মহাবিশ্বের কথা
আকাশ ও পৃথিবীর সংযোগস্থলে যাওয়া যায় না কেন
কমবেশি সব মানুষই রাতের আকাশ দেখে মুগ্ধ হয়েছে। অনেকে মহাবিশ্বের রহস্য সমাধানের চেষ্টা করেছে, সফলও হয়েছে। মহাবিশ্বের কথা নামে এই বইয়ে সেই সেই রহস্যের কথা ছোটদের জন্য তুলে ধরা হয়েছে সহজ ভাষায়। বইটি প্রকাশিত হয়েছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘রাদুগা’ প্রকাশন থেকে, ১৯৮৩ সালে। ফেলিক্স ক্রিভিনের লেখা বইটি রুশ থেকে অনুবাদ করেছেন অরুণ সোম। ছবি এঁকেছেন গালিনা সেমিওনভা। বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকদের জন্য বইটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে…
আচ্ছা বলো দেখি, এতবার আমরা আকাশ আর পৃথিবীর সংযোগস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু কখনও পৌঁছাতে পেরেছি কি?
আমরা যখন এমন কোনো মাঠে এসে দাঁড়াই যেখান থেকে অনেক অনেক দূর পর্যন্ত চোখে পড়ে, তখন দেখতে পাই দূরে আকাশ পৃথিবীর সঙ্গে এসে মিলেছে, পৃথিবী ও আকাশ এসে মিলেছে একটা সরু লম্বা দাগে। আমরা ওই দাগটাকে কাছ থেকে দেখার উদ্দেশ্যে সে দিকে রওনা দিই। আমাদের বড় সাধ হয় ওটাকে কাছ থেকে দেখার, কিন্তু অনেকটা যেন অজান্তেই সে আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে।
কেন দূরে সরে যায়? আমরা তো কেবল তাকে একবার দেখতে চাই—এর বেশি কিছু তো আর নয়!
না, সে ধরা দেয় না। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ সে ভয় পায়। আমরা এক পা ফেললাম কি অমনি সেও এক পা পিছু হটে যায়। আমরা আরও এক পা ফেলি, সেও আরও এক পা পিছু হটে। আবার আমরা যদি তার কাছ থেকে সরে যাই, তাহলে সে আমাদের পেছন পেছন আসে। আমরা যদি সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন গাড়ি ছুটিয়ে চলি তাহলেও সে আমাদের থেকে পিছিয়ে থাকবে না, যদিও সব সময় দূরত্ব বজায় রাখবে।
বজায় রাখবে একই দূরত্ব। তার কাছে কখনোই পৌঁছনো যাবে না। সারা জীবন চললেও কখনোই পৌঁছাতে পারবে না। কিন্তু তাই বলে হতাশ হওয়া যাবে না।
এই অদ্ভুত দাগটা যখন সরে যায় তখন আমাদের সামনে তা খুলে দেয় পৃথিবীর এক নতুন রূপ, এমন এক রূপ যা সে এর আগে আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিল।
অবশ্য সত্যি বলতে কি, ওখানে দাগ-টাগ কিছুই নেই। আমাদের কেবল মনে হয় যে একটা সরু লম্বা দাগ আছে, যেহেতু পৃথিবী গোল, আর ওই জায়গাটায়, যেখানে পৃথিবী গোল হয়ে গেছে, সেখানে মনে হয় আকাশ বুঝি পৃথিবীর সঙ্গে এসে মিলেছে।
আর এমন যে মনে হয় সেটা তো ভালোই—কী বলো?
কেননা আকাশের সঙ্গে এসে মিলতে, তাকে অন্যান্য জগতের কথা জিজ্ঞেস করতে পৃথিবী তো উৎসুক হবেই, আর আমাদের পৃথিবীর হালচাল দেখতে পাওয়া আকাশের পক্ষেও ভালো; পৃথিবীর কাছ থেকে আকাশের যে শেখার মতো কিছু নেই, তা-ই বা কে বলতে পারে?