পৃথিবীর দুটি চাঁদ থাকলে কী হতো

চাঁদ নিয়ে মানুষের আবেগ কম নয়। কোনো কালেই কম ছিল না। প্রাচীনকালেও মানুষ কাব্য লিখেছেন চাঁদ নিয়ে। একেবারে কাঠখোট্টা গম্ভীর মানুষটিও কখনো না কখনো চাঁদকে নিয়ে কল্পনা করেছেন। এই আধোছায়া আলো ছাড়াও, পৃথিবীর জোয়ার-ভাটা, ঋতু বৈচিত্র্য, দিন রাতের দৈর্ঘ্য ইত্যাদি ব্যাপারে চাঁদের সরাসরি ভূমিকা আছে।

চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। পৃথিবীর মহাকর্ষ টানের প্রভাবে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে অবিরাম। চাঁদ সূর্যের আলো প্রতিফলন করে। ফলে, রাতের আঁধারে পৃথিবী ভেসে যায় সম্মোহনী জোছনার আলোয়।

চাঁদ নিয়ে মানুষের আবেগ কম নয়। কোনো কালেই কম ছিল না। প্রাচীনকালেও মানুষ কাব্য লিখেছেন চাঁদ নিয়ে। একেবারে কাঠখোট্টা গম্ভীর মানুষটিও কখনো না কখনো চাঁদকে নিয়ে কল্পনা করেছেন। এই আধোছায়া আলো ছাড়াও, পৃথিবীর জোয়ার-ভাটা, ঋতু বৈচিত্র্য, দিন রাতের দৈর্ঘ্য ইত্যাদি ব্যাপারে চাঁদের সরাসরি ভূমিকা আছে।

গ্রহের চারপাশে উপগ্রহ থাকাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সৌরজগতে সূর্যের কাছের দুটি গ্রহের নেই কোনো উপগ্রহ। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। এছাড়া বাকী সব গ্রহের আছে একাধিক উপগ্রহ। প্রতিবেশি মঙ্গলেরই আছে দুইটি উপগ্রহ। শনির আছে সবচেয়ে বেশি। ৮২টি উপগ্রহ!

একাধিক উপগ্রহ থাকা গ্রহের রাতের আকাশ কেমন দেখায়, তা এখনও মানুষ স্বচক্ষে দেখেনি। কিন্তু, পৃথিবীরই যদি দুটি উপগ্রহ অর্থাৎ চাঁদ থাকতো, তাহলে কেমন হতো? পৃথিবী ও চাঁদ সম্পর্কে যেহেতু আমরা অনেক কিছুই এখন জানি, তাই কল্পনাটি করা যাবে খাঁটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে।

পৃথিবীর আকাশে এরকম একাধিক চাঁদ থাকলে রাতের পৃথিবী যে আরও উজ্জ্বল হতো, তা বলাই বাহুল্য। সৌন্দর্যের পাশাপাশি পৃথিবীর গতি-প্রকৃতিতেও আসতো পরিবর্তন।

চাঁদ কীভাবে তৈরি হয়েছিলো, তা নিয়ে অনেক হাইপোথিসিস প্রচলিত আছে। এর মধ্য সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হাইপোথিসিসটি হলো, প্রায় সাড়ে চারশ কোটি বছর আগে থিয়া নামের একটি গ্রহের সঙ্গে ধাক্কা লাগে পৃথিবীর। থিয়া গ্রহের আকৃতি মঙ্গলের সমান। পৃথিবী ও থিয়া গ্রহের আঘাতে ছিটকে যাওয়া অংশ থেকে তৈরি হয় চাঁদ। অনেকের মতে, সেসময় আসলে একটা নয়, তৈরি হয়েছিলো দুটি উপগ্রহ।

অন্য উপগ্রহটি ছিলো আমাদের আজকের চাঁদের চেয়ে আকারে বেশ ছোট। মোটামুটি এক হাজার কিলোমিটার ব্যাস। ভর প্রায় চাঁদের ১৩ ভাগের একভাগ।  পৃথিবী থেকে চাঁদ যতোদূরে, ততদূরেই ছিলো এই ছোট্ট উপগ্রহটির অবস্থান। তার ভাগ্যে কী হয়েছিলো তা বলছি একটু পরে। তার আগে চলুন কল্পনা করা যাক, বর্তমান পৃথিবীর চারপাশে এরই সমান একটি দ্বিতীয় চাঁদ থাকলে কেমন হতো?

প্রথমত, রাতের আকাশে বর্তমান চাঁদের পাশাপাশি দেখা যেত এর চেয়ে তিনগুণ ছোট আরেকটি চাঁদ। জোছনা রাতে আলো বেড়ে যাওয়ার কথা তো আগেই বলেছি। আকাশে দুটি চাঁদ দেখার দৃশ্যটিও নিঃসন্দেহে মনোমুগ্ধকর হতো।

ভর খুব বেশি না হওয়ায় দ্বিতীয় চাঁদটির জন্য পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার পরিমাণে তেমন একটা হেরফের হতো না। দুই চাঁদের টানে সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতা কিছুটা বাড়তো। কিন্তু সেটা আশংখ্যাজনক নয়।

এছাড়া পৃথিবীর আহ্নিক গতিও কিছু কমে যেত বলে মনে করেন অনেক বিজ্ঞানী। ফলে, দিন রাতের দৈর্ঘ্য সামান্য বাড়তো।

এভাবেই ছোট চাঁদটি পৃথিবীর চারপাশে ঘুরপাক খেত প্রায় এক কোটি বছর। এর মাঝে ধীরে ধীরে কমে আসতো এর গতি। দুইটি চাঁদই একে অপরের কাছাকাছি চলে যেত মহাকর্ষের কারণে। ফলে কক্ষপথের প্যাচে দুই চাঁদ একসময় সংঘর্ষের জড়িয়ে পড়তো। ঠিক সাড়ে চার কোটি বছর আগের মতো।

যাইহোক, ছোট চাঁদটির ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়তো বর্তমানে চাঁদের পৃষ্ঠে। কিছুটা হয়ত এসে পড়তো পৃথিবীতেও। অবশ্য বড় ধরণের কোনো ক্ষতি তাতে হতো না পৃথিবীর।

অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, সাড়ে চার কোটি বছর আগে এভাবেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছি পৃথিবীর অন্য চাঁদটি। এই ধারণার সপক্ষে অবশ্য বাস্তব কোনো প্রমাণ এখনও মেলেনি। কিন্তু আকাশে এরকম আকারের আরেকটি চাঁদ থাকলে ঘটতো এমন ঘটনাই।

এবার চলুন কল্পনা করা যাক, দ্বিতীয় চাঁদটি এখনকার চাঁদেরই সমান। আয়তন, ভর সবদিক দিয়ে একই। এর অবস্থান এখনকার পৃথিবীর থেকে চাঁদের অবস্থানের অর্ধেক দূরত্বে। তাহলে ব্যাপারটা কেমন হতো?

জোসনা ব্যাপারটা এখনকার মতো এতো মনোমুগ্ধকর হয়ত হতো না। দ্বৈত চাঁদের আলো এতোটাই বেশি হতো যে, নিশাচর প্রাণীদের দৃষ্টিশক্তি ও জীবনযাত্রায় আসতো ব্যাপক পরিবর্তন। এখনকার চেয়ে ৪গুণ শক্তিশালী জোয়ার-ভাটা তৈরি হতো শুধু এই দ্বিতীয় চাদের কারণেই। সাথে বর্তমান চাদের টান তো থাকতোই। জোয়ার ও ভাটার সময় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতার পার্থক্য হতো প্রায় ১ হাজার ফুট।

এই বিপুল জোয়ার-ভাটার কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের বসবাস প্রায় অসম্ভব হয়ে যেত। মানুষের বসবাস উপযোগী জায়গা কমে যেত পৃথিবীজুড়ে।

কিন্তু একবার আমরা এই নতুন পৃথিবীতে মানিয়ে নিতে পারলে, দুই চাঁদের ধবধবে জোছনা উপভোগ করতে পারতাম। দিন রাতের দৈর্ঘ্য বেড়ে যেত।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: হোয়াট ইফ শো