শিগগিরই চাঁদে স্যাটেলাইট পাঠাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুর দিকে চাঁদে স্যাটেলাইট পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অ্যাস্পায়ার টু ইনোভেট বা এটুআই প্রোগ্রাম কর্তৃপক্ষ।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে গ্রেট লুনার এক্সপিডিশন ফর এভরিওয়ান বা গ্লি (GLEE) মিশনের আওতায় বাংলাদেশ চাঁদে স্যাটেলাইট পাঠাবে। নাসার এ প্রকল্পে মোট ২২টি দেশ অভিযান চালাবে চাঁদে। বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। অনেক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে চাঁদে অভিযানের এ সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ।
এ ২২টি দেশই চাঁদের বিভিন্ন স্থানে স্যাটেলাইট পাঠাবে। ফলে ওই স্যাটেলাইটগুলো থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বোঝা যাবে চাঁদের আবহাওয়া। আসলে মানুষের বসবাসের জন্য চাঁদ কতটা উপযোগী তা পরীক্ষা করাই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
এটুআই প্রজেক্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ যে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে প্রেরণ করবে তার নাম ‘ফেমটো স্যাটেলাইট’। আকারে খুবই ছোট এটি। ভর মাত্র ২০ গ্রাম। এ স্যাটেলাইট তৈরির প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছে নাসার কলোরাডো স্পেস গ্র্যান্ট কনসোর্টিয়াম।
নাসা থেকে স্যাটেলাইটের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ২০২২ সালে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। সেই যন্ত্রাংশগুলো দেশে বসেই অ্যাসেম্বেলি করবে বাংলাদেশ টিম। এ প্রকল্পে বাংলাদেশের ৬০ জন কাজ করছেন। এর মধ্যে ৪৫ জন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
অ্যাসেম্বেলি করার পর তা টেস্ট করে স্যাটেলাইটের প্রোগ্রামিংও করা হবে দেশেই। এরপর এই মিশন নিয়ে একটা পরিকল্পনা পাঠাতে হবে নাসার দপ্তরে। সেই পরিকল্পনায় কোডিং থেকে শুরু করে প্রোগ্রামিংসহ যাবতীয় বিষয় উল্লেখ থাকবে। তাছাড়া চাঁদে এই স্যাটেলাইট কী কাজ করবে, সেটাও পরিকল্পনার মধ্যে জানাতে হবে। স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের আগে তা পাঠাতে হবে নাসার দপ্তরে। এরপর স্যাটেলাইটের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সব কিছু ঠিক থাকলে নাসার সহযোগিতায় উৎক্ষেপণ করা হবে স্যাটেলাইটটি। সেখানে চাইলে বাংলাদেশ টিম সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবে। তবে বাংলাদেশের সদস্যদের নিজ খরচে যেতে হবে উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে।
এ ব্যাপারে এটুআই প্রজেক্টের টিম লিডার জাহিদ হাসান শোভন বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম স্পেস মিশন এটি। এর সাহায্যে আমরা তিনটি ইতিহাস গড়তে যাচ্ছি। চাঁদের বুকে প্রথম স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছি, এটাই বাংলাদেশের প্রথম গভীর মহাকাশ মিশন এবং বাংলাদেশে প্রোগ্রামিং করা প্রথম স্যাটেলাইট এটি। এখান থেকে অর্জিত জ্ঞান বা স্কিল কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে মহাকাশ পর্যবেক্ষণে কাজে লাগাতে পারবো।’
এটুআই প্রাক্তন পরিচালক ও বর্তমানে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবির বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জিত হবে। বাংলাদেশও এর মধ্যে চাঁদে তার স্থায়িত্ব প্রতিষ্ঠা করবে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। এই সময়ের মধ্যে আমরা রকেট এবং স্যাটেলাইট উভয় নিয়েই কাজ করবো। এই স্যাটেলাইটে থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বোঝা যাবে চাঁদ বসবাসের জন্য কতটা উপযোগী।’
চাঁদে বসতি গড়ে তোলার জন্য এর মধ্যেই কাজ শুরু করেছে নাসা। আর্টেমিস প্রোগ্রামের প্রথম মিশন আর্টেমিস ১ ইতিমধ্যে সফলভাবে ঘুরে এসেছে চাঁদের কক্ষপথে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৪ সালের নভেম্বরে আর্টেমিস ২ চাঁদের কক্ষপথে ঘুরে আসবে। আর ২০২৫ সালে আর্টেমিস ৩ মিশনে ফের চাঁদে নামবে মানুষ। এবার অবশ্য চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মানুষ পাঠাবে নাসা। এই অঞ্চল আমাদের কাছে এখনও অজানা। তাই সেখানকার বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ভালো করে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই ২২টি দেশের স্যাটেলাইট পাঠিয়ে সেসব তথ্য বিশ্লেষণ করবে নাসা। ভবিষ্যতে হয়ত চাঁদের মাটিতে তৈরি হবে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট।