অদ্ভুত হলেও সত্যি
মহাবিশ্বের জানা-অজানা ৭
অসীম, অন্ধকার, রহস্যময়, সুন্দর—সবগুলো বিশেষণ মহাবিশ্বের জন্য সত্যি। মহাবিশ্বের কোনো শেষ নেই। তাই গ্রহ, নক্ষত্রও গুণে শেষ করা যাবে না। প্রতিনিয়ত মহাবিশ্বে তৈরি হচ্ছে নতুন গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি। এ সব কিছু মিলিয়ে মহাবিশ্ব অসম্ভব সুন্দর। এ কারণেই হয়তো এর এত রহস্যময়তা। এই লেখায় তার কয়েকটি রহস্য জানার চেষ্টা করব।
১. পৃথিবীর বালুকণার চেয়ে নক্ষত্র বেশি
পৃথিবীতে ৫টি মহাসাগর ও দেড় লাখের বেশি নদী আছে। এসব সাগর, মহাসগর কিংবা নদীতে যতগুলো বালুর কণা আছে, মহাবিশ্বে আছে তারচেয়ে বেশি নক্ষত্র। সূর্য যেমন একটি নক্ষত্র। আসলে মহাবিশ্বে নক্ষত্র গুণে শেষ করা যাবে না। বিজ্ঞানীদের মতে, মহাবিশ্বে অন্তত এক বিলিয়ন ট্রিলিয়ন (বা ১০২১টি) নক্ষত্র আছে।
২. আমাদের কাছের ব্ল্যাকহোল ১,৫৬০ আলোকবর্ষ দূরে
বড় কোনো নক্ষত্র বিস্ফোরিত হলে সৃষ্টি হয় ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর। এই ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষ শক্তি এত শক্তিশালী যে এর থেকে কিছু পালাতে পারে না। সবকিছু টেনে নিয়ে যায় নিজের পেটের মধ্যে। এমনকি সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলে আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না ব্ল্যাকহোল থেকে। সৌভাগ্যক্রমে পৃথিবী থেকে সবচেয়ে কাছের ব্ল্যাকহোলটি প্রায় ১ হাজার ৫৬০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। এক আলোকবর্ষ মানে আলো এ বছরে যতটা পথ অতিক্রম করে। ব্ল্যাকহোলটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘গাইয়া-বিএইচ১’। এটি সূর্যের চেয়ে ৮ হাজার ২০০ গুণ ভারী। চলতি বছর জুলাই মাসে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে এই ব্ল্যাকহোলটির সন্ধান পাওয়া গেছে।
৩. স্পেসস্যুট পড়তে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা
মহাকাশে যাওয়ার সময় নভোচারীরা স্পেসস্যুট পরেন। নভোযাচীদের জন্য স্পেসস্যুট অত্যন্ত জরুরি। কারণ, স্পেসস্যুট নভোচারীদের উষ্ণ ও ঠান্ডা বাতাস সরবরাহ করে। পাশাপাশি স্যুটের ভেতরের বাতাসের চাপও ঠিক রাখে। কিন্তু এই স্পেসস্যুট পরতে প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় লাগে।
৪. প্রতিসেকেন্ডে বাড়ছে মহাবিশ্বে
মহাবিশ্ব অসীম, এ কথা আগেই বলেছি। ফলে মহাবিশ্বের কোনো কেন্দ্র নেই। প্রতিনিয়ত বাড়ছে মহাবিশ্ব। আপনি চাইলেও এর শেষ প্রান্তে পৌঁছাতে পারবেন না। মহাবিশ্ব প্রতি মেগাপারসেকে প্রতি সেকেন্ডে ৭৩ কিলোমিটার সম্প্রসারিত হয়। এ কথার মানে প্রতি ১ মেগাপারসেক দূরের গ্যালাক্সি আমাদের থেকে সেকেন্ডে ৭৩ কিলোমিটার বেশি দূরে সরে যায়। ১ পারসেক মানে আলোর বেগের ৩.২৬ আলোকবর্ষের সমান। আর মেগাপারসেক হলো তারচেয়েও ১০ লাখ গুণ বেশি।
৫. মহাবিশ্বের তুলনায় পৃথিবী অতি ক্ষুদ্র
মহাবিশ্বের তুলনায় পৃথিবী অত্যন্ত ক্ষুদ্র। আমাদের সূর্যকেও ক্ষুদ্রই বলা যায়। তবে সূর্যের তুলনায় পৃথিবী আরও আরও অনেক ছোট। সূর্যের মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ পৃথিবী এঁটে দেওয়া যাবে অনায়াসে।
৬. বুধ গ্রহে বছরের চেয়ে দিন বড়
পৃথিবীর একদিন হয় ২৪ ঘণ্টায় এবং বছর ৩৬৫ দিনে। অর্থাৎ বছরের চেয়ে দিন অনেক ছোট। কিন্তু বুধ গ্রহের একদিন তার বছরের চেয়ে ছোট। কারণ, বুধ গ্রহ অন্য যেকোনো গ্রহের চেয়ে সূর্যের কাছে। ফলে সূর্যের চারপাশে দ্রুত ঘুরে আসে। পৃথিবীর হিসেবে প্রায় ৮৮ দিনে একবার সূর্যের চারপাশে ঘুরতে পারে বুধ গ্রহ। কিন্তু এর নিজের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে প্রায় পৃথিবীর ১৭৬ দিন লাগে। অর্থাৎ বুধ গ্রহে একদিন হতে হতে পেরিয়ে যায় ২ বছর!
৭. গ্রহের মর্যাদা দিয়েও কেড়ে নেওয়া হয়েছে প্লুটোর
শৈশবে আমরা পড়েছি সৌরজগতে গ্রহ মোট ৯টি। এখন গুগলে সার্চ করলেই দেখতে পাবেন, গ্রহ আসলে ৮টি। তাহলে কি তখন ভুল পড়েছি? না। আসলে প্লুটো একসময় গ্রহই ছিল। ১৯৩০ সালে একে গ্রহের মর্যাদা দেওয়া হয়। কিন্তু গ্রহের মর্যাদা পাওয়ার ৭৬ বছর পর বিজ্ঞানীদের মনে হলো, গ্রহ হওয়ার মতো সব বৈশিষ্ট্য প্লুটোর নেই। তাই ২০০৬ সালে প্লুটোর গ্রহের মর্যাদা আবার কেড়ে নেওয়া হলো। প্লুটো এখন বামন গ্রহ, মানে গ্রহের চেয়ে কিছুটা ছোট। সৌরজগতে এমন বামন গ্রহ আছে মোট ৫টি।
