অক্টোবরে জোড়া ধূমকেতু আর উল্কাবৃষ্টি দেখা যাবে আকাশে
আকাশপ্রেমীদের জন্য একটি দারুণ খবর আছে। এই অক্টোবর মাসে রাতের আকাশে দেখা যেতে পারে এক বিরল মহাজাগতিক উৎসব। একই রাতে দুটি উজ্জ্বল ধূমকেতুর সঙ্গে দেখা যাবে উল্কাবৃষ্টির মেলা। সব ঠিক থাকলে, এমন দৃশ্য হয়তো জীবনে একবারই দেখার সুযোগ পাবে পৃথিবীবাসি।
সম্প্রতি সূর্যের কাছাকাছি একটি নতুন ধূমকেতু দেখা গেছে। ধূমকেতুটির লেজ অনেক লম্বা। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘কমেট সি/২০২৫ আর২’। সংক্ষেপে একে ‘সোয়ান আর২’ নামে ডাকা হচ্ছে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর এই ধূমকেতুটি প্রথম আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সোয়ান যন্ত্রের ছবিতে এটি খুঁজে পান ইউক্রেনের শৌখিন জ্যোতির্বিদ ভ্লাদিমির বেজুগলি। হিসাব করে দেখা গেছে, এটি একটি দীর্ঘ-পর্যায়ের ধূমকেতু। প্রায় ২২ হাজার ৫৫৪ বছর পর এটি সূর্যের কাছে আসে। এর লেজটা অনেক লম্বা। আকাশে পরপর পাঁচটি পূর্ণিমার চাঁদ রাখলে যতটা জায়গা লাগে, এর লেজ ঠিক ততটা চওড়া!
এই ধূমকেতুটি ২১ অক্টোবর পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসবে। তখন আমাদের থেকে এর দূরত্ব থাকবে প্রায় ৪ কোটি কিলোমিটার। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এটি তখন খালি চোখে দেখা যাবে। আরও একটি সম্ভাবনা রয়েছে। ৪ থেকে ৬ অক্টোবরের মধ্যে পৃথিবী হয়তো এই ধূমকেতুটির ধূলিকণার ভেতর দিয়ে যাবে। ফলে আকাশে একটি নতুন উল্কাবৃষ্টিও দেখা যেতে পারে।
তবে ধূমকেতু দুটি যদি যাত্রা নিরাপদে শেষ করতে পারে, তবে ২০ থেকে ২৩ অক্টোবর হবে এগুলো দেখার সেরা সময়।
তবে গল্প এখানেই শেষ নয়। একই সময়ে আকাশে আরও একটি ধূমকেতু আসছে। এর নাম ‘কমেট সি/২০২৫ এ৬’। এর সংক্ষিপ্ত নাম ‘লেমন’। এই ধূমকেতুটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবিষ্কৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার মাউন্ট লেমন অবজারভেটরি এটি আবিষ্কার করে।
মজার ব্যাপার হলো, লেমন ধূমকেতুটিও ২১ অক্টোবর পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সোয়ান আর২-এর মতো এটিও তখন বেশ উজ্জ্বল হতে পারে। হয়তো এটিও খালি চোখে দেখা যাবে।
তার মানে, একই রাতে আকাশে দুটি উজ্জ্বল ধূমকেতু দেখা যাবে। তবে আসল উৎসব এখনো বাকি। ২০ ও ২১ অক্টোবর রাতে হবে ওরিয়নিড উল্কাবৃষ্টি। তখন প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২০টি উল্কা দেখা যেতে পারে।
সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, ২১ অক্টোবর রাতে থাকবে অমাবস্যা। ফলে আকাশে চাঁদের কোনো আলো থাকবে না। এমন নিকষ কালো আকাশে দুটি ধূমকেতু আর উল্কাবৃষ্টির মিলনমেলা দেখার সুযোগ হাতছাড়া করা কি ঠিক হবে?
তবে একটা কথা মনে রাখা দরকার। ধূমকেতুরা বেশ খামখেয়ালী স্বভাবের হয়। অনেক সময় সূর্যের কাছাকাছি এসে উত্তাপে এরা ভেঙে যায়। আবার মাঝেমধ্যে যথেষ্ট উজ্জ্বল হয় না।
তবে ধূমকেতু দুটি যদি যাত্রা নিরাপদে শেষ করতে পারে, তবে ২০ থেকে ২৩ অক্টোবর হবে এগুলো দেখার সেরা সময়। এগুলো খালি চোখে দেখা না গেলেও সমস্যা নেই। একটি ভালো বাইনোকুলার বা ছোট টেলিস্কোপ দিয়ে এদের সহজেই দেখা যাবে।
এর আগে ২০২০ সালের গ্রীষ্মে নিওওয়াইজ (NEOWISE) ধূমকেতুটি খালি চোখে দেখা গিয়েছিল। তাই এবারের এই মহাজাগতিক উৎসবের জন্য তৈরি থাকুন। এমন সুযোগ কিন্তু বারবার আসবে না!
