সৌরজগতের সবচেয়ে ভারী ও বড় বস্তু সূর্যছবি: সংগৃহীত

সৌরজগতের সবচেয়ে ভারী ও বড় বস্তু সূর্য, এটুকু আমরা জানি। গোটা সৌরজগতের মোট ভরের ৯৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ ভরই সূর্যের দখলে। কিন্তু সেই ভর আসলে কতটা? কতটুকু ভারী সূর্য?

সহজ কথায়, সূর্যের ভর ২ × ১০৩০ কেজি। পৃথিবীর ভরের চেয়ে ৩ লাখ ৩৩ হাজার গুণ বেশি। কিন্তু আরও ভালোভাবে বিষয়টা বুঝতে হলে ভর আর ওজনের সম্পর্কটা বুঝতে হবে। কোনো বস্তুর মধ্যে মোট যতটুকু উপাদান আছে, তা-ই ওই বস্তুর ভর। কিন্তু ওজন বলতে বস্তুর মধ্যে থাকা মোট উপাদানকে বোঝায় না। বস্তুটির ওপর যে পরিমাণ মাধ্যাকর্ষণ বল কাজে করে, তাকে বোঝায়। সেটাই ওই বস্তুর ওজন।

যাঁরা আরেকটু ভালো করে বুঝতে চান, তাঁদের জন্য বলি। এই সমীকরণটা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক পর্যায়েই পড়ানো হয়, F = mg। এখানে m আপনার ভর, g আপনি যেখানে আছেন, সেখানকার মহাকর্ষীয় ত্বরণ। গুণ করলেই পাওয়া যাবে ওজন। সমীকরণে না যেতে চাইলে আপনার জন্য কয়েকটি উদাহরণ দিই।

আরও পড়ুন

সূর্য পরিচয়

ধরুন, এক কেজি মুড়ি। কেজি ভরের একক। তার মানে, এই মুড়ির ভর পৃথিবীতে যা হবে, মহাবিশ্বের অন্য যেকোনো জায়গায় তা-ই হবে। কিন্তু ওজন একই থাকবে না, বদলে যাবে। অর্থাৎ মহাবিশ্বের সব জায়গায় আপনার ভর একই থাকলেও ওজন একেক জায়গায় হবে একেক রকম। যেমন পৃথিবীতে আপনার ভর ৮০ কেজি হলে, চাঁদেও ভর হবে ৮০ কেজি। কারণ ভর অপরিবর্তনীয়। তবে ৮০ কেজি ভরের জন্য পৃথিবীতে আপনার ওজন হবে ৭৮৪ নিউটন (আপনার ভর গুণন পৃথিবীর মহাকর্ষীয় ত্বরণ—সেকেন্ডে ৯.৮ মিটার)। কিন্তু চাঁদে আপনার ওজন হবে প্রায় ১৩০ নিউটন (আপনার ভর ৮০ কেজি গুণ চাঁদের মহাকর্ষীয় ত্বরণ, সেকেন্ডে ১.৬২৫ মিটার; ৮০ × ১.৬২৫ = ১৩০)। এবার ধরুন, পৃথিবীতে আপনার ওজন মাত্র ৩৫ কেজি। সূর্যে সেটা হবে প্রায় এক টন! মানে প্রায় এক হাজার কেজি (একদম নিখুঁত হিসাব চাইলে বলেই দিই, সংখ্যাটা হবে ৯৮০ কেজি)।

আরও পড়ুন

সূর্য কত দূরে

সূর্যের ভর ধীরে ধীরে কমছে
ছবি: সংগৃহীত

তবে সূর্যের ভর ধীরে ধীরে কমছে। কারণ সূর্যের কেন্দ্রে চলছে ফিউশন বিক্রিয়া। এ বিক্রিয়ার ফলে হাইড্রোজেন-হাইড্রোজেন যুক্ত হয়ে হিলিয়ামে পরিণত হয়। এ বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেনের মিলিত ভর উৎপাদিত হিলিয়ামের চেয়ে কিছুটা বেশি। অর্থাৎ এ বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন হিলিয়ামে রূপান্তরিত হলে সূর্য কিছুটা ভর হারায়। সেই ভরই শক্তি বা আলো হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।

সৌরজগতে সূর্য ছাড়াও রয়েছে নানা গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু বেষ্টনীসহ আরও অনেক কিছু। আগেই বলেছি, আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে ভারী বস্তু সূর্য। এরপরেই আছে গ্রহরাজ বৃহস্পতি। সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও ভারী বস্তু। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মতে, বৃহস্পতির ভর ১.৯ × ১০২৭ কেজি। অর্থাৎ, বৃহস্পতির চেয়ে সূর্য ১ হাজার গুণ ভারী। 

আরও পড়ুন

সূর্য কত বড়

আবার নীল তিমির চেয়ে সৌররাজ ১.২ × ১০১৯ গুণ ভারী। নীল তিমির গড় ভর ১ লাখ ৭০ হাজার কেজি। মানে, আপনি যদি প্রায় ‘১২ সেপ্টিলিয়ন’ নীল তিমি একত্র করতে পারেন, তাহলে সূর্যের ভরের সমান হবে।
আরও পড়ুন

সূর্য কতটা গরম

তবে সৌরজগতের বাইরে সূর্যের চেয়ে বড় নক্ষত্র যেমন আছে, তেমনি আছে অনেক ছোট নক্ষত্রও। সূর্যের চেয়ে ১০০ গুণ ভারী নক্ষত্রের খোঁজও পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে যেসব নক্ষত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে, তাদের বেশিরভাগই ছোট। আপনি যদি র‍্যান্ডমলি বা দৈবচয়নের মাধ্যমে ২০টি নক্ষত্র নির্বাচন করেন, তবে ১৯টিই হবে সূর্যের চেয়ে ছোট। মাত্র একটি হবে সূর্যের তুলনায় ভারী।

সৌরজগৎ থেকে এবারে পৃথিবীতে ফেরা যাক। চলুন, আমাদের অতিপরিচিত কিছু বস্তুর সঙ্গে সূর্যের ভরের তুলনা করে দেখি। যদিও এ তুলনা করার আসলে কোনো মানে নেই। কারণ সূর্য ছাড়া সৌরজগতের বাকি সব বস্তুর ভর মাত্র ০ দশমিক ১ শতাংশ। তবু আমরা তুলনাটা করব বোঝার জন্য। তা ছাড়া, বিষয়টা বেশ মজাদারও বটে!

মানুষের গড় ভর ৬২ কেজি ধরে যদি বলি, তাহলে মানুষের তুলনায় সূর্য ৬ × ১০২৪ গুণ ভারী। আপনি চাইলে মিসরের গিজার গ্রেট পিরামিডের সঙ্গেও তুলনা করতে পারেন। পিরামিডটির চেয়ে সূর্য ১.৫ × ১০২৩ গুণ ভারী। ফ্রান্সের প্যারিসের আইফেল টাওয়ার সঙ্গে যদি তুলনা করি? দেখব, সূর্য ৩ × ১০২১ গুণ ভারী এই বিখ্যাত স্থাপনার চেয়ে। আবার নীল তিমির চেয়ে সৌররাজ ১.২ × ১০১৯ গুণ ভারী। নীল তিমির গড় ভর ১ লাখ ৭০ হাজার কেজি। মানে, আপনি যদি প্রায় ‘১২ সেপ্টিলিয়ন’ নীল তিমি একত্র করতে পারেন, তাহলে সূর্যের ভরের সমান হবে। সংখ্যাটা যে নিতান্ত ছোট নয়, তা তো বুঝতেই পারছেন। আসলে এক সেপ্টিলিয়ন মানে ১-এর পরে ২৪টি শূন্য! এতগুলো নীল তিমি যে একত্র করা সম্ভব নয়, তা বলা বাহুল্য। আপনি হয়তো ভাবছেন, কেন? কারণটা হলো, পৃথিবীতে, সম্ভবত গোটা মহাবিশ্বেই এখন মাত্র ২৫ হাজার নীল তিমি বেঁচে আছে।

লেখক: সদস্য, সম্পাদনা দল, বিজ্ঞানচিন্তা

সূত্র: স্পেস ডট কম, অ্যাস্ট্রোজাঙ্কিস ডট কম, এ টু জেড অ্যানিমেলস ডট কম

এই সিরিজের অন্যান্য লেখা পড়ুন