মহাশূন্য কি আসলেই শূন্য?

 একটা সময় মানুষ বায়ুমণ্ডলকেই শূন্যস্থান মনে করতো। পরে জানা গেল বাতাসেরও ওজন আছে। অর্থাৎ, বায়ুমণ্ডল শূন্য নয়। একই কথা কি মহাশূন্যের বেলাতেও খাটে?

গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু, নক্ষত্র, ধুলিকণা দিয়ে ভর্তি মহাকাশ। অথচ রাতের মিটিমিটি আলোজ্বলা আকাশের দিকে তাকালে অসীম শূন্যতার কথাই মনে পড়ে। বাংলায় এই শূন্যতাকেই বলে মহাশূন্য। প্রায়োগিক অর্থে মহাশূন্য বলতে মহাকাশের বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে যে ফাঁকা জায়গা আছে, সেটাকে বোঝানো হয়। কিন্তু সেই ফাঁকা স্থানও কি আসলে শূন্য?

শূন্য বা ভ্যাকুয়াম বলতে বোঝায় পদার্থ বা বস্তুর অনুপস্থিতি। অর্থাৎ, সেখানে কোনো বস্তুরই অস্তিত্ব নেই। আসলে আমাদের সৌরজগতের গ্রহ নক্ষত্রের মাঝের যে ফাঁকা জায়গা বা শূন্যস্থান আছে, সেগুলো মোটেও শূন্য নয়। সৌরজগতের প্রতি এক ঘন সেন্টিমিটায় জায়গায় আছে গড়ে পাঁচটি পরমাণু। আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থান অর্থাৎ দুই নক্ষত্রের মাঝে যে ফাঁকা জায়গা সেখানে প্রায় একটি করে পরমাণু আছে প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে। আন্তঃগ্যালাক্টিক স্থান বা দুই গ্যালাক্সির মাঝের স্থানে পরমাণু সংখ্যা আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থানের চেয়ে ১০০ গুণ কম হতে পারে। অর্থাৎ, প্রতি ১০০ ঘন সেন্টিমিটারে আছে প্রায় একটি করে পরমাণু। কিন্তু একেবারে শূন্য নয়।

প্রশ্ন আসতে পারে, দুই পরমাণুর মাঝে জায়গা কি তাহলে শূন্য? আসলে সেটাও শূন্য নয়। বিজ্ঞানীদের মতে, নিখুঁত ভ্যাকুয়াম বাঁ শূন্যস্থান বলে কোনকিছুর অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানচেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতিঃপদার্থবিদ অ্যালেস্টার গুন বলেন, কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুযায়ী, আমাদের জানা এবং অজানা জগতের মাঝে এনার্জি ফ্ল্যাকচুয়েশন বা ভার্চ্যুয়াল কণার লাফালাফি চলছে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে। আমরা যাকে বস্তুকণা শূন্য বলছি, সেখানেও ঘটছে এই ঘটনা।

পদার্থবিজ্ঞানের চোখে তাই সত্যিকারের শূন্যস্থান বলে কিছু নেই। বরং শূন্যতার মাঝে আছে অসীমের হাতছানি।

লেখক: শিক্ষার্থী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা

সূত্র: সায়েন্স ফোকাস