জেমস ওয়েবের ছবিতে প্রাচীন দুই গ্যালাক্সি

জেমস ওয়েবের চোখে প্যান্ডোরা গ্যালাক্সিপুঞ্জছবি: নাসা

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের ছবি থেকে বহুদূরের দুটি গ্যালাক্সি শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। সর্বোচ্চ দূরত্বের দিক থেকে গ্যালাক্সি দুটি দ্বিতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।  বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব অনুযায়ী, গ্যালাক্সির বিন্যাস থাকার কথা মহাকাশজুড়ে। তেমনটাই দেখা গেল নতুন এ আবিষ্কারের মাধ্যমে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে বিগ ব্যাং তত্ত্ব আরেকবার সঠিক বলে প্রমাণিত হলো। অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারস-এ গত ১৩ নভেম্বর, সোমবার গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি দল জেমস ওয়েব নভোদুরবিন ব্যবহার করে দূরবর্তী এই গ্যালাক্সি দুটি আবিষ্কার করেন। তাঁরা মূলত সাড়ে তিন’শ কোটি আলোকবর্ষ দূরের প্যান্ডোরা গ্যালাক্সিপুঞ্জ বা অ্যাবেল ২৭৪৪–--এর পেছনে কী লুকিয়ে আছে, তা দেখার চেষ্টা করছিলেন। অবশেষে মহাকর্ষীয় লেন্সিং ব্যবহার করে দেখতে পান অনাবিষ্কৃত গ্যালাক্সি দুটি। একটির নাম দেওয়া হয়েছে আনকভার-জেড১২ (UNCOVER-z12), অন্যটি আনকভার-জেড১৩ (UNCOVER-z13)।

পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্যান্ডোরা ক্লাস্টারের গ্যালাক্সিগুলোর ভর স্থান-কালকে বাঁকিয়ে দেয়। এ ঘটনা মহাকর্ষীয় লেন্সিং নামে পরিচিত। স্থান-কালের চাদর বেঁকে যাওয়ার ফলে পেছনের অদেখা আলোক রশ্মিকে দেখা যায় বিবর্ধিত অবস্থায়।

কোনো গ্যালাক্সি কতদূরে আছে, তা জানা যায় গ্যালাক্সি থেকে আসা আলোর রেড শিফট বা লোহিত সরণ হিসেব করে। আনকভার-জেড১৩-এর রেড শিফট ছিল ১৩.০৭৯। এটি এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দূরতম গ্যালাক্সি। পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। আর আনকভার জেড-১২-এর রেড শিফট ছিল, ১২.৩৯৩। বিগ ব্যাং-এর ৩৩ থেকে ৩৫ কোটি বছরের মধ্যেই জন্ম হয়েছিল এগুলোর। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দূরের গ্যালাক্সির নাম, জেডাব্লিউইএস-জিএস-জেড১৩-০। ২০২২ সালে জেমস ওয়েবের সাহায্যেই এটি আবিষ্কৃত হয়। এর রেড শিফট ছিল ১৩.২।

কোনো বস্তু থেকে আলো নির্গত হলে আলোকরশ্মি মহাশূন্য ধরে ছুটতে শুরু করে। যে বস্তু থেকে আলোক রশ্মি নির্গত হচ্ছে; সেটি যদি দূরে সরে যায়, তবে আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য পর্যবেক্ষকের কাছে বাড়তে শুরু করে। অর্থাৎ আলো ধীরে ধীরে লাল বর্ণের দিকে যায়। এটি একধরনের ডপলার ক্রিয়া। সহজ কথায় এটাই রেড শিফট বা লোহিত সরণ।

আবিষ্কৃত নতুন দুই গ্যালাক্সি আনকভার-জেড১২ ও আনকভার-জেড১৩।
ছবি: নাসা

আকৃতির দিক থেকেও নতুন গ্যালাক্সি দুটো অনন্য। সাধারণত অনেক দূরের গ্যালাক্সিগুলো ছবিতে বিন্দুর মতো দেখায়। কিন্তু এ দুটোর একটি দেখতে বাদাম, অন্যটি পশমি বলের মতো। অর্থাৎ আকারে বেশ কিছুটা বড় দেখা গেছে এগুলোকে। পাশাপাশি এগুলোর আকৃতির ভিন্নতাও শনাক্ত করা গেছে।

একই উপাদানে গঠিত হলেও এগুলোর আকৃতি কীভাবে ভিন্ন হলো, সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন। দলটির এক গবেষক জোয়েল লেজা বলেন, ‘এসব দূরবর্তী গ্যালাক্সির আলো পৃথিবীর চেয়েও প্রায় ৩ গুণ বেশি পুরোনো। এগুলো আসলে বাতিঘরের মতো। প্রাচীন মহাবিশ্বের পাতলা হাইড্রোজেন গ্যাসের মধ্য দিয়ে আলো পাঠায়। মহাজাগতিক সূচনা লগ্নে কীভাবে এ ধরনের গ্যালাক্সি তৈরি হলো, তার পেছনের জটিল পদার্থবিজ্ঞান বোঝার একমাত্র উপায় এই আলো।

এসব প্রাচীন গ্যালাক্সি থেকে শিশু মহাবিশ্বের বিবর্তন সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়। সমাধান মেলে অনেক অজানা রহস্যের। ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযান ও গবেষণার জন্য এসব আবিষ্কার তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক: প্রদায়ক, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: নাসা, সায়েন্স অ্যালার্ট, স্পেস ডট কম