মহাকাশে আটকে পড়া চীনের নভোচারীরা ফিরেছেন পৃথিবীতে
চীনের শেনঝো-২০ মিশনের তিন নভোচারী নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। ৬ মাসেরও বেশি সময় চীনের তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে কাটিয়ে তাঁরা গত ১৪ নভেম্বর মঙ্গোলিয়ার মাটিতে পা রাখেন। কমান্ডার চেন ডং এবং তাঁর দুই সঙ্গী সুস্থ অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন।
নভোচারীরা যে নভোযানটিতে চড়ে পৃথিবীতে ফিরেছেন, সেটিতে তাঁদের ফেরার কথা ছিল না। তাঁদের ফেরার কথা ছিল শেনঝো-২০ নভোযানে। কিন্তু তাঁরা ফিরলেন শেনঝো-২১ নভোযানে। তাহলে তাঁদের নিজেদের শেনঝো-২০ যানটির কী হলো?
চীনের মহাকাশ সংস্থা চায়না ম্যান্ড স্পেস এজেন্সি জানিয়েছে, সেই নভোযানটি মহাকাশেই ফেলে আসা হয়েছে! কারণ, সেটি আর পৃথিবীতে ফেরার মতো নিরাপদ ছিল না।
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে যানটির ভিউপোর্ট বা জানালার কাঁচে সূক্ষ্ম ফাটল খুঁজে পেয়েছেন। তাঁদের ধারণা, মহাকাশে ঘন্টায় হাজার মাইল বেগে ছুটে আসা স্পেস জাঙ্ক বা মহাকাশীর বস্তুর সঙ্গে ধাক্কা লেগেই এই ফাটল হয়েছে। মানুষের চুল পরিমাণ একটা কণাও এই গতিতে একটা বুলেটের চেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে।
এই নভোচারীদের ৫ নভেম্বর ফেরার কথা ছিল। কিন্তু এই ফাটল ধরা পড়ার পর নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো পরিকল্পনাটি বাতিল করা হয়। তাঁদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে ৩১ অক্টোবর পৃথিবী থেকে নতুন একটি দল শেনঝো-২১ নিয়ে তিয়ানগং স্টেশনের পথে রওনা দেয়। সেই নতুন নভোচারীরা স্টেশনে পৌঁছানোর পর, পুরনো শেনঝো-২০-এর ক্রুরা ওই যানটি ব্যবহার করে ১৩ নভেম্বর নিরাপদে পৃথিবীর পথে রওনা দেন।
এই রদবদলের কারণে একটা নতুন জটিলতাও তৈরি হয়েছে। যে নতুন নভোচারীরা শেনঝো-২১ চেপে মহাকাশে গেলেন, তাঁরা তো এখন নভোযান শূন্য! মানে তাঁদের সঙ্গে ফেরার কোনো নভোযান নেই এখন।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, এই সমস্যারও সমাধান আছে। ভবিষ্যতে একটি উপযুক্ত সময়ে শেনঝো-২২ নামে একটি খালি নভোযান পাঠানো হবে। সেই রেসকিউ যানটিই শেনঝো-২১-এর নভোচারীদের ফিরিয়ে আনবে পৃথিবীতে।
এই পুরো ঘটনায় সবচেয়ে মজার বা অদ্ভুত ব্যাপার হলো, শেনঝো-২০ এর নভোচারীরা তাঁদের ৬ মাসের মিশনে মোট ৪ বার মহাকাশে হেঁটেছিলেন। আর তাদেঁর অন্যতম প্রধান কাজ ছিল, তিয়ানগং স্টেশনের বাইরে আবর্জনা-রোধী বর্ম স্থাপন করা! অথচ ভাগ্যের কী পরিহাস, সেই মহাকাশের আবর্জনার আঘাতেই তাদের নিজেদের ঘরে ফেরার যানটি ক্ষতিগ্রস্ত হলো।