মহাকাশে প্রথম ১০

চলছে বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ ২০২২। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ প্রতিবছর ৪ অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবরকে বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্বের ৯৫টিরও বেশি দেশে মহাকাশ সংক্রান্ত নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহটি উৎযাপন করা হয়। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য—মহাকাশ এবং স্থায়িত্ব। বিশ্ব মহাকাশ সপ্তাহ উপলক্ষে আমাদের এই বিশেষ আয়োজনে থাকছে মানুষের মহাকাশজয়ের প্রথম ১০টি ঘটনা।

স্মার্টফোনের জিপিএস কিংবা আবহাওয়ার পূর্বাভাস যাই বলি না কেন, কৃত্রিম উপগ্রহ ছাড়া কল্পনা করা কঠিন। মার্কিন জরিপকারী সংস্থা স্ট্যাটিসটার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত মহাকাশে মোট সক্রিয় উপগ্রহের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৮৫২টি। এর ২ হাজার ৯৪৪টিই বার যুক্তরাষ্ট্রের। মহাকাশে প্রথম কোন উপগ্রহ পাঠানো হয়েছিল?  

নাসার পরিচালিত আর্টিমিস মিশনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো চাঁদের বুকে পড়বে কোন নারীর পদচিহ্ন। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালে আবারও চাঁদে যাবে মানুষ। মহাকাশ জয়ে প্রথম অভিযাত্রী কে ছিলেন? কিংবা মহাকাশের প্রথম নারী? মহাকাশে কি খেলাধুলা হয়েছে? মহাকাশের প্রথম ম্যারাথন সম্পর্কেই বা কতোটুকু জানি?

মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ

মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ

১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর। মানুষের তৈরি প্রথম কোন কৃত্রিম উপগ্রহ মহাকাশে যায়। স্পুটনিক নামের উপগ্রহটি তৈরি করেছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। স্পুটনিক প্রায় তিনমাসের মতো মহাকাশে ছিল। ১৯৫৮ সালের ৪ জানুয়ারী পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় ধ্বংস হয়ে যায়।

মহাকাশে প্রথম প্রাণী

কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো প্রায় চার বছরের মাথায় আবারও মহাকাশে অভিযান পরিচালনা করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। এবারে শধু যন্ত্র নয়। প্রাণী হিসেবে প্রথমবারের মহাকাশের যায় লাইকা নামের একটি কুকুর। ১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর, সোভিয়েত ইউনিয়ন মিশনটি পরিচালনা করে। তাপ ও চাপ জনিত কারণে লাইকা অবশ্য মিশন থেকে বেঁচে ফিরতে পারে নি।

মহাকাশে প্রথম প্রাণী লাইকা
চাঁদের বুকে প্রথম মহাকাশযান

চাঁদের বুকে প্রথম মহাকাশযান

১৯৬৯ সালে নীল আর্মস্ট্রং প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদের বুকে পা রাখেন। এর অনেক আগেই অবশ্য বিজ্ঞানীরা চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়েছিলেন। ১৯৫৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো চাঁদে মহাকাশযান পাঠায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। লুনা ২ নামের সেই মহাকাশযানটি অবশ্য চাঁদে অবতরণ করেনি। উদ্দেশ্যও অবতরণ ছিল না। মহাকাশযানটি সোজা গিয়ে আছড়ে পড়ে চন্দ্রপৃষ্ঠে।

প্রথম নভোচারী

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নভোচারী হিসেবে নাম লেখান, ইউরি আলেক্সায়েভিচ গ্যাগারিন। ভস্টক নামের মহাকাশযানে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করেন ২৭ বছর বয়সী এই পাইলট ও শিল্প প্রযুক্তিবিদ। সময় লেগেছিল মোটে ৮৯ মিনিট। ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল অভিযানটি পরিচালনা করে সোভিয়েত ইউনিয়ন।

প্রথম নভোচারী ইউরি আলেক্সায়েভিচ গ্যাগারিন
মহাকাশে প্রথম নারী ভ্যালেন্তিনা তেরেস্কোভা

মহাকাশে প্রথম নারী

১৬ জুন, ১৯৬৩। প্রথম নারী নভোচারী হিসেবে মহাকাশে যান ভ্যালেন্তিনা তেরেস্কোভা। ভ্যালেন্তিনা তেরেস্কোভা শুধু ইতিহাসের প্রথম নারী নভোচারী নন, একইসঙ্গে তিনি প্রথম বেসামরিক নাগরিক হিসেবেও মহাকাশে যান। পেশায় তিনি ছিলেন একজন টেক্সটাইল কর্মী।

উপমহাদেশের প্রথম নভোচারী

উপমহাদেশের প্রথম নভোচারী ভারতীয় সামরিক পাইলট রাকেশ শর্মা। ১৯৮৪ সালের ৩ এপ্রিল, পৃথিবীর ১৩৮তম ব্যক্তি হিসেবে তিনি মহাকাশে যান। পৃথিবীর বাইরে কাটিয়ে আসেন ৭ দিন, ২১ ঘন্টা এবং ৪০ মিনিট।

উপমহাদেশের প্রথম নভোচারী রাকেশ শর্মা (মাঝে)
মহাকাশে প্রথম খেলাধুলা

মহাকাশে প্রথম খেলাধুলা

মহাকাশে আবার খেলাধুলা! একটু অবাক লাগলেও ব্যাপারটা সত্যিই ঘটেছিল। ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নাসা এবং জাপানি মহাকাশ সংস্থার মহাকাশচারীদের একটি দল ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। তবে, মহাকাশে প্রথম খেলাধুলা কিন্তু এটা ছিল না। ১৯৭১ সালে অ্যাপোলো ১৪ এর নভোচারী অ্যালান শেপার্ড সর্বপ্রথম চাঁদের পৃষ্ঠে গল্ফ খেলেছিলেন।

মহাকাশে প্রথম ম্যারাথন

প্রায় ৪২ কিমি. বিরতিহীনভাবে দৌড়ানোকে বলা হয় ম্যারাথন দৌড়। ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকাকালীন বোস্টন ম্যারাথনে অংশ নেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত বৃটিশ নভোচারী সুনিতা উইলিয়াম। নিজেকে ট্রেডমিলের সঙ্গে বেঁধে দৌড়ানো শুরু করেন। পুরো ম্যারাথন শেষ করতে সময় নিয়েছিলেন ৪ ঘন্টা ২৪ মিনিট। এই সময়ের মাঝে পুরো মহাকাশ স্টেশন পৃথিবীকে প্রায় দুইবার চক্কর দিয়েছিল।

মহাকাশে প্রথম ম্যারাথন
মহাকাশ নিয়ে প্রথম চলচ্চিত্র

মহাকাশ নিয়ে প্রথম চলচ্চিত্র

১৯০২ সালে ফরাসি অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র পরিচালক জর্জেস মেলিস নির্মাণ করেন 'লে ভয়েজ ড্যানস লা লুনে'। মহাকাশ নিয়ে সেটাই ছিল প্রথম চলচ্চিত্র। অনেকে ছবিটাকে প্রথম সফল সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্রও বলেন। ছবিতে একদল নভোচারীর চাঁদের দুঃসাহসিক যাত্রা ও তাঁদের নানা কর্মকাণ্ড দেখানো হয়েছে। ১৫ মিনিট সময় থাকলে চট করে দেখে নিতে পারেন মজার এই ছবিটি।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটেনিকা