মহাকাশে স্পেস জাঙ্কের ঝুঁকি

ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসার তথ্যমতে, পৃথিবীর কক্ষপথে বর্তমানে প্রায় ১৩ কোটি ১৪ লাখের বেশি ছোট-বড় মহাকাশীয় বর্জ্য বা স্পেস জাঙ্ক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে ১০ সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় আকারের বর্জ্য আছে প্রায় ৩৬ হাজার ৫০০টি। আর ১-১০ সেন্টিমিটারের ছোট বর্জ্য রয়েছে ১০ লাখের বেশি। আবার ১ মিলিমিটার থেকে ১ সেন্টিমিটার আকারের বর্জ্য রয়েছে প্রায় ১৩ কোটি। পৃথিবীর কক্ষপথে এগুলো ছুটে বেড়াচ্ছে বিক্ষিপ্তভাবে।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, মানুষের পাঠানো বেশির ভাগ স্পেস জাঙ্ক খুব দ্রুত লো-আর্থ অরবিটে চলে এসেছে। এর গতি অবিশ্বাস্যরকম বেশি। ঘণ্টায় গড় বেগ প্রায় ২৮ হাজার ৯৬৮ কিলোমিটার। এই গতি একটা বুলেটের চেয়েও প্রায় সাত গুণ বেশি। লো-আর্থ অরবিটে এসব নিয়ন্ত্রণহীন দ্রুত গতির স্পেস জাঙ্কের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মহাকাশভিত্তিক পরিষেবা, অনুসন্ধান ও গবেষণামূলক কাজে পাঠানো নতুন স্যাটেলাইটের জন্য একটা বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

ইসার তথ্য মতে, ১৯৫৭ সাল থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ পৃথিবীর লো অ্যান্ড হাই অরবিটে প্রায় ১৪ হাজার ৪৫০টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। এই পরিমাণ স্যাটেলাইট কক্ষপথে পাঠাতে প্রায় ৬ হাজার ৩০০ বার সফলভাবে রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ৬৩০টি স্পেস রকেট মিশন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে মহাকাশে। সে সব বর্জ্য রয়ে গেছে মহাকাশেই।

স্যাটেলাইট প্রেরণকারী দেশগুলো বিভিন্ন সময়ে শত শত অচল স্যাটেলাইট প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে নামিয়ে ধ্বংস করেছে। কিন্তু এমন অনেক স্যাটেলাইট এখনো কক্ষপথে রয়ে গেছে, যেগুলোর ওপর দেশগুলোর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

লিথুনিয়াভিত্তিক ন্যানো এভিয়নিকস ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, বর্তমানে পৃথিবীর লো অ্যান্ড হাই অরবিটে প্রায় ৯ হাজার ৯০০টি স্যাটেলাইট চালু রয়েছে। এর মধ্যে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রেরই আছে ৮ হাজার ১৩৭টি স্যাটেলাইট। এ ছাড়া চীন ৬৮৬টি, যুক্তরাজ্য ৬৫৮টি, ভারত ১০৫টি, জাপান ২০৯টি এবং বাংলাদেশ ১টি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আমল থেকে বর্তমানে রাশিয়া এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৫৫২টি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে পৃথিবীর কক্ষপথে।

বর্তমানে অচল হয়ে পড়া স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর কক্ষপথে সচল স্যাটেলাইটগুলোর জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে। হাজার হাজার স্যাটেলাইটের অচল অংশ পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে বেড়ানোর ফলে মাঝেমধ্যে সংঘর্ষও হচ্ছে সচল স্যাটেলাইটগুলোর সঙ্গে। অনেকগুলো আবার নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে ধ্বংস হয়ে লাখ লাখ টুকরো তৈরি করছে। এতে সচল স্যাটেলাইটও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

অবশ্য স্যাটেলাইট প্রেরণকারী দেশগুলো বিভিন্ন সময়ে শত শত অচল স্যাটেলাইট প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে নামিয়ে ধ্বংস করেছে। কিন্তু এমন অনেক স্যাটেলাইট এখনো কক্ষপথে রয়ে গেছে, যেগুলোর ওপর দেশগুলোর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে সেগুলো ফিরিয়ে আনার আর কোনো সুযোগ নেই এখন। এখন তাই বারবার এ বিষয়ক সচেতনতার কথা বলা হচ্ছে। তা না হলে ভবিষ্যতে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হতে পারে মানবজাতিকে।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ

সূত্র: ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি, এন টু ওয়াইও, নাসা ও ন্যানো এভিয়নিকস