পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা কত

পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা নির্দিষ্টভাবে বলা মুশকিলছবি: সংগৃহীত
পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়লেও মানুষের চরম বিপদ হতে পারে। চরমাবস্থা হতে পারে আবহাওয়ার। এক ডিগ্রি তাপমাত্রা শুনে কম মনে হতে পারে এমনিতে। কিন্তু মানুষ বা পৃথিবীর প্রাণের জন্য এটা ভয়াবহ বিষয়।

পৃথিবী ছাড়া সৌরজগতের আর কোনো গ্রহে প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায়নি। মহাবিশ্বের ব্যাপারে আমরা এখনো অনেক কিছু জানি না। সৌরজগতের ব্যাপারে অবশ্য কিছুটা জানি, তবে অজানাও কম নয় নিতান্ত। তাই পৃথিবীর বাইরে আর কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব আছে আছে কি না, আমরা জানি না। তবে এখনো আর কোথাও প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

বেশ কয়েকটি কারণে পৃথিবী প্রাণোপযোগী। প্রথমত, পৃথিবী রয়েছে সূর্যের গোল্ডিলকস জোন বা বাসযোগ্য অঞ্চলে। অর্থাৎ পৃথিবী সূর্য থেকে খুব বেশি দূরেও নয়, আবার কাছেও নয়। এমন অবস্থায় আছে, যেখানে পানি জমে বরফে পরিণত হবে না, আবার তাপে বাষ্পেও পরিণত হবে না পানি। একে গোল্ডিলকস জোন বলে। দ্বিতীয়ত, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল। বায়ুমণ্ডলের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা স্থিতিশীল। 

পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। দিন ও বছরের দৈর্ঘ্য, তাপমাত্রা কোথায় পরিমাপ করা হচ্ছে, এগুলো মুখ্য বিষয়। এ ছাড়াও আরও কিছু বিষয় আছে। যেমন বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ। এক কথায় বললে, পৃথিবীতে কী পরিমাণ সূর্যের আলো আসে, পৃথিবী এর কতটা প্রতিফলিত করে মহাকাশে পাঠিয়ে দেয়, উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্যাসের পরিমাণ ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে পৃথিবীর তাপমাত্রা বা গড় তাপমাত্রা।

বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল স্থান পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার মালভূমি। সেখানকার গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৯৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পৃথিবী প্রতি ২৪ ঘন্টায় একবার নিজ অক্ষের ওপর ঘুরে আসে। তাই এর নির্দিষ্ট কোনো অংশ সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকতে পারে না। ফলে দিনে তাপমাত্রা বেশি হয়, রাতে কমে যায়। তবে সব অঞ্চলে এই কমা-বাড়ার পরিমাপ সমান হয় না। কারণ, পৃথিবী সূর্যের বিষুব রেখার দিকে প্রায় ২৩ ডিগ্রি কোণে ঝুঁকে থাকে। ফলে গ্রীষ্ম মৌসুমে দেখা যায়, পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে ঝুঁকে আছে। তখন সে অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ে। একই সময় পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ থাকে ঠিক বিপরীত পাশে। ফলে সে অঞ্চলে শীতকাল হয়। 

পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলে অবশ্য ঋতু এভাবে বদলায় না। নিরক্ষীয় অঞ্চলে তাপমাত্রা গড়ে বেশিই থাকে। তাই এই অঞ্চলে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের মতো ঠান্ডা ও গরম ঋতু দেখা যায় না। কারণ নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যের আলোর পরিমাণ খুব কম পরিবর্তিত হয়। তবে বর্ষাকালে কিছুটা পরিবর্তন আসে তাপমাত্রায়। 

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্যমতে, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগেই বলেছি, এটা স্থির নয়। যেমন, পৃথিবীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ইরানের লুট মরুভূমিতে, ৭০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৩ থেকে ২০০৯ সালে নাসার আর্থ অবজারভেটরির বিজ্ঞানীদের পরিচালিত একটি জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে। জরিপ করা সাত বছরের মধ্যে পাঁচ বছরই লুট মরুভূমি ছিল পৃথিবীর উষ্ণতম স্থান। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, এ পর্যন্ত ২০২৩ সাল ছিল গড়ে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। 

আবার বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল স্থান পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার মালভূমি। সেখানকার গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৯৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে স্যাটেলাইটের তথ্যমতে, সেখানকার তাপমাত্রা কমে মাইনাস ৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও পৌঁছেছিল। 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়লেও মানুষের চরম বিপদ হতে পারে। চরমাবস্থা হতে পারে আবহাওয়ার। এক ডিগ্রি তাপমাত্রা শুনে কম মনে হতে পারে এমনিতে। কিন্তু মানুষ বা পৃথিবীর প্রাণের জন্য এটা ভয়াবহ বিষয়। নাসার তথ্যমতে, শেষ বরফ যুগে উত্তর আমেরিকা প্রায় ৩ হাজার ফুট বরফের নিচে ছিল। তখন পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ছিল এখনকার চেয়ে মাত্র ৫ থেকে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, গড় তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বা কমলে কী প্রচণ্ড পরিবর্তন আসে জলবায়ুতে। সে জন্যই তাপমাত্রার এ ধরনের পরিবর্তন আমাদের জন্য আশঙ্কাজনক। 

সূত্র:  স্পেস ডট কম, ইউনিভার্স টুডে ডট কম