ভরপুর বিনোদনের ছবি ‘প্যাসেঞ্জারস’ তবে…

হলিউডি সাই-ফাই প্যাসেঞ্জারস দেখা হলো সম্প্রতি। ক্রিস প্যাট ও জেনিফার লরেন্সের মতো তারকা ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবির মূল আকর্ষণ। তবে পরিচালক মরটেন টিল্ডমও ছোট নাম নন। তাঁর পরিচালিত দ্য ইমিটেশন গেম বেশ আলোচিত হয়েছিল।

প্যাসেঞ্জারস ছবির গল্প আবর্তিত হয় একটি বাণিজ্যিক নভোযান অ্যাভালনকে ঘিরে। পৃথিবী ছেড়ে একদল মানুষ চলেছে মহাকাশে উপনিবেশ স্থাপন করতে। কারণ, পৃথিবী ‘ওভারপপুলেটেড, ওভারপ্রাইসড, ওভাররেটেড’। তাই ২৫৮ নভোচারী ও ৫০০০ যাত্রী নিয়ে ঔপনিবেশিক গ্রহ হোমস্টেড–টুর দিকে আলোর গতিতে ছুটে চলেছে বিশাল মহাকাশযান ‘অ্যাভালন’। নতুন গ্রহে পৌঁছাতে এটির লাগবে ১২০ বছর।

এদিকে যাত্রা শুরুর ৩০ বছরের মধ্যেই এক বড় গ্রহাণুর সঙ্গে ধাক্কা খায় অ্যাভালন। এরপরই ছবির নায়ক ক্রিস প্যাট তথা জিম প্রেস্টনের নিদ্রাভঙ্গ হয়। হাইবারনেশন পড থেকে বেরিয়ে আসে ক্রিস। ধারণ করা কণ্ঠ তাকে বলে, ১২০ বছর পেরোতে আর মাত্র চার মাস বাকি। এবার তাকে নতুন গ্রহের আয়েশি জীবন মানিয়ে চলা শিখতে হবে।

প্যাসেঞ্জার সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিম প্রেস্টন ও জেনিফার লরেন্স

কিন্তু অচিরেই জিম প্রেস্টন বুঝে যায়, কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। আসলে হোমস্টেড গ্রহে পৌঁছাতে আরও অনেক দেরি—প্রায় ৯০ বছর। অর্থাৎ যখন সেটা হবে, জিম তত দিনে মরে ভূত। প্রথমে উদ্যমী ও বিদ্রোহী জিম এ অবস্থা মেনে নিতে চায় না, কিন্তু একসময় বাধ্য হয়। হতাশ হয়ে পড়ে। তার একমাত্র কথা বলার সঙ্গী মানুষরূপী রোবট আর্থার (মাইকেল শিন)। কিন্তু নিজের একাকিত্ব ঘোচাতে জিমের চাই একজন রক্ত–মাংসের মানুষ।

দিন যায়, মাস যায়, প্রায় বছর পেরিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত জিমের চোখ পড়ে নিদ্রিত অরোরার মুখে। তাকে দেখে ভালো লেগে যায় জিমের। একাকিত্ব ঘোচাতে জিম জাগিয়ে তোলে অরোরাকে।

সাংবাদিক অরোরা লেন তথা জেনিফার লরেন্স ওই মহাযানে চড়েছিল নিজের মহাকাশ অভিজ্ঞতা পৃথিবীকে জানানোর জন্য একটি বই লিখতে। তাই ১২০ বছর পাড়ি দিয়ে সে যাচ্ছে হোমস্টেড–টু গ্রহে, কিছুদিন থেকে আরও ১২০ বছরের পথ পাড়ি দিয়ে সে ফিরে আসতে চায় পৃথিবীতে। কিন্তু জিমের যে অরোরাকে ভালো লেগে গেছে, তাই এখনই তাকে জাগতে হলো।

এরপর ছবির গল্প সংক্ষেপে এই—জিম ও অরোরা পরস্পরকে ভালোবেসে ফেলল। কিন্তু একসময় অরোরা জেনে গেল, জিম তাকে অসময়ে ডেকে তুলে তার জীবন শেষ করে দিয়েছে। দূরত্ব তৈরি হয় দুজনের মধ্যে। এদিকে মহাকাশযানের ক্যাপ্টেনও কোনো কারণে হাইবারনেশন পড থেকে বেরিয়ে আসে। এ সময় বোঝা যায়, মহাযানটিতে কোনো বড় সমস্যা হয়েছে। সমস্যাটা যে কী, সেটা ঠিকঠাক ধরতে পারার আগেই ক্যাপ্টেনের মৃত্যু হয়। বাকি যাত্রীদের জীবনের ভবিষ্যৎ ক্যাপ্টেন দিয়ে যায় জিম-অরোরার কাঁধে। জিম-অরোরা যে সেটি করতে সক্ষম হবে, সেটা আর বিশদ বলার প্রয়োজন নেই। এই মিশনে জিম-অরোরা পরস্পরের কাছে আসে। বাকি জীবন তারা সুখে-শান্তিতে বিলাসবহুল বাণিজ্যিক মহাকাশযানে কাটিয়ে দেয়।

প্যাসেঞ্জারস ছবির গল্পের গাঁথুনি বেশ দুর্বল লেগেছে। গল্পের পটভূমি যতটা সম্ভাবনার আলো জাগিয়েছিল, কাহিনি এগোতে এগোতে তা ক্রমে মলিন হয়েছে। জীবন, বিজ্ঞান, নৈতিকতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন ছবিটি তুলতে পারত, সেটি আর হয়নি। সাই-ফাই ছবিটি ক্রমে পরিণত হয়েছে গতানুগতিক হলিউডি রোমান্টিক ছবিতে।

রটেন টম্যাটোজ সাইট ব্যবহারকারী বোদ্ধা সমালোচকদের মন এই ছবি জয় করতে পারেনি। ১০০-তে এই ছবির নম্বর সেখানে মাত্র ৩০। তবে আইএমডিবি ব্যবহারকারী আমজনতা এই ছবি দেখে বেশ খুশি। ১০-এ ৭ রেটিং দিয়েছেন তাঁরা। বক্স অফিসেও এ ছবি ভালো কামিয়েছিল।

সব শেষের কথা হলো, ভরপুর বিনোদন পেতে ক্রিস প্যাট ও জেনিফার লরেন্সের মতো তারকাসমৃদ্ধ এই ছবি অবশ্যই দেখে ফেলা যায়। তবে দ্য ইমিটেশন গেমখ্যাত পরিচালক মরটেন টিল্ডম থেকে দর্শক আরও ভালো কিছু প্রত্যাশা করেন।

লেখক: সাংবাদিক

সূত্র: আইএমডিবি, রোটেন টম্যাটোজ