছনে আরও কারণ আছে। পৃথিবীর কেন্দ্রে তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের কারণে প্রতিবছর প্রায় ১৬০ টন ভর শক্তিতে রূপান্তর হচ্ছে। হাইড্রোজেন ছাড়াও বায়ুমণ্ডল থেকে মহাকাশে বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ টন হিলিয়াম। মহাকাশে পাঠানো মহাকাশযান বা অন্যান্য যন্ত্রপাতির ভর এসবের তুলনায় নগন্য বলা যায়।
সবকিছু মিলিয়ে বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবী প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার টন ভর হারাচ্ছে। শুনতে অনেক বেশি মনে হলেও, পৃথিবীর ভরের তুলনায় এটা খুবই সামান্য। পৃথিবীর ভর প্রায় ৫.৯৭ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন টন। এই হারে ভর হারাতে থাকলে পৃথিবীর সম্পূর্ণ ভর হারিয়ে যেতে সময় লাগবে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি কোটি বছর! এটা বিশাল একটা সময়। খোদ মহাবিশ্বের বয়সেরও প্রায় কয়েক লাখ গুণ। বর্তমান বয়স প্রায় ১৩৫০ কোটি বছর।
পৃথিবীর সামান্য ভর কমার পরিমাণ এতোই সামান্য যে, দৈনন্দিন জীবনে এর প্রভাব টের পাবো না আমরা। পুরোপুরি ভর হারিয়ে যাওয়ার বহু আগে পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে যাবে প্রাণের অস্তিত্ব। এমনটাই মনে করেন বিজ্ঞানীরা। তাই, পৃথিবীর ভর কমলেও এটা নিয়ে আসলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা
সূত্র: সায়েন্স ফোকাস