জেমস ওয়েবের চোখে দূর নক্ষত্রের গ্রহাণু বেষ্টনী

নাসা

সম্প্রতি সৌরজগতের বাইরের এক নক্ষত্রব্যবস্থায় গ্রহাণু বেষ্টনি শনাক্ত করেছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ (জেডব্লিউএসটি)। এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী। এতে দেখা গেছে, গ্রহাণু বলয়টিকে যেমন ভাবা হয়েছিল, এটি তার চেয়েও অনেক জটিল। এসব তথ্য জানা গেছে সদ্য প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে। গত ৮ মে, সোমবার নেচার অ্যাস্ট্রনমি জার্নাল-এ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।

নক্ষত্রটির নাম ফোমালহাউট। নক্ষত্রের হিসেবে একদম নবীন বলা চলে। পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫ আলোকবর্ষ দূরে এর অবস্থান। পিসিস অস্ট্রিনাস নক্ষত্রমণ্ডলের এ নক্ষত্রব্যবস্থাটি পৃথিবী থেকে খালি চোখেই দেখা যায়।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জেমস ওয়েব নভোদুরবিন ব্যবহার করে এর ধুলোময় বলয়ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন। ফোমালহাউটের বলয়ব্যবস্থা মূলত তিনটি আলাদা গ্রহাণু বেষ্টনীর একটি সম্মিলিত রূপ। প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ কিলোমিটার জুড়ে এ বলয়ব্যবস্থাটি বিস্তৃত। দুরত্বটা একেবারে কম নয়। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের প্রায় ১৫০ গুণ। সৌরজগতের কুইপার বেল্টের চেয়ে অনেক বেশি জটিল এ ভিননাক্ষত্রিক গ্রহাণু বেষ্টনী।

জ্যোর্তিবিজ্ঞানীরা ১৯৮৩ সালে প্রথম ফোমালহাউটের চারপাশে ধুলোময় কাঠামো আবিষ্কার করেন। এজন্য তাঁরা সাহায্য নেন নাসার ইনফ্রারেড অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল স্যাটেলাইটের। তবে এ ধুলোময় কাঠামোটির মাঝে যে আলাদা দুটি গ্রহাণু বেষ্টনী আছে, তা জেমস ওয়েবের চোখেই প্রথমবারের মতো দেখা গেল।

বিজ্ঞানীদের মতে, নক্ষত্রটির চারপাশের এ ধুলিময় বেষ্টনীগুলো গ্রহাণু ও উল্কার মধ্যে সংঘর্ষের কারণে তৈরি হতে পারে। এজন্য একে বিজ্ঞানীরা ‘ডিব্রি ডিস্ক’ বা ‘আবর্জনার চাকতি’ বলছেন। এ ধরনের চাকতি প্রোটোপ্ল্যানেটারি চাকতির চেয়ে আলাদা। প্রোটোপ্ল্যানেটারি চাকতি হলো, নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরতে থাকা ধূলিকণার মেঘ। এ মেঘের উপাদানগুলো একত্রিত হয়ে পরবর্তীতে গ্রহ তৈরি করে। নামটিও সে হিসেবেও দেওয়া। প্রোটো মানে আদি, আর প্র্যানেটারি মানে গ্রহীয়। অর্থাৎ এরা আসলে গ্রহের বীজ। অন্যদিকে আবর্জনার চাকতি তৈরি হয় গ্রহ গঠিত হওয়ার পর।

বিজ্ঞানীরা তাই ধারণা করছেন, নক্ষত্র সিস্টেমটিতে ধূলিমেঘের আড়ালে হয়তো লুকিয়ে আছে এক বা একাধিক গ্রহ। এ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অবশ্য আরও বিস্তর পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্রে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও এ গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক আন্দ্রেস গ্যাসপার বলেন, জেমস ওয়েব নভোদুরবিনের মাধ্যমে আমরা প্রথমবারের মতো নক্ষত্রব্যাবস্থাটির অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে ধূলিকণা থেকে তাপীয় আভা শনাক্ত করতে পেরেছি আমরা। ফলে, বলয়টি নিয়ে আমাদের মনে যেসব প্রশ্ন ছিল, এ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তার কিছু সমাধান বেরিয়ে এসেছে।

ভবিষ্যতে এ দুরবিন ব্যবহার করে অন্যান্য নক্ষত্রের চারপাশে ফোমালহাউটের মতো ধ্বংসাবশেষ আছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করবেন বিজ্ঞানীরা। এভাবে একটি নক্ষত্রব্যবস্থার উপাদানগুলো (গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু) কীভাবে পরিণত হয়, সে সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানা যাবে। এমনটাই আশা বিজ্ঞানীদের।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ ঢাকা

সূত্র: স্পেস ডট কম