আগামীকাল দেখা যাবে বিরল সংকর সূর্যগ্রহণ

বিরল সংকর সূর্যগ্রহণ
এটি বিরল সংকর সূর্যগ্রহণগুলোর একটি। এক শতকে এরকম সূর্যগ্রহণ খুব বেশি দেখা যায় না। ২১ শতকে যেমন, পুরো ১০০ বছরে এরকম সংকর সূর্যগ্রহণ হবে মাত্র ৭ বার।

আগামী ২০ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার এ বছরের প্রথম পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। তবে বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চল থেকে দিনজুড়ে দেখা যাবে আংশিক সূর্যগ্রহণ। কথা হলো, পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হলে বাংলাদেশ থেকে কেন আংশিক সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে? কারণ, এটি বিরল সংকর সূর্যগ্রহণগুলোর একটি। এক শতকে এরকম সূর্যগ্রহণ খুব বেশি দেখা যায় না। ২১ শতকে যেমন, পুরো ১০০ বছরে এরকম সংকর সূর্যগ্রহণ হবে মাত্র ৭ বার। এর আগের বার সংকর সূর্যগ্রহণ হয়েছি ২০১৩ সালের নভেম্বরে, পরের বার দেখা যাবে ২০৩১ সালে নভেম্বরে। এর পরের বার এরকম সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে আরও প্রায় ১৩০ বছর পর, ২১৬৪ সালে।

প্রশ্ন হলো, সংকর সূর্যগ্রহণ কী? তার চেয়ে বড় কথা, সূর্যগ্রহণ আসলে কী? আসুন, সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করা যাক।

আমরা জানি, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। আর চাঁদ ঘুরছে পৃথিবীর চারপাশে। আসলে, পৃথিবী ও চাঁদ একটি যুগ্ম ব্যবস্থা হিসেবে একসঙ্গে সূর্যকে ঘিরে ঘুরছে। চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই। সূর্যের আলোই প্রতিফলিত হয় চাঁদের বুকে। এ আলোকে আমরা বলি জোছনা।

যেভাবে হয় সূর্যগ্রহণ

চাঁদ ও পৃথিবী বিরতিহীনভাবে ঘুরছে। সূর্যও ঘুরছে, তবে সে হিসেব আমাদের আপাতত প্রয়োজন নেই। তাই, আপাতত পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্যকে স্থির ধরতে পারি আমরা আলোচনার সুবিধার্থে।

সূর্য থেকে সরাসরি আলো আসে পৃথিবীতে। চাঁদ যেহেতু পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরে, তাই মাঝে মাঝে সূর্য ও পৃথিবী বরাবর যে সরলরেখা, সেখানে এসে পড়ে চাঁদ। ফলে কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আংশিক বা পুরো অংশ ঢাকা পড়ে চাঁদের পেছনে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের বেলা অন্ধকার হয়ে যায় নিমিষেই। এ ঘটনাকেই বলা হয় সূর্যগ্রহণ।

চাঁদ পৃথিবীকে প্রতি সৌরমাসে একবার প্রদক্ষিণ করে। এ জন্য তার লাগে প্রায় ২৯ দিনের মতো। যাহোক, সে অনুযায়ী প্রতিমাসেই একবার করে সূর্যগ্রহণ হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয় না। সূর্যগ্রহণ সাধারণত ছয়মাসে একবার হতে দেখা যায়। এর কারণ, পৃথিবী ও সূর্য বরাবর যে সরলরেখা, চাঁদের কক্ষপথ তার সঙ্গে ৫ ডিগ্রি কোণে অবস্থিত। শুধু তাই নয়, চাঁদের কক্ষপথও পরিবর্তনশীল। এ দুটি বিষয় না থাকলে প্রতিমাসেই আমরা নিয়ম করে একবার সূর্যগ্রহণ ও আরেকবার চন্দ্রগ্রহণ দেখতাম।

সংকর সূর্যগ্রহণের সময় নানা অঞ্চলের মানুষ একে দেখেন নানাভাবে

আগেই বলেছি, আগামী বৃহস্পতিবার যে সূর্যগ্রহণটি হতে যাচ্ছে, বিজ্ঞানীরা তাকে বলছেন হাইব্রিড সোলার এক্লিপস বা সংকর সূর্যগ্রহণ। এ ধরনের সূর্যগ্রহণ বেশ বিরল। প্রতি ১০০ বছরে হাতেগোণা কয়েকবার মাত্র দেখা যায়।

একইসঙ্গে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ ও বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ ঘটলে তাকে বলা হয় সংকর সূর্যগ্রহণ। পৃথিবীজুড়ে চাঁদের ছায়া তৈরি হয় এ সময়। একধরনের সূর্যগ্রহণ হিসেবে শুরু হয়ে শেষ হয় আরেক ধরনের সূর্যগ্রহণ হিসেবে।

মোট চার ধরনের সূর্যগ্রহণ ঘটতে পারে। পূর্ণ সূর্যগ্রহণ, আংশিক সূর্যগ্রহণ, বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ ও সংকর সূর্যগ্রহণ। পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদের পেছনে সম্পূর্ণরূপে ঢাকা পড়ে সূর্য। পুরো অন্ধকার হয়ে যায় দিন। অন্যদিকে আংশিক সূর্যগ্রহণের সময় সূর্য পুরোপুরি অন্ধকারে ঢাকা পড়ে না। বরং এর কিছুটা অন্ধকার হয় চাঁদের কারণে। দেখে মনে হয় সূর্যের অংশবিশেষ কালো হয়ে আছে। আর বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ সূর্যের মাঝখানের অংশটি ঢেকে ফেলে। এটাকে দেখা যায় রিং বা বলয়ের মতো। এক্ষেত্রে সূর্য একেবারে অদৃশ্য হয় না। চাঁদে ঢাকা অন্ধকার বৃত্তের চারপাশে সূর্যের আলোর উজ্জ্বল বলয়টি দেখা যায়। আর সংকর সূর্যগ্রহণের কথা তো আগেই বললাম।

মার্কিন শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট স্পেসএজ একাডেমির তথ্য অনুযায়ী, মোট সূর্যগ্রহণের ২৮ ভাগ পূর্ণ সূর্যগ্রহণ, ৩৫ ভাগ আংশিক, ৩২ ভাগ বলয়গ্রাস আর মাত্র ৫ ভাগ হয় সংকর সূর্যগ্রহণ।

যেভাবে দেখা যাবে আগামীকালকের সূর্যগ্রহণ
নাসা

আগামীকালকের সূর্যগ্রহণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে খুব ভালোভাবে দেখা যাবে। তবে সব জায়গায় দর্শক একই রকম সূর্যগ্রহণ দেখবেন না। অবস্থানের ভিন্নতার কারণে কারো কাছে এটা বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ, আবার কারো কাছে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হিসেবে দেখা যাবে।

বিজ্ঞানীদের হিসেব অনুযায়ী, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। অন্যদিকে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে স্থলভাগের তিনটি জায়গা—পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া, পূর্ব তিমুর ও ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম পাপুয়া থেকে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

সূর্যগ্রহণ একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। এ নিয়ে তাই ভয় বা দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তবে সূর্যগ্রহণের সময় চারপাশে উজ্জ্বলতা কম হওয়ায় সূর্যের যে অংশটি দেখা যায়, সেটা মারাত্মক উজ্জ্বল দেখায়। তাই এ সময় কোনোভাবেই খালি চোখে সূর্যের দিকে তাকানো উচিত নয়। তাকাতে হলে অবশ্যই ভালো রোদচশমা বা সূর্যগ্রহণ দেখার উপযুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত। নয়তো চোখের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

আগ্রহীদের জানিয়ে রাখি, এ বছরেই আবার সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে ২৪ অক্টোবরে। তবে, বলা বাহুল্য, সেটি সংকর সূর্যগ্রহণ হবে না।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: স্পেস ডট কম, উইকিপিডিয়া, নাসা